প্রাক্তন শাশুড়িকে খোরপোশ না দেওয়ার অজুহাত হিসাবে বিয়ের জিনিসপত্র আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার বাসিন্দা কৃষ্ণা পাত্র। বুধবার সেই সংক্রান্ত মামলায় সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, কৃষ্ণাকে তার দাবি অনুযায়ী গচ্ছিত সম্পত্তির তালিকা পিংলা থানায় জমা করতে হবে। পিংলা থানার পুলিশ ওই তালিকা ধরে তার সত্যতা যাচাই করে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা করবে। আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কৃষ্ণার প্রাক্তন শাশুড়ি দুর্গাবালার খোরপোষের টাকা দেওয়ার উপর স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে।
ঘটনার সূত্রপাত খানিকটা এরকম। শ্রীকান্ত চরণ মণ্ডল ও দূর্গাবালা মণ্ডল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার বাসিন্দা। তাদের দুই সন্তান। শ্রীকান্তের মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন দুর্গাবালা। বড় ছেলে ব্রজদুলাল ও ছোট ছেলে নন্দদুলাল মণ্ডল। ব্রজদুলাল স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর বাজ পড়ে মৃত্যু হয় ব্রজদুলালের। ছোট ছেলে নন্দদুলাল আহত হন। মৃত্যুর পর শর্ত সাপেক্ষে বড় ছেলের চাকরি পান তার স্ত্রী কৃষ্ণা পাত্র। শর্ত ছিল তাঁর শাশুড়ি দুর্গাবালার দেখাশোনা করতে হবে। অভিযোগ, সেই শর্ত মানতে পারেননি কৃষ্ণা। ২০১৭ সালে প্রথমবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দুর্গা বালা দেবী। পুত্রবধূ তাঁর খোরপোশ দিচ্ছে না এই অভিযোগ নিয়ে। ২০১৮ সালের ২ মে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে বিষয়টির মীমাংসার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশে কাজ না হওয়ায় ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দুর্গা বালা দেবী। ইতিমধ্যে কৃষ্ণা ফের বিয়ে করেন।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে নির্দেশ দেন দূর্গাবালার খোরপোষের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। আদালতের নির্দেশ মত ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণাকে মাসে ৭০০০/- টাকা খোরপোষ বাবদ দুর্গাবালাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না এমনটাই অভিযোগ ওই প্রৌঢার। যার জন্য ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। তার আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্যের দাবি ছিল, প্রতি মাসে কৃষ্ণার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি দুর্গাবালার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর নির্দেশ জারি করুক আদালত। বুধবার আদালতে কৃষ্ণা হাজির হয়ে জানান, তার আগের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা বিয়ের গয়না, কাঁসার বাসন সহ বহু জিনিষ আটকে রেখেছেন। এজন্যই তিনি খোরপোশ দিচ্ছেন না। দুর্গাবালা দেবীর আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্যের দাবি, বড় পুত্রের মৃত্যুর পরই কৃষ্ণা তার সমস্ত জিনিষ নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
শেষে সমস্যার সমাধানে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জানান, কৃষ্ণা তাঁর সম্পত্তির তালিকা পিংলা থানায় পেশ করুন। পুলিশ ওই তালিকা মিলিয়ে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিক। তার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত শাশুড়ি দুর্গাবালার খোরপোশের উপর স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে।