মুম্বই: আজ মঙ্গলবার, আদরের তুনিশাকে চোখের জলে বিদায় জানালেন অভিনেত্রীর পরিবার, প্রিয়জন ও সতীর্থরা। মুম্বইয়ের মীরা রোড শ্মশানে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তুনিশার। মেয়েকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তুনিশার মা বিনিতা শর্মা। অসুস্থ হয়ে ক্ষণিকের জন্য জ্ঞান হারান তিনি তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তুনিশাকে শেষ বিদায় জানাতে মঙ্গলবার সকালে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রীর সতীর্থরা। অভিনেতা শিভিন নারাং, অভনিত কৌর, বিশাল জেঠওয়া, সায়ন্তনী ঘোষ ও শারিব হাশমিকে তুনিশার বাড়িতে দেখা যায়। উপস্থিত ছিলেন তুনিশার বন্ধু ও এক সময়ের সহ-অভিনেতা কনওয়ার ধিলোনও।
এদিকে একদিকে যখন তুনিশার মৃত্যুর জন্য পুলিশ হেফাজতে একের পর এক জেরার মুখে শিজান খান। ঠিক তখন তুনিশার বিদায় বেলাতে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল সিজান খানের বোন ফলক নাজকে। এই ঘটনায় হতবাক হন উপস্থিত অনেকেই। তুনিশার শেষকৃত্যের সময় তাঁর পরিচিত এক মহিলাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন ফলক। তুনিশার শেষকৃত্যের কাজ সারেন অভিনেত্রীর মামা পবন শর্মা। তাঁকে এই বিষয় জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, আমাদের সঙ্গে সিজানের পরিবারের তরফে কেউ দেখা করতে আসেনি, তাই ওরা তুনিশার শেষকৃত্যে এসেছিল কী না আমার তা জানা নেই।
View this post on Instagram
তুনিশার মায়ের পাশাপাশি সিজান খানের বিরুদ্ধে আগেই ক্ষোভ উগরে দেন পবন শর্মা। তুনিশার ক্যারিয়ার গ্রাফ এত ভাল থাকা সত্ত্বেও সিজান খানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই আত্মহত্যার মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে বছর ২০-র তুনিশা।
প্রথম সারির এক সংবাদ মাধ্যমকে পবন শর্মা আরও জানান, এক সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রথমে ভাল বন্ধু হন তুনিশা ও শিজান খান। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বন্ধুত্বে আরও এক ধাপ এগোন দু’জনে। কয়েক মাস আগেই দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু আত্মহত্যার পনেরো দিন আগেই সিজান তুনিশার সঙ্গে ব্রেকআপ করে নেন। এর পাঁচ দিন পরেই অ্যাংজাইটি অ্যাটাক হয় তুনিশার। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। তখন তুনিশা ও পবন শর্মা অভিনেত্রীর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে গেলে সে মায়ের কাছে জানায় তাঁকে ঠকানো হয়েছে। পবন আরও জানান, সিজান তুনিশার সঙ্গে সম্পর্কে থেকেও আরও অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, কথা বলত। সিজানের বিরুদ্ধে চিটিং ও ডাবল ডেটিংয়ের অভিযোগও আনেন পবন শর্মা।
পবন শর্মার পাশাপাশি সিজানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন তুনিশার বান্ধবী রায়া লাবিব। তিনি জানান, নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন সিজান। একই সময়ে ৬ থেকে ১০জন মেয়ের সংসর্গে এসেছেন সিজান। শুধুমাত্র সম্ভোগের তাগিদেই মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কে যেতেন সিজান। সেই চাহিদা মিটে গেলেই কয়েক মাসের মধ্যে ব্রেকআপ করে নিতেন সিজান। তুনিশার সঙ্গেও ঠিক এমনটাই করেছেন সিজান অভিযোগ অভিনেত্রীর বেস্ট ফ্রেন্ড রায়া লাবিবের।
View this post on Instagram
গত ১৬ ডিসেম্বর এই সব কথা জানতে পারে তুনিশা আর এরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পবন আরও জানান, মৃত্য়ুর দিন আলি বাবার শুটিংয়ের ব্রেকে সোজা সিজানের মেকআপ রুমে চলে যান তুনিশা। আত্মহত্যা করার আগে শিজানের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তুনিশা এমনই দাবি করেছেন পবন। তিনি বলেন, এর থেকেই বোঝা যায় সিজান খানের কারণেই মানসিক কষ্টে ছিলেন তুনিশা। আর এর পরই এই অঘটন ঘটে।
View this post on Instagram
তুনিশার শেষকৃত্যের পর আবেগতাড়িত পবন শর্মার দাবি তুনিশার মৃত্যুর ঘটনায় লাভ জিহাদের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত পুলিশের। এটা আদৌ আত্মহত্যা কী না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পবন শর্মা। তিনি বলেন, এটি ১০০ শতাংশ লাভ জিহাদের ঘটনা বলে আমার মনে হয়। তবে আমি চাই পুলিশ গোটা বিষয়টি ভাল করে তদন্ত করে সত্যিটা খুঁজে বার করুক।
মেয়েকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তুনিশার প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড ও সহ অভিনেতা সিজান খানের বিরুদ্ধে মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করেন তুনিশার মা।
তুনিশার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অভিনেতা সিজান খানকে। সোমবার আদালতে তোলা হলে তাঁকে ৪দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
জানা গেছে, পুলিশের জেরায় দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থাকার পর শেষমেশ ভেঙে পড়েন সিজান, বলেন দিল্লির শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভিন্ন ধর্ম ও বয়সের ব্যবধান বেশি হওয়ায় তুনিশার সঙ্গে ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত নেন। তবে পুলিশি জেরায় সিজান খান এক এক বার এক এক রকম কথা বলছেন বলে জানা গিয়েছে। কোনও বারই ব্রেকআপের সঠিক কারণ জানাতে পারেননি।
গত ২৪ ডিসেম্বর, শনিবার রাতে মহারাষ্ট্রের পলঘর জেলার ভসাই এলাকার একটি শুটিং সেটে মৃত্যু হয় অভিনেত্রীর। সেটের মেকআপ রুম থেকে উদ্ধার হয় তুনিশার ঝুলন্ত দেহ। তাঁকে নামিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁক মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা। তুনিশাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োতে দেখা গেছে তাঁকে কোলে করে সিড়ি চড়ছেন এক ব্যক্তি এবং তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে দেখা যায় সিজান খান ও এক মহিলাকে।
সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সম্ভবনাময় এক জীবন।