নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পরে আবার হাজির চতুর্থ স্তম্ভ নিয়ে। আমরা গত দেড় মাস ধরে বার বার বলেছিলাম হাওয়া ঘুরছে, বলেছিলাম বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। বলেছিলাম বাংলায় বিজেপি আগের থেকে অনেক বাজে ফল করবে, ইন ফ্যাক্ট বালুরঘাট, বিষ্ণুপুর আর কাঁথি কান ঘেঁষে জিতেছে বিজেপি, সেগুলো হারালে এবং যদি কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস জোট হত, তাহলে বিজেপি ছয়-সাতে নেমে যেত। আমরা গত দেড়মাস ধরে কী কী বলেছিলাম দেখুন। তো শেষ হয়েছে নির্বাচন আর ফলাফল আসার পর থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত মৌনিবাবা হয়ে বসে আছেন, কথা বেশি বলার ফল তো হাতেনাতে পেয়েছেন। সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন অবকি বার ৪০০ পার, মানুষ জবাব দিয়েছে। এমনিতে যে বাচাল হয়, সে বাচালই হয়, প্রতিটা বিষয়ে অবান্তর কথা বলে, মদন মিত্র, দিগ্বিজয় সিং থেকে সম্বিত পাত্র, অমিত মালব্যদের আমরা জানি। আবার কম কথা বলার মানুষজনকে আমরা দেখেছি, মনমোহন সিং থেকে জ্যোতি বসু, ইন্দ্রজিৎ গুপ্তদের নাম এই তালিকায় রাখাই যায়। কিন্তু এনারা হলেন সাধারণ মানুষ, যাঁদের একটাই মেজাজ, একটাই চেহারা। কিন্তু সমাজে ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিঃ হাইডদেরও পাওয়া যায়, দিনে এক রাতে এক, মনোবিজ্ঞানে একে বলা হয় স্প্লিট পারসোনালিটি, দ্বিখণ্ডিত সত্তা। দেখা হওয়ার পরে বুঝলেন, মানুষটি অত্যন্ত মার্জিত, কম কথা বলেন, ভদ্র মানুষ। জানা গেল, তিনি ঘরে ফিরেই রোজ স্ত্রী সন্তানদের অকথ্য গালিগালাজ করেন, পেটান। ওই স্প্লিট পারসোনালিটি, দ্বিখণ্ডিত সত্তা। এক সত্তা অন্য সত্তার খবরই রাখে না। দিনের বেলায় যিনি মার্জিত ভদ্র ডাক্তার, রাতে তিনিই নৃশংস খুনি। এরকম হয়। আর এরকম যে হয় তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
কখনও মৌনিবাবা, কোনও কথাই বলছেন না, তিনি কোনও এক নির্দিষ্ট বিষয়ে কী ভাবছেন, কী বলছেন জানাই যাবে না কারণ তিনি তখন মৌনিবাবা। অন্তত ওই নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে মৌনিবাবা আর কখনও তিনি বলেই চলেছেন, বলেই চলেছেন, প্রত্যেক বিষয়ে, যা তিনি জানেন, যা তিনি জানেন না, তিনি বলে চলেছেন রাডার সায়েন্স নিয়ে, তিনি বলে চলেছেন অর্থনীতি নিয়ে, তিনি বলে চলেছেন ভাইরোলজি নিয়ে, তিনি বলে চলেছেন প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে। সেসব আজগুবি কথাবার্তা বলে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনও ক্লান্তি নেই। প্রয়োজনীয় বিষয়, দেশের প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত, তিনি বললে দেশের মানুষের কাছে একটা মেসেজ যায়, মানুষ বুঝতে পারে কোন পথে চলতে হবে, অন্তত কোন পথে তিনি চলতে বলছেন। কিন্তু না, তিনি তখন মৌনিবাবা, কোনও প্রশ্ন নয়, কোনও উত্তর নয়, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না। এটা এক সাধারণ মানুষ হলে, নকড়া ছকড়া নেতা হলে পাত্তাও দিতাম না, বড়জোর হাসতাম বা বলতাম কেউ ওনাকে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যাও। কিন্তু নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি তো কোনও আম আদমি নন, হরিদাস পাল বা সুকান্ত জানাও নন, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, কাজেই আমাদের অন্তত বোঝার চেষ্টা তো করা উচিত যে কেসটা একটা ক্লাসিকাল স্প্লিট পারসোনালিটির বিষয় কি না? আর সেটা বুঝতেই আমি কিছু ঘটনা, তথ্য হাজির করব, যা নিয়ে পরবর্তীতে নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ গবেষণা হওয়া উচিত।
ধরুন ওনার জন্মতারিখ কেন দুটো, ওনার এডুকেশন সার্টিফিকেট কেন এমন এক সাবজেক্টে যা আমাদের দেশে কেন সারা পৃথিবীতে কোথাও পড়ানো হয় না? সেই এন্টায়ার পলিটিকাল সায়েন্স নিয়ে, প্রশ্ন থেকেই যাবে। পুকুর থেকে মগরমচ্ছ ধরা নিয়ে, ভাবুন ছবিটা ভাবুন, স্কুল থেকে এক ছেলে ফিরছে, পুকুরে নাকি মগরমচ্ছ মানে মাগুরমাছ নয়, কুমির আছে, তিনি খপ করে ধরে বাড়িতে নিয়ে এলেন? কে জানে, কিন্তু ধরেছিলেন। স্টেশন বিহীন প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি নিয়ে চুপ করে থাকেন, কিন্তু তাঁর সেসব ব্যাপারে চুপ করে থাকাটা এখানে আলোচনার বিষয় নয়। ব্যক্তিগত বিষয়ে কেউ যদি নিজের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে বিব্রত হন, মানে বলতে চাইছি পাড়ায় পাড়ায় এমন অনেক ঘনাদা টেনিদা তো আছেন, যাঁরা বলে ফেলেন মিথ্যে, কিন্তু পরে বুঝতে নিশ্চয়ই পারেন, বড্ড বেশি বলা হয়ে গেছে। সে বিষয়ে তাঁরা যদি কথা না বলতে চান, তাহলে সেটাকেই তো স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া উচিত। আপনি মিথ্যে বলেছেন, সে মিথ্যে ধরা পড়ে গেছে, এবার চেপে যাবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ধরুন নোটবন্দি নিয়ে, রাত আটটায় তালি বাজিয়ে বলে গেলেন কালাধন কে উপর বার করনা হ্যায়, কালা ধন ওয়াপস লানা হ্যায়। আপনার কথায় দেশসুদ্ধ আমজনতা ব্যাঙ্কে এটিএমে লাইন দিল, দেশের অর্থনীতি ভোগে গেল, মোদিজি সময় চাইলেন ৫০ দিন, তারপর? হীরন্ময় নীরবতা। অত্ত বকওয়াস শোনার পরে দেশের মানুষ তো জানতে চাইছিলেন কী হল সেই কালা ধনের, কতটা ওয়াপস এল। ততদিনে উনি ওনার আরেক সত্তায় ফিরে গেছেন, যেখানে উনি কোনও প্রশ্নের জবাবই দেবেন না। উনি তখন মৌনিবাবা। এরপর আবার অন্যান্য বহু বিষয় নিয়ে তাঁর মন কি বাতে শুনেছি বা শুনতে বাধ্য হয়েছি। অসংখ্য বিষয়ে উনি বলেছেন, আবার কিছু বিষয়ে মৌন থেকেছেন। এরপর তিনি দেশের নাগরিক কারা তাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মানে ওনাকে, ওনার দলকে ভোট দিয়ে যাঁরা ক্ষমতায় আনল, তাঁরা সবাই নাগরিক তো? রাতের ঘুম চলে গেল হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রীর, দেশের নাগরিকরা যে নাগরিকই, সেটা খুঁজে বার করতে হবে তো। তাই নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হল, অর্ডিন্যান্স থেকে বিল হল। আসমুদ্রহিমাচল মানুষ রাস্তায় নামলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই প্রথম মানুষ এত জায়গায় পথে নামলেন হাতে সংবিধান নিয়ে, অর্থাৎ মানুষ এবার সংবিধানকেই হাতিয়ার করলেন, কাগজ নহি দিখায়েঙ্গে স্লোগান উঠল।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | নির্বাচন শেষ, এবার কার্তিককে জেলে পোরা হোক
