Saturday, June 21, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভ4th Piller: ডোন্ট টাচ মি, মেল, ফিমেল এবং জনগণেশের প্রচন্ড কৌতুক

4th Piller: ডোন্ট টাচ মি, মেল, ফিমেল এবং জনগণেশের প্রচন্ড কৌতুক

Follow Us :

এ ভরা ভাদরে রঙ্গ তামাশা তো হতই গ্রাম বাংলায়। মাঠে ধান সবুজ, ঠারো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মাচায় ঝিঙে, চালকুমড়ো, ক্ষেতে বেগুন, লঙ্কা, বিলে, পুকুরে খাপলা ফেললেই চুনো, বরাত ভালো হলে জিওল, শোল। এমনকি গরুর দুধও বেশি, কারণ সে পাচ্ছে সবুজ ঘাস। এই আবহে ভাদ্রে গ্রাম বাংলা অলস, কিছুটা ল্যাদ খাওয়া জীবনে আচ্ছন্ন থাকতো। অতএব রঙ্গ তামাশায় ভরে উঠতো জীবন, খেউড়, হাফ আখড়াই, কীর্তন। চন্ডীমন্ডপে হাসির ফোয়ারা, দুপুর গড়ালে পানের খিলি মুখে দিয়ে মহিলা মহলেও রঙ্গ তামাশা। তো সেদিন গেছে ভেসে, সময় পাল্টেছে, শহরে ব্যস্ত সমস্ত মানুষের সময় কই? যদিবা অবরে সবরে সময় মিলেও যায়, ঘর ভাড়া, বাড়তে থাকা বাজারের দাম, ছেলে মেয়ের স্কুলের মাইনে, নিজের আর গিন্নির প্রেসারের ওষুধের সঙ্গে রোজগারের সঙ্গে তালমেল খাওয়াতে,পাঁকাল মাছ ধরার মত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আড়ে মেলে তো বহর ছোট হয়, বহরে মেলে তো আড়ে মেলে না। রঙ্গ তামাশার সময় কই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর তেনার বান্ধবীর ডাঁই করা টাকার সামনে আম আদমি আরও অসহায় বোধ করেছে, গরু পাচার, কয়লা পাচার, ইডির টাকা গোনার মেশিন দেখে থম মেরে গেছে। রেগেছে, ঘেন্নায় এক দলা থুতু ফেলেছে। কিন্তু রঙ্গ তামাশা? না, তার ছিটে ফোঁটাও ছি ল না। বিজেপির নবান্ন অভিযানে তা ফিরে এল। ভাবুন দেখি দেশের শাসক দল, অমন দেশ জোড়া প্রতাপশালী মোদি – শাহের দল, রাজ্যের প্রশাসনিক দপ্তরের দিক মিছিল নিয়ে যাবে, নবান্ন অভিযান। তৃণমূল সরকারের দূর্নীতি, দিশাহীনতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিনের শেষে বিশুদ্ধ রঙ্গ তামাশা এনে হাজির করলো। পাড়ার মোড় থেকে ফেসবুক, কফিহাউস থেকে টুইটার এ বিশুদ্ধ রঙ্গ তামাশা চলছে। ডোন্ট টাচ মাই বডি, ইউ আর ফিমেল, আই অ্যাম মেল। না ইংরিজীতে কোথাও ভুল নেই। তথ্য ১০০% ঠিক। তবু এ ভরা ভাদরে ঐ কটা কথা নিয়েই রাজ্যজুড়ে চলছে রঙ্গ তামাশা। গুটি কয়েক ভীষণ শিক্ষিত লিঙ্গ সাম্য নিয়ে সরব মানুষজন ছাড়া, রাজ্য কেন দেশ বিদেশ থেকে খিল্লি ভেসে আসছে। কেন? কারণ গতকাল বাংলা বিজেপির নবান্ন অভিযান শেষপর্যন্ত বিরোধী দলনেতার হাস্যকর উক্তিতেই শেষ হয়েছে। কেউ বলতেই পারেন এই নবান্ন অভিযান কে ব্যর্থ করার জন্য বিরাট পুলিশি ব্যবস্থা ছিল, থাকবেই তো। ভারতবর্ষের সমস্ত শাসক দল এবং সরকার এই ধরণের অভিযানের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যারিকেড তৈরি করে, জল কামান