Saturday, June 21, 2025
HomeScrollFourth Pillar | নরেন্দর মোদি, সারেন্ডার মোদি
Fourth Pillar

Fourth Pillar | নরেন্দর মোদি, সারেন্ডার মোদি

'নরেন্দ্র কা সারেন্ডার' বিতর্কটা শুধু রাজনৈতিক বাক্যবিনিময় নয়, বরং দেশের সম্মান

Follow Us :

‘নরেন্দ্র কা সারেন্ডার’ শব্দবন্ধ এখন ট্রেন্ডিং, আর তাকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় গর্ব এবং সরকারের দায়ববদ্ধতা, সবকিছু নিয়েই এক বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি আর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার এক ঘোলাটে বিষয়কে ঘিরে। কারা আগে যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল? কারা সেই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিল? এবং সেখান থেকেই উঠে আসছে এই মারাত্মক শব্দবন্ধ, সারেন্ডার, আত্মসমর্পণ। বিজেপি সরকারের ভূমিকাকে ঘিরে অনেক ধোঁয়াশা, অনেক আবছা গোলমেলে বক্তব্য উঠে আসছে। এই ‘সারেন্ডার’ শব্দটা এল কোত্থেকে? কীভাবে তৈরি হল? সরকারের বিরুদ্ধে কোন কোন অভিযোগ তোলা হয়েছে? সেসব নিয়ে বিজেপির পাল্টা বক্তব্য কী? আর আলোচনা তো হবেই এইসব নিয়ে, আমরা জিজ্ঞেস করব না? আলোচনা করব না? যে এসবের প্রভাব ভারতীয় গণতন্ত্র আর সরকারের পররাষ্ট্রনীতির উপর কী হতে পারে?

এই বিতর্কের সূত্রপাত অবশ্য রাহুল গান্ধীর এক মন্তব্য থেকে, যেখানে তিনি সাফ বলছেন ট্রাম্প চেয়েছেন মোদি সারেন্ডার করুক, মোদিজি সারেন্ডার করেছেন। আর তারপর দেশজুড়ে ব্যাপক জল্পনা কল্পনার জন্ম হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পোস্টার, এমন সব মিম ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মোদিকে ফোন করছেন, আর মোদি বলছেন ‘জি হুজুর’। মূল অভিযোগটা কিন্তু সেই ১০ মে ঘোষণা হওয়া ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিকেই কেন্দ্র করে। সরকার তো জানিয়েইছিল, ওই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে প্রায় চেপে ধরেছিল, এবং পাকিস্তান কার্যত হাঁটু গেড়ে বসেছিল। এবং তার মধ্যেই নাকি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে, আর তার আগে নাকি ট্রাম্প মোদিকে ফোন করেন। তার প্রমাণ কোথায়? ‘প্রমাণ’ হিসেবে বিরোধীরা ট্রাম্পের একাধিক প্রকাশ্য বক্তব্যকে তুলে ধরেছে, আর সেসব ভিডিও বা লেখা আমরা দেখেছি, যেখানে তিনি অন্তত ১১-১২ বার বলেছেন, তিনি মোদিকে ফোন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, যদি যুদ্ধ না থামে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে। অথচ ভারতের সরকারি বিবৃতি বলছে, এই যুদ্ধবিরতি ছিল দুই দেশের সামরিক অপারেশন প্রধানদের (DGMO) আলোচনার ফল। সত্যিটা কী? ট্রাম্প সাহেব মিথ্যে বলছেন? বলতেই পারেন, কার চিরসখা সেটাও তো দেখতে হবে, কিন্তু সমস্যা হল প্রধানমন্ত্রী মোদি বা সরকার এই বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির কোনও প্রকাশ্য প্রতিবাদ করেননি, যা নিয়ে সমালোচনা আরও বেড়েছে, আর সেটা স্বাভাবিক। প্রশ্ন উঠেছে, যদি ট্রাম্প মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ্যে কেন কিছু বলেনি? অন্য দেশের নেতারা তো ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া জানাতেন। এবং এই ‘নরেন্দ্র কা সারেন্ডার তত্ত্ব’ শুধু যুদ্ধবিরতির ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিরোধীরা এটাকে সরকারের পুরো পররাষ্ট্রনীতি এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসে থাকা নেতৃত্বের চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন নরেন্দর মোদি, সারেন্ডার মোদি। পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত অভিযোগটা ঠিক কী? সেটা হল যুদ্ধবিরতির শর্ত ও সন্ত্রাসবাদের প্রশ্ন: বিরোধীরা জানতে চায়, যুদ্ধবিরতির শর্ত কী ছিল? হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহার, দাউদ ইব্রাহিমের মতো সন্ত্রাসীদের কী হবে? পহেলগাম হামলার পরও কেন পাকিস্তানের ‘চেপে ধরা গলা’ ছেড়ে দেওয়া হল? বিরোধীরা বলছেন এটা এক চূড়ান্ত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ব্যর্থতা, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত যখন পাকিস্তানকে এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, এক টেরর স্টেট হিসেবে ঘোষণা করতে চায়, তখন একটা দেশও ভারতের পক্ষে দাঁড়ায়নি। অন্যদিকে তুরস্ক, চীন, আজারবাইজান পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। কুয়েত পর্যন্ত পাকিস্তানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং যুদ্ধবিরতির পর তাদের সঙ্গে শ্রমিক চুক্তি স্বাক্ষর করে— যেখানে কুয়েতের ২১ শতাংশ মানুষ এবং ৩০ শতাংশ শ্রমিক ভারতীয়।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিশ্ববাজারে বিশ্বগুরু মোদিজি গর্তে পড়ে একলা

এই যুদ্ধ অনেক ইনফরমেশনকে সামনে এনে দিল, দেখিয়ে দিল কীভাবে চীনের প্রভাব বাড়ছে: বাংলাদেশে ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে একটি পুরনো এয়ারবেসকে চীন আপগ্রেড করছে— এটা সাম্প্রতিক ঘটনা। নেপালে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং ভারত-বিরোধী মনোভাবও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সহায়তা পেয়েই চলেছে। ভারতের চাপ সত্ত্বেও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য পাচ্ছে, পাকিস্তান আইএমএফ থেকে, বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে লোন পেয়েছে, বিনিয়োগ পেয়েছে আবার প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ADB-র এক কর্মকর্তার বৈঠকের মাত্র ২ দিন পর ADB পাকিস্তানকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। পাকিস্তানের কথা উঠলেই মোদিজির ৫৬ ইঞ্চ কা সিনা, অন্যদিকে চীন নিয়ে তাঁর হীরণ্ময় নীরবতা। মোদি সরকার চীনকে নাম করে সমালোচনা করতে চায় না, করে না বা করতে পারে না— এই অভিযোগও উঠছে। মুখ ফসকে যা খুশি বলার জন্য বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী একবার চীনা চোখকে গণেশের চোখের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ ও হিন্দু ধর্ম— দুজনের জন্যই অপমানজনক। অন্যদিকে মোদিজি G7 বৈঠকে বাদ পড়েছেন। আগের ৬ বার G7 বৈঠকে যোগ দিলেও এবার কানাডায় হওয়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি— এটিকেও পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা বলে দেখানো হচ্ছে। রাহুল গান্ধী বলছেন, বিরোধীরা বলছে, নেতৃত্বের সাহস জন্মগত— তা জবরদস্তি অর্জন করা যায় না, হঠাৎ একজন ভিতু মানুষের বুক ৫৬ ইঞ্চি চওড়া হতে পারে না।

