কলকাতা: রাজভবন-নবান্ন সংঘাতের আবহেই মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose) বৈঠক করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর (Bratya Basu) সঙ্গে। বৈঠকে হাজির ছিলেন বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও। রাজ্যপাল আগেই উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে রাজযপালকে পাশে বসিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজভবন এবং নবান্ন একসঙ্গে কাজ করবে।
সি ভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হয়ে আসার পর তাঁর সঙ্গে শাসকদলের ভালো সম্পর্কই গড়ে উঠেছিল। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই রাজ্যপাল অত্যন্ত ভালো লোক। আশা করি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আমাদের অসুবিধে হবে না। বাংলা ভাষা শিখতে আগ্রহী রাজ্যপালের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে সরস্বতী পুজোর দিন মুখ্যমন্ত্রী সারাক্ষণ হাজির