Friday, June 13, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ:  আমার দুটো সবল হাত বেকার কেন?

চতুর্থ স্তম্ভ:  আমার দুটো সবল হাত বেকার কেন?

Follow Us :

না, আমি ভোট বয়কট করিনি,
ভোট আমাকে বয়কট করেছে।
কারণ আমার বয়স একত্রিশ।
কারণ আমার বয়স একত্রিশ,
আর তিরিশের পর সরকারি চাকরি পাওয়া যায় না।
যে সরকার আমাকে চাকরি দেবে না –
সেই সরকার গঠনের জন্য
গায়ে আমার পুলক লাগে চোখে ঘনায় ঘোর –
এরকম আশা করা যায় না।

মণিভূষণ ভট্টাচার্যের বেকারের চিঠির কটা লাইন, কিন্তু ভুলে ভরা। যে কোনও নির্বাচনের আগে দেখবেন, এই বেকার ছেলেরাই মজুত ভান্ডার, তাদের হাতে ঝান্ডা, তাদের হাতে ব্যানার, তারাই মিছিলে, সকাল সন্ধ্যে তারাই স্লোগান দিচ্ছে, তারাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে, চিহ্নিত শত্রুদের বাবা মা তুলে গালি দিচ্ছে, হ্যাঁ ওই বেকারেরাই, কোনও ব্যতিক্রম নেই। কারণ? কারণ যদি তার দল সরকারে আসে, যদি তার নেতা এমএলএ বা এমপি হয়, যদি মন্ত্রী হয়, তাহলে চিচিং ফাঁক। দরজা খুলে যাবে, চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো? নিদেন পক্ষে একটা ঠেলাগাড়ি বসানোর অনুমতি, বা অটো স্ট্যান্ডে হিসেব রাখার কাজ, যা হোক একটা কিছু, মাসের শেষে কিছু সামান্য, বাবা রিটায়ার সেই কবে, ঘরে মা, ভাই, বোন, আর বেলা বোস অপেক্ষায়, চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি, তাই তাদের ভোট এলে পুলক জাগে, গায়ে আমার পুলক লাগে চোখে ঘনায় ঘোর, তা গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য নয়, মহান সংবিধানকে তুলে ধরার জন্য নয়, সাম্যবাদী ব্যবস্থা, উন্নয়ন, বিকাশ, হিন্দুরাষ্ট্র কিচ্ছুটির জন্য নয়, স্রেফ পাপি পেট কা সওয়াল, তাই ৫০/৭০/১০০ কিলোমিটার উজিয়ে গিয়ে তারা এসেছিল পরীক্ষা দিতে, প্রয়াগরাজে, পাটনায়।

কটা চাকরি? কতজন পাবে? ৭ লক্ষ চাকরি। কিসের? রেলের চাকরি। এন টি পি সি। না ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার নয়, নন টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটাগরি, রেলের কেরানি বা সমতুল কোনও চাকরি, পেলেই জীবন বদলে যাবে। কতজন পরীক্ষা দিচ্ছেন? ১ টা পদের জন্য ৩৫৪ জন, মানে ৭ লক্ষ চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, ২৪ কোটি ৭৮ লক্ষ বেকার যুবক। এটাই রেলওয়ে রিক্রুট্মেন্ট বোর্ডের হিসেব, তারমানে যদি সত্যি করে ৭ লক্ষ বেকার ছেলে মেয়ে চাকরি পায়ও, তাহলেও পড়ে থাকবে ২৪ কোটি ৭১ লক্ষ যুবা, তারা পাগলের মত ছুটে এসেছিল, কারা তারা?

এদের মধ্যে গ্রাজুয়েট আছে, মাস্টার ডিগ্রি হোল্ডার আছে, পি এইচ ডি করেছেন এমনও আছে, কিন্তু রেলওয়ে রিক্রুট্মেন্ট বোর্ড বলে দিয়েছে, সব্বাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হবে, মানে বেশি পড়েছে বলে আগে চাকরি তাও নয়। তার আগে তিন বার ফর্ম ভরেছে, পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, এবার হলে এসে জানলো পরীক্ষা বাতিল, তারা রেল অবরোধ করেছে, তারা রাস্তা অবরোধ করেছে, বাস, ট্রেন জ্বালিয়েছে। এবং তারপর নৃশংসভাবে তাদের পেটানো হয়েছে, চোর ডাকাতের মত পেটানো হয়েছে।

এদেশের অন্যতম বীর, যাকে পুজো করার ভান করে চলেছে রাজনৈতিক নেতারা, তিনি বলেছিলেন, দ্য ইউথ হাভ দ্য রাইট টু মেক ব্লান্ডার, মিসটেক নয়, সুভাষ চন্দ্র বসু ব্লান্ডার শব্দটা ইচ্ছে করেই লিখেছিলেন, তরুণের স্বপ্নে বলেছিলেন, যুবকদের ভুল, আবার ভুল করার অধিকার আছে, সেই ভুলের জন্য তাদের চোর ডাকাতের মত পিটিয়ে মারা হল, তিনি নিশ্চিন্তে নিরাপদে রক্ষী বাহিনী পরিবৃত হয়ে ঘুরছেন, যে চৌকিদার বলেছিলেন বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি হবে।

সমস্ত সেক্টরে, কি বড় কি ছোট, সংগঠিত বা অসংঘটিত ক্ষেত্রে চাকরি কমছে, জাহাজ বন্দর থেকে রেল, থার্মাল পাওয়ার স্টেশন থেকে বিমান বন্দর, নতুন চাকরি নেই, সেগুলো তুলে দেওয়া হচ্ছে, বেচে দেওয়া হচ্ছে আদানি, আম্বানি, মিত্তল, বাজাজদের, ২৫ জন ৩৫ জনের কাজ ১ জনকে দিয়ে করানো হচ্ছে, না পারলে ছাঁটাই, হায়ার অ্যান্ড ফায়ার, ক্রমশ বড় হচ্ছে মজুত ভান্ডার, কমশ বাড়ছে বেকারের সংখ্যা, ক্রমশ বাড়ছে সেই শক্তি যাদেরকে ফেসবুকে পোস্ট পিছু ১৫ টাকা দেওয়া হলে, তারা অবলীলাক্রমে যা খুশি তাই লিখতে পারে, যে কোনও অস্ত্র তুলে নিতে পারে, হত্যা করতেই পারে গৌরি লঙ্কেশ বা পানসারে, দাভোলকরদের, যে কোনও প্রতিবাদীকে।

তার দর্শন নিয়ে, তার মতামত নিয়ে, তার কাজ নিয়ে সেই বেকারের কিচ্ছু এসে যায় না, যে এখন মার্সিনারি, বেকার ছেলে, পয়সা চাই, চাকরি চাই, কিছু একটা চাই। যত বাড়বে এই মজুত শক্তি, তত নিশ্চিন্ত এই রাজনৈতিক নেতারা যাদের হাতে আছে অগাধ পয়সা, অগাধ সম্পদ, হিসেব বলছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মিলিত সম্পদের ৭০% আছে বিজেপির কাছে। এটা ঘোষিত সম্পদ, এটা দলের, ব্যক্তি নেতার কাছে কত আছে তা বলার দরকার নেই, অতএব ভাত ছড়াও, কাকের অভাব হবে না।

এবং এই বেকারদের এতদিন পরে বোঝানো হচ্ছে, কেন তারা বেকার? কেন তাদের চাকরি নেই? কে দেশে কোটি কোটি গরীব আছে, কারণ স্বাধীনতার পরে ২০১৪ পর্যন্ত তাদের ঠকানো হয়েছে, জহরলাল, ইন্দিরা, রাজীবের কংগ্রেস এর জন্য দায়ী, আসছে তোমাদের সুদিন। সমস্যা হল এটাও কি তারা মন দিয়ে বুঝছে? এই যুক্তির পেছনে কারণগুলো বুঝছে, মিথ্যে হলেও তাদের কাছে এই মিথ্যে কি প্রমাণিত? না তাও নয়। তাদের চোখ এখন অর্জুনের মত, যেখানে একটু আশ্বাস, যেখানে একটু ভরসা আছে, সেখানেই তারা দলে দলে যাচ্ছে,