আনে, টিয়ার গ্যাস রাখে, চারিদিকে পুলিশ থাকে আমাদের দেশে কেন দেশে দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রতিরোধে এটাই চালু গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত। বিরাট ছিল প্রস্তুতি পর্ব, এখান থেকে ট্রেন যাবে, সেখান থেকে গাড়ি, কোটি কোটি টাকার পরিকল্পনা, কার খাটের তলায় ঢুকলো? শাসক দলই যে শুধু চুরি করে তা তো নয়, সুযোগ পেলে বিরোধীরাও করে বৈকি। ম্যান মার্কিং ও হয়েছিল, সুকান্ত মিছিল নিয়ে যাবেন হাওড়া ময়দান থেকে, শুভেন্দু সাঁতরাগাছি থেকে, দিলীপ ঘোষ কলেজ স্কোয়ার থেকে। দিলীপ ঘোষ ছিলেন মুরলিধর লেনের অফিসে, সুকান্ত রাত কাটিয়েছেন হাওড়া স্টেষন লাউঞ্জে, রেল দপ্তর বিজেপির হাতে। শুভেন্দু ছিলেন কোলকাতায়, গাড়িতে করে লকেট চ্যাটার্জি আর রাহুল সিনহা কে নিয়ে যাবার সময়েই পিটি এস এর সামনেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, খুব বেশি ধাক্কা ধাক্কি ও হয়নি, দৃশ্যতই গট গট করে তাঁরা পুলিশের গাড়িতে চাপেন। সুকান্তবাবু মিছিল নিয়ে এগোনর সময়েই ওনাকে আটকানো হয়, ওনারা বসে পড়েন। দিলীপ ঘোষ, তবুও খানিক এগোলেন, হাওড়া ব্রিজের অনেক আগেই তাঁকে আটকানো হল, জলকামানের সামনে কর্মীরা ছিটকে গেলেন, দিলীপ বাবু ঠায় দাঁড়িয়ে এবং ওখানে দাঁড়িয়েই ঘোষণা করলেন নবান্ন অভিযান শেষ, না করে উপায়ই বা কী ছিল, তিনি তো তখন একলা জগাই। পরক্ষণেই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বাবু জানালেন, ওনার টা শেষ হলেও হতে পারে, আমার শেষ হয় নি। কি কান্ড। ও নাড্ডা সাহেব দেখুন আমি এখনও দান ছাড়িনি, এটাই বক্তব্য। কিন্তু ততক্ষণে গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটে গেছে, শুভেন্দুর সেই সপ্তপদী উক্তি, ডোন্ট টাচ মাই বডি, ইউ আর ফিমেল, আই অ্যাম মেল। এত জোরের সঙ্গে নিজের পৌরুষত্ব ঘোষণা এর আগে কেউ করেছে? ম্যাঁয় হুঁ ডন, শুনেছি, ম্যাঁয় হু হিন্দুস্তানি শুনেছি, কিন্তু আই অ্যাম মেল বলে ঘোষণা দেওয়া পুরুষ দেখিনি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শিখন্ডির সামনে অস্ত্র ফেলে দিয়েছিলেন অর্জুন, কিন্তু আই অ্যাম মেল বলে চিৎকার তো করেন নি। মমতা সরকার আসার পরে বামেদের শক্তি সামর্থ কমেছে, দলের লক্ষ লক্ষ সদস্য, গণসংগঠনের তার ১০ গুণ সদস্যসংখ্যায় জল ছিল, বেনো জল ছিল, সে সব বেরিয়ে গেছে। কিন্তু এই আকালেও বামেদের রাজনৈতিক প্রোগ্রামে এক ধরনের সিরিয়াসনেশ থাকে, কর্মীদের জঙ্গি মনোভাব থাকে যা নিয়ে হাসি ঠাট্টা হয় না, আপনি পদ্ধতি নিয়ে বিরোধিতা করতেই পারেন, কিন্তু বামেদের নবান্ন অভিযানের পরের দিন পুলিশের গ্রেপ্তার, লাঠি চার্জ, টিয়ার গ্যাস নিয়েই আলোচনা হয়, ডোন্ট টাচ মি, আই অ্যাম মেল গোছের ফড়ে কথাবার্তা নিয়ে নয়। অথচ রাজ্যে ১৮ জন সংসদ তাঁদের, রাজ্য থেকে কচি মন্ত্রী হলেও আছেন জনা তিনেক, স্বীকৃত বিরোধী নেতা আছে, উল্টোদিকে বামেদের একটাও নেই, মন্ত্রী বিধায়ক নেই, তাঁরা লড়ছেন, কতটা পেরে উঠছেন, কতটা পারবেন, পরের কথা কিন্তু আর যাই হোক তাঁদের নিয়ে খিল্লি হচ্ছে না, তাঁদের নেতারা ভরা বাজারে আই অ্যাম মেল বলে পৌরুষত্বের ঘোষণা দিচ্ছেন না। কেন? কারণ বিজেপির সবটাই ফাঁপা, সবটাই হাওয়ায়। প্রবল প্রচার আর টাকা ছড়িয়ে মিডিয়া কিনে এক বিরাট আকারের বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে সংগঠনের নামে, রাজনীতির নামে। এক প্রকান্ড বেলুন। তার না আছে জনভিত্তি না আছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আরও গভীরে গেলে বাঙালির তর্কপ্রবণতা, আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান নয়, আর্গুমেন্টেটিভ বেংগলিজ, বেশিরভাগ বাঙালি মানুষই ঝট করে কিছু মেনে নিতে রাজি নন, এক অংশ হাওয়ায় প্রভাবিত হয়েছিলেন, ভোট দিয়েছিলেন, সেটা বিজেপি কে নয়, সেটা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম এবং অন্যান্যদের সম্মিলিত বিরোধিতা, মানে সিপি এম পারবে না, চলো বিজেপিই সই, তৃণমূল যাক, বিজেপি কে বুঝে নেবো। কাজেই এক ঝটকায় ভোট বেড়ে ৪০%। কদিনের মধ্যেই সেই মানুষের বেশিরভাগ বুঝেছেন এ আরও বড় আপদ, সমর্থক কমেছে, পাল্লা দিয়ে কমেছে কর্মীর সংখ্যা। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল টলিউড বুঝি গেরুয়া বান এ ভেসে যাবে। তারপর অ্যাবরা কে ড্যাবরা, গিলি গিলি হোকাশ ফোকাস, সব্বাই ফিরে গেছে নিজ নিকেতনে, এত্তবড় কর্মসূচিতে নেই রূপা গাঙ্গুলি, অঞ্জনা, কাঞ্চনা, রুপাঞ্জনা, রিমঝিম, লামা ইত্যাদি ইত্যাদিরা, প্রত্যেকেই বুঝেছে সার কথা কারণ এদের কেউই তো বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষ বা সব্যসাচী চক্রবর্তি নন, এক আদর্শ কে বিশ্বাস করে দলের সঙ্গে থাকা মানুষ নন। ওনারা এসেছিলেন, ভেবেছিলেন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে, এম এল এ হবেন, মন্ত্রী নিদেনপক্ষে মেয়র, হতে যে পারে, সে রাস্তা তো তৃণমূল দেখিয়েই দিয়েছে, কাজেই এসেছিলেন, বুঝেছেন সে গুড়ে বালি এবং গ্যামাক্সিন, কাজেই চেপে গেছেন, টলিউডের একলা জগাই রুদ্রনীল এখনও মাঠে আছেন সুনির্দিষ্ট প্রাপ্তির বিনিময়ে, এমনি এমনি নয়। না পেলে থাকবেন না, এই ব্যাপারে উনি অত্যন্ত প্রফেসনাল। কর্মী নেই, সমর্থক নেই, নেই সেলিব্রিটি, কাজেই নবান্ন অভিযান ফ্লপ শো। সিনেমা ফ্লপ হলে নায়কের বাজে ডায়ালগ বা নায়িকার নাকের গড়ন নিয়ে কথা হয়। এখানে শুভেন্দুর ডোন্ট টাচ মি, আই অ্যাম মেল নিয়েই কথা হচ্ছে। ধরুন বিজেপির নবান্ন অভিযানে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে হাজির হয়েছেন, চারিদিক থেকে এগোচ্ছেন, পুলিশ জলকামান টিয়ার গ্যাসে সামলাতে না পেরে গুলি চালিয়েছে, আজ টেলি বা প্রিন্ট মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, চায়ের ঠেক থেকে কফি হাউসে শুভেন্দুর কথা নিয়ে আলোচনা হত? শুভেন্দু বাবু জনান্তিকে প্রবল ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন, নিউজ পেপারের আর কোনও আজ নেই, কেবল আমার ঐ কথা নিয়েই এত লেখা? শুভেন্দুবাবু, সময় আছে, হাতে বিশেষ কাজও নেই, ২২ জুলাই, ১৯৯৩ এর যে কোনও কাগজ খুলে দেখুন, আগমার্কা বামপন্থী বলে চিহ্নিত খবরের কাগজেও প্রথম পাতার ছবি ছিল মমতার, হ্যাঁ মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, সেই ছবি। মানুষ মাথায় রেখেছিল সেই ছবি। কফি হাউস থেকে চায়ের ঠেক বিশ্বাস করেছিল বামেদের বিরুদ্ধে যদি কেউ লড়াই করতে পারে, তাহলে তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উনি সেদিন আই অ্যাম ফিমেল বলেও ঘোষণা দেন নি। তবে যাই হোক, এ ভরা ভাদরে এমন নির্ভেজাল রঙ্গ এনে হাজির করে জনগণেশের প্রচন্ড কৌতুক মানে খোরাক জোগানোর জন্য শুভেন্দুবাবুর একটা ধন্যবাদ তো প্রাপ্য। ধন্যবাদ শুভেন্দুবাবু, যথেষ্ট দুরত্ব রেখেই এক ফিমেল, এক মেল কে থ্যাংক্স জানাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ আবহে জেনেভায় বৈঠক করবেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী
01:28:30
Video thumbnail
SSC Update | বিগ ব্রেকিং, SSC-র ভাতাতে স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের, এবার কী হবে?
01:45:45
Video thumbnail
Ahmedabad Incident | আহমেদাবাদ দু/র্ঘটনার পর বোয়িংয়ে আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ব? বহু চুক্তি বাতিল
01:51:11
Video thumbnail
Stadium Bulletin | জোড়া শতরান! হেডিংলেতে দাপট ভারতের
22:37
Video thumbnail
Iran-America | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের মাঝেই আমেরিকাকে চ‍্যালেঞ্জ ইরানের, কোন ড্রোনে ভয় দেখাল ইরান?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধের মাঝেই আমেরিকাকে চ‍্যালেঞ্জ ইরানের, কোন ড্রোনে ভয় দেখাল ইরান?
04:01
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের যে ক্ষে/পনা/স্ত্রে কুপোকাত ইজরায়েল, জেনে নিন তার গোপন কথা,দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
03:14:41
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানের অনবরত অ‍্যা/টাক, ছা/ই হওয়ার মুখে ইজরায়েল, দেখুন ঠিক কী অবস্থা
01:40:21
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধে ২ সপ্তাহের মধ‍্যে এন্ট্রি নেবে আমেরিকা
02:35:25
Video thumbnail
Apple-Google Password | অ্যাপল-গুগল-ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড ফাঁস
01:06:20