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকার ‘সেভেনথ ফ্লিট’-এর হুমকি উপেক্ষা করে লড়েছিলেন। মোদিজি ট্রাম্প সাহেবের সামনে সারেন্ডার করেছেন। এবং এই আত্মসমর্পণ বলতে বোঝানো হচ্ছে, মোদি সরকার বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু কৃষক আয়, বেকারত্ব, কালো টাকা কিংবা চীনের মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণই করে। তবে একটা কথা সাফ জেনে রাখুন প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা মানেই ভারতকে সমালোচনা করা নয়। ভারত তো নানা নামে পরিচিত— আর্যাবর্ত, জাম্বুদ্বীপ, হিন্দুস্তান, ভারত, ইন্ডিয়া। যে নামেই পরিচিত হোক তা কখনও বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদির সমার্থক নয়। নরেন্দ্র মোদি ভারত নন। কেবল মোদিজি নাকি, ওই ঠাট্টা আর বিদ্রুপের শিকার আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও, তাঁকে বিদ্রুপ করে “পরাজয় শঙ্কর” বলা হচ্ছে— যার মানে দাঁড়ায় “ব্যর্থ শঙ্কর”। এই বিতর্কের মূল অংশ হল সংসদের ভূমিকা ও সরকারের দায়বদ্ধতা। আর তাই বিরোধীরা বারবার বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছে, জানাচ্ছে। দাবিটা প্রথম তোলেন মমতা ব্যানার্জি, এখন সম্মিলিত বিরোধী দল থেকে সেই অধিবেশন ডাকা হয়েছে— যাতে পহেলগাম হামলা, অপারেশন সিন্দুর, যুদ্ধবিরতির শর্ত, নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। ১৬টা বিরোধী দল ২ জুন একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই অধিবেশনের দাবি জানায়। তাদের অভিযোগ, সরকার বিদেশি মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক সংগঠনকে তথ্য দিলেও সংসদে কিছুই জানায়নি। সেনাপ্রধান বিদেশে গিয়ে বিদেশি মিডিয়া ব্লুমবার্গকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, সংসদে আলোচনা হচ্ছে না। এখনও আমরা জানি না দেশের ক্ষয়ক্ষতির আসল পরিমাণটা ঠিক কী? তো বিশেষ অধিবেশন না ডেকে চালাকি করে বর্ষাকালীন মানে মনসুন অধিবেশন এবার ৪৭ দিন আগে ঘোষণা করা হয়েছে— যেখানে সাধারণত ১০-২০ দিন আগেই ঘোষণা হয়। বিরোধীরা বলছে, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে যাতে বিশেষ অধিবেশনের দাবি চাপা পড়ে যায়। তারা একে বলছে ‘পার্লামেন্টোফোবিয়া’ অর্থাৎ সংসদের ভয়। সংসদে বিরোধীদের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন মোদিজি। তাদের যুক্তি, যদি সরকার সংসদে উত্তর না দেয়, তাহলে বিরোধীরা নিজেদের মতো বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা দিতেই বাধ্য হয়, এবং স্বাভাবিকভাবেই সেগুলোতে নার্ভ ফেল করছে মোদি সরকার। ‘নরেন্দ্র কা সারেন্ডার’ বিতর্কটা শুধু রাজনৈতিক বাক্যবিনিময় নয়, বরং দেশের সম্মান, পররাষ্ট্রনীতি, এবং গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে আর তা দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার করাটা সরকারের কাজ।

সবচেয়ে বড় কথা, এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী এখনও ট্রাম্পের দাবির বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি— আর এই নীরবতাই ‘সারেন্ডার’ তত্ত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। যদি ট্রাম্প সাহেব, আমেরিকার সরকার মিথ্যে বলে থাকেন তাহলে তা দেশের মানুষের সামনে বলার অসুবিধেটা কোথায়? হ্যাঁ, এইখানে আরও কিছু ধোঁয়াশার জন্ম হচ্ছে, অনেকে এর সঙ্গে আদানির মামলা ইত্যাদিকে জুড়ে দেখছেন, ফলে এক সন্দেহ ঘিরে ধরছে সরকারকে এবং ভারতের গণতন্ত্রে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি তো তা শেষ হবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এটা তো দেশের ভিতরের কোনও প্রকল্প কোনও বিল ইত্যাদি নিয়ে কথা নয়, এখানে কারও একজনের মুখ পুড়বেই, হয় ট্রাম্প, না হলে মোদি। তাই সবচেয়ে কড়া শব্দটাই বিরোধীরা ব্যবহার করেছেন, নরেন্দ্র মোদি, সারেন্ডার মোদি, এই বাক্যবাণে জর্জরিত মোদিজি যদি বলে দেন ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি তাহলে তার প্রভাব সুদূর প্রসারিত, সেটা নরেন্দ্র মোদি জানেন না এমন নয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ আবহে জেনেভায় বৈঠক করবেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী
01:28:30
Video thumbnail
SSC Update | বিগ ব্রেকিং, SSC-র ভাতাতে স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের, এবার কী হবে?
01:45:45
Video thumbnail
Ahmedabad Incident | আহমেদাবাদ দু/র্ঘটনার পর বোয়িংয়ে আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ব? বহু চুক্তি বাতিল
01:51:11
Video thumbnail
Stadium Bulletin | জোড়া শতরান! হেডিংলেতে দাপট ভারতের
22:37
Video thumbnail
Iran-America | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের মাঝেই আমেরিকাকে চ‍্যালেঞ্জ ইরানের, কোন ড্রোনে ভয় দেখাল ইরান?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের মাঝেই আমেরিকাকে চ‍্যালেঞ্জ ইরানের, কোন ড্রোনে ভয় দেখাল ইরান?
04:01
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের যে ক্ষে/পনা/স্ত্রে কুপোকাত ইজরায়েল, জেনে নিন তার গোপন কথা,দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
03:14:41
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের অনবরত অ‍্যা/টাক, ছা/ই হওয়ার মুখে ইজরায়েল, দেখুন ঠিক কী অবস্থা
01:40:21
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধে ২ সপ্তাহের মধ‍্যে এন্ট্রি নেবে আমেরিকা
02:35:25
Video thumbnail
Apple-Google Password | অ্যাপল-গুগল-ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড ফাঁস
01:06:20