তারপর থেকে এখনও মাঝেমধ্যে অমিত শাহ ক্রোনোলজি বোঝানোর চেষ্টা করছেন বটে কিন্তু না সেই বিলকে কার্যকর করার তখনই কোনও অপচেষ্টা তাঁরা করেননি। কেন করেননি? উনি ব্যাখ্যা দেননি, এ নিয়ে আবার মোদিজি ফিরে গেছেন তাঁর মৌনিবাবার সত্তাতে। কোনও কথা নয়, কোনও প্রশ্নের জবাব নয়, সর্বক্ষণ কথা বলতে থাকা, সব্বাইকে থামিয়ে কথা বলতে থাকা মোদিজি এখন মৌন। ঠিক ভোট এল, বাংলার ভোট, অন্তত তিনটে আসনে সিএএ বুমেরাং, হঠাৎ কিছু মানুষের ছবি, এনারা নাকি নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তো? কিছু মানুষ নাগরিক ছিলেন না, তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, পেয়েছেন, তার সঙ্গে যাঁরা নাগরিক, যাঁরা ভোট দিচ্ছেন, যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্বের সম্পর্কটা কী? এ প্রশ্ন ওনাকে করা যাবে না, উনি এখন গঙ্গায় ডুব দিচ্ছেন। করোনা কাল এল, আবার ছড়ালেন, দিয়া জ্বালাও, থালি বাজাও, কোনও প্রশ্ন না করেই ১০০ শতাংশ আনুগত্য দেখাতে এমনকী একদা অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান অমিতাভ বচ্চনও তালি বাজালেন। এসব নিয়ে প্রশ্ন করে লাভ নেই, কুসংস্কার নিয়ে দেশের প্রধানকে প্রশ্ন করতেও তো লজ্জা হয়। কিন্তু ওই মহামারির সময়েই তিনি তিনটে কৃষি বিল আনলেন এবং প্রায় কোনও আলোচনা না করেই পাশ করিয়ে নিলেন সংসদে। কৃষি বিল আইন হয়ে গেল। এরপর সারা দেশের সম্মিলিত প্রতিবাদ, কৃষকরা রাজপথে, ট্রাক্টর মিছিল, দিল্লি ঘিরে কৃষকদের বসে থাকা, প্রধানমন্ত্রী একটা কথাও বলেছেন? প্রধানমন্ত্রী কৃষক নেতাদের সঙ্গে বসেছেন? না, এই বিষয়ে তিনি আবার মৌনিবাবা বনে গেছেন। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে এক কৃষিপ্রধান দেশের অন্নদাতারা রাস্তায়, তাঁদের গতিরোধ করতে সাঁজোয়া বাহিনী, কাঁটাতার, রাজপথে গজাল ঠোকা হচ্ছে। আন্দোলন চলল, মারা গেলেন সাতশোর বেশি কৃষক, তারপর এক সকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী জানালেন, কৃষি আইন বাতিল করা হচ্ছে। তিনি জানিয়ে দিলেন ব্যস। কেন আনা হল? কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা হল না কেন? কেনই বা এখন বাতিল করা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী কি দেশের মানুষকে জানালেন? না, কারণ সেই বাতিলের ঘোষণার পরে তিনি ঢুকে গেছেন নিজের মৌনিবাবা জগতে। যেখানে তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না, কোনও কথা বলবেন না।
কথা বোলো না, কেউ শব্দ কোরো না, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন গোলযোগ সইতে পারেন না।
একদা ঊষাকালে মজিয়া লীলাছলে, ভগবান বিশ্ব গড়িলেন
কালে কালে জীর্ণ হল, বাগানখানা শুকিয়ে এল
আর জমিদারি দেখতে পারেন না।
কথা বোলো না, কেউ শব্দ কোরো না, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন
গোলযোগ সইতে পারেন না।
এ গান তো আমরা কবেই নরক গুলজার নাটকে শুনেছিলাম, এখন স্বচক্ষে দেখছি মাত্র। তিনি মৌন থাকেন, তখন কারও প্রশ্নের কোনও জবাব দেবার দায় তাঁর নেই। কিছুদিন পরে আবার কথা বলা শুরু করেন, কী বলছেন, কেন বলছেন, কাকে বলছেন, সে সব খেয়াল করতেও তাঁর বয়েই গেছে। সেই নোটবন্দি হয়েছিল, তিহাড়ি সুধীর বা নভিকা কুমারেরা ২০০০ টাকায় চিপ আবিষ্কার করেছিলেন, স্যাটেলাইট লিঙ্কড চিপ, নোট জমা করে রাখলে খবর পেয়ে যাবে ইডি, ইনকাম ট্যাক্স। এবার সেই গোলাপি ২০০০-এর নোট ফিরিয়ে নেওয়া হল, কেন নেওয়া হল? তা নিয়ে আবার মোদিজি মৌন। দেশের বিরোধী দল জানতে চাইছে, পুলওয়ামায় হয়েছিলটা কী? কার গাফিলতিতে সেদিন ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল? ওই সময়ে আমাদের মাদার অফ ডেমোক্রেসির ফাদার তো জঙ্গলে শুটিং করছেন, কিন্তু কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন সতপাল মালিক, তিনি যে সব তথ্য দিচ্ছেন তা কি ঠিক? উনি মৌন, একটা কথাও বলছেন না। দেশের সংসদে বিরোধীরা প্রশ্ন করছেন আদানি, মোদি সম্পর্ক নিয়ে, আদানি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে, প্রধানমন্ত্রী ঝাড়া এক ঘণ্টা বললেন কিন্তু আদানির নামও নিলেন না, ও বিষয়ে তিনি মৌন। দেশ স্বাধীনতার পরে এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছে যিনি আক্ষরিক অর্থেই সাংবাদিকদের ভয় করেন, একটু ট্যাঁড়া, আউট অফ সিলেবাস প্রশ্ন এলেই উনি জল খেয়ে উঠে যান, ক্ষমতায় আসার পর থেকে, ২০১৪ থেকে একটা সংবাদ সম্মেলনের মুখোমুখিও তিনি হননি, তিনি প্রশ্নকে ভয় পান, নিজের ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে প্রসঙ্গ উঠে আসবে জেনেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না। আবার কেউ না বলতেই তেনার বাচাল মুখ খুলে গেল, উনিই জানালেন আদানি আম্বানিরা টেম্পো করে কালো টাকা দিয়েছে কংগ্রেসকে ! সাংঘাতিক কথা, তাহলে কি সেই কালো টাকা উদ্ধারে ইডি যাচ্ছে? সিবিআই নামছে? আর কেউ খবর পেল না আপনি খবর পেলেন আর জনসভাতে বলে দিলেন? সুইচ টেপা হয়ে গেছে, উনি মিউট, মৌনিবাবা। আচ্ছা এসব যে বললাম, তা কি নতুন কিছু? না পৃথিবীসুদ্ধ লোক জানে, এবং এখানেই সমস্যা।
ওনার আমেরিকা যাত্রা নিয়ে মানে মাদার অফ ডেমোক্রেসির ফাদার ওফ পাওয়ারের আমেরিকা যাত্রা নিয়েও নাকি বিশাল কলরব উঠেছিল, উনি ওখানে কী কী খাবেন তাও আমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল, ওখানের ওনার সেই ভক্তকুল তৈরি হয়ে বসে ছিলেন, যাঁরা এদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে বসে আছেন, সেই তাঁরা মাদার অফ ডেমোক্রাসির ফাদার অফ পাওয়ারকে দেখার জন্য বসে ছিলেন। কিন্তু একটা খবর এসেছিল সেই সময়ে আমাদের কাছে যে কেবল ওই ভক্তজনেরাই নয়, কিছু সাংবাদিকও নাকি বসে আছেন কিছু প্রশ্ন নিয়ে, খোদ আমেরিকার মাটিতে সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, এবং এই নিয়ে চিন্তিত দু’ দেশের আধিকারিকরা, একটা মন্দের ভালো ফর্মুলা নাকি বের করেছিল, মাত্র একটাই সংবাদ সম্মেলন হবে যেখানে কেবল বিদেশি সাংবাদিকদেরই প্রশ্ন করতে দেওয়া হবে, সেসব প্রশ্নের উত্তরে মোদিজি যা বলবেন, সেটাই মেনে নিতে হবে ওই বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের, মানে পালটা প্রশ্ন করতে দেওয়া হবে না এই কড়ারে তিনি রাজি হয়েওছিলেন। কিন্তু সেখানেও কি যথেষ্ট দুষ্টু লোক নেই? তাঁরাও দু’ চারটে আউট অফ সিলেবাস প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন না? দিলেন, ব্যস, মোদিজি তখন তাঁর দ্বিতীয় সত্তাতেই ফিরে গেছেন, ভাবখানা হল উনি শুনতেই পাচ্ছেন না, মৌনিবাবা বনে গেলেন। দেশের ইতিহাসে এরকম কোনও রাষ্ট্রনায়ক নেই যিনি সাংবাদিকদের এরকম ভয় করেন, তারচেয়েও বেশি ভয় করেন প্রশ্নকে। আপনি বলবেন এরকম কি আর কেউ নেই? আছেন বইকী। আপনি দেখেছেন নাকি অ্যাডলফ হিটলারের কোনও প্রেস মিট? মুসোলিনির দু’ একটা প্রেস মিট ছিল শুরুর দিকে, স্পেনের ফ্রাঙ্কোর কোনও প্রেস মিট নেই, ছিল না জোসেফ স্তালিনের, অবশ্য সেখানে প্রেসই ছিল না আর নেই উত্তর কোরিয়াতে। কিম জং উন প্রেস মিট করেন, সাংবাদিকরা আসেন, সাংবাদিকদের সামনে ওনার ছবি তোলা হয়, তারপর প্রেস মিট শেষ হয়। কোনও প্রশ্ন নাকি থাকেই না। আমাদের মাদার অফ ডেমোক্রেসির ফাদার সেই তালিকারই এক উজ্জ্বল নাম, যিনি আপাতত আবার মৌনিবাবা মোডে চলে গেছেন, মোদি কা গ্যারান্টি, মোদি কা পরিবারের বাওয়াল বন্ধ। শরিক দলের চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা স্বয়ম্ভু মোদিজি এখন কথা বলছেন না।