আমাদের দেশের যুব সংখ্যা কত? ৪৬ কোটি, বিরাট এই সংখ্যার ৮০% বেকার বা আধ বেকার, বছরে ৪/৫/৬ মাস কাজ থাকে, তারা ভোট আসলে পুলকিত হয়, তাদের লয়ালটি প্রমাণ করার দিন এসে গিয়েছে, নেতার চোখে পড়তে হবে, তাহলেই, তাহলেই চাকরিটা আমি পেয়ে গিয়েছি বেলা সত্যি। আর সেই চাকরির গাজর ঝোলানোর জন্য ঘোষণা হল বাজেটে, বলা হল ৬০ লক্ষ বেকার চাকরি পাবে, কে ঘোষণা করলেন? দেশের অর্থমন্ত্রী। জানালেন কি, কোথায় চাকরি? কত মাইনের চাকরি? কবে হবে সে চাকরির পরীক্ষা? কিন্তু দেশের বেকার জেনে গ্যালো, নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছে, বিজেপি দলের কাছে ৬০ লক্ষ চাকরি আছে, মানে পদ্মফুলের পোস্টার লাগালে, মিলতেও পারে সেই ৬০ লক্ষ চাকরির একটা, অতএব জান কুর্বান।

মজুত শক্তি রাস্তায় নামবে, আপনি অসহায়ের মত দেখবেন, আমিও। ভাববো তাহলে হিন্দুরাষ্ট্রের জন্য, জঙ্গি জাতীয়তাবাদের পক্ষে কত্ত সমর্থক, ওই তো আমার পাশের বাড়ির ছেলেটা, সেও আরএসএস এর খপ্পরে পড়ল? সেও সাম্প্রদায়িক? দেখলেন আপনার প্রিয়জন, ভাই বোন, ভাগ্নে, ভাইপোদের সেই মিছিলে, তারাও হিন্দু রাষ্ট্র চায়? তাহলে? তাহলে কিচ্ছু নয়, তারা একটা চাকরির জন্য রাস্তায়, তারা একটা চাকরি, মাস মাইনের জন্য চিৎকার করে বলছে, অভি তো পহেলি ঝাঁকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়, কাশি আর মথুরাতে ঠিক কি হবে, তা তারা জানে না, তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথাও নেই। ৬০ লক্ষ চাকরির একটা তাদের চাই, এই বাহিনীই ফাসিস্টরা কাজে লাগায়, ওপরের দিকে থাকে কিছু শয়তান, তলায় অন্ধ ভক্ত।

আবার মণিভূষণের ঐ কবিতাই মনে পড়ছে,

চাকরি আমার হতো।
জেলার সব ছাত্রদের মধ্যে আমি যদি মাতৃভাষায়
প্রথম না হয়ে আপনাদের পিতৃভাষা অর্থাৎ
ইংরেজিতে প্রথম হতাম, হয়তো আমার বরাত
খুলে যেতো। অথবা আমার বন্ধুরা –
যারা ঠিক ঠিক জায়গায় তেল সরবরাহে
আরব রাষ্ট্রগুলিকেও হার মানিয়েছে –
আমি যদি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়
নামতে পারতাম তাহলে আমার গলায়
বাদামের ঝুড়ির বদলে নেকটাই ঝুলতো।

গর্তে-ঢুকে-যাওয়া ফ্যাকাসে হলুদ রঙের দুটো চোখের
শূন্য দৃষ্টি এবং একটা অকেজো টাইপ মেশিন ছাড়া
বাবা আমার জন্য আর কিছু রেখে যেতে পারেন নি।
এ বছর জীবনের সর্বশেষ ভোটটি দিয়ে মা চলে গেলেন।
ভারতবর্ষ পড়ে রইলো।

আমার আর কোনো দায় নেই।
যেহেতু আজকের দর্শন আগামীকালের সংস্কার মাত্র
এখন যদি আমি সন্ন্যাসী হয়ে যাই।
বন্ধুরা বলবে, ‘পালিয়ে গেল’।
বিদেশি টাকায় পুষ্ট যে সব তথাকথিত
জনসেবা প্রতিষ্ঠান আছে – তাতে যদি
ভাতের জন্য ঢুকে পড়ি –
তারা বলবে, ‘ব্যাটা গুপ্তচর’।
যদি আত্মহত্যা করি –
তাহলে, ‘কাপুরুষ’।
আর যদি সোজাসুজি প্রতিবাদ করি –
তাহলে আপনারা, রাজনৈতিক নৈশ প্রহরীরা
কালো টাকার কুমিরদের অন্ধকার পাড়ায় গিয়ে
মাঝরাতে ‘নকশাল ‘নকশাল বলে
ঘেউ ঘেউ করে তাদের জাগিয়ে দেবেন
এমন কি অবস্থা তেমন তেমন বেগতিক দেখলে
আপনাদের সঙ্গে রাশিয়া আমেরিকাও যোগ দেবে।

এতদিন চাকরি খুঁজেছি। পাই নি।
এবার ভাবছি আমরাই আপনাদের চাকরি দেবো।
আমরা যারা বেকার আধাবেকার ভবঘুরে
বাউন্ডুলে ভিখিরি –
যাদের জমি নেই কিন্তু জমিতে খাটে –
বাড়ি বানায় কিন্তু বাড়ি নেই –
যারা শহরে আলো জ্বালে কিন্তু যাদের কুপিতে তেল নেই –
যারা কারখানা বানায়, কিন্তু কারখানা যাদের
আস্তাকুঁড়ে চালান করে দেয়
যারা কোনোদিন একটা ভালো জামা পরেনি,
সরবত খায় নি,
বেড়াতে গিয়ে পর্বতমালার স্তব্ধ নিরাসক্তি ও মহত্ত্বকে
স্পর্শ করেনি,
যারা জন্মায় আর খাটে, খাটে আর মরে,
যারা পিপড়ের মতো পোকামাকড়ের মতো
শীত-রাত্রির ঝরাপাতার মতো –
সেইসব নিরক্ষর নগণ্য কুঁজো অবজ্ঞাত করুণ
যাদের দেখার জন্য এবং ঠকাবার জন্য আপনারা
বিরাট মঞ্চে উঠে দাঁড়ান –

যারা আগামীদিনের ভারতবর্ষের, গোটা পৃথিবীর এবং
সৌরজগতের মালিক – আমি তাদেরই একজন হয়ে
এই জংশনে স্টেশনে বাদাম বেচে যাচ্ছি।
কশাইয়ের বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের মতো জীবন আমাদের –
যে-কোনো মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারি – আবার
এই আঙুলের কেন্দ্রীভূত চাপে খোলা ফাটিয়ে বের করে আনা যায়
রাজনৈতিক ক্ষমতার পুষ্টিকর তৈলবীজ, আর সমস্ত শুকনো খোসা
বাতাসে উড়ে যায়, বাতাসের সঙ্গে আকাশ স্পর্শ করে
মানুষের অনন্ত ঘৃণার আগুন –

সেই আগুনের পাশে বসে আছেন আমার মা,
আমার দেশজননী।

না, ‘বিপ্লব’ শব্দটি শুনলেই আপনাদের মতো
আমার কম্প দিয়ে জ্বর আসে না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | শুরু ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, তৃতীয় বিশ্বযু/দ্ধ আসন্ন?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | একমাত্র জীবিত যাত্রীর সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী জানালেন তিনি?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘ/টনা, দুর্ঘ/টনাস্থলে নরেন্দ্র মোদি, কী জানালেন? দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | মৃ/ত্যুকে হারিয়ে বাঁচলেন ১ যাত্রী কী বললেন? শুনুন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘটনা, জীবিত অবস্থায় উদ্ধার ১ যাত্রী, কেমন আছেন?
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | একমাত্র জীবিত যাত্রীর সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী জানালেন তিনি?
10:55
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | বাঁচলেন ১ জন, কে এই ভাগ‍্যবান?
01:29:16
Video thumbnail
Vijay Rupani | Air India | শেষ বারের মতো! বিজয় রূপানির এয়ারপোর্টে ঢোকার ভিডিও
45:11
Video thumbnail
Ahmedabad | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘটনায় নাশকতার তথ্য? ১ বছর আগে পান্নুর হু/মকি ভিডিও ভাইরাল
01:20:11
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | কলকাতা টিভির খবরের জের, অন্ডালে জলের ট্যাঙ্ক ভা/ঙ্গা শুরু করল ECL
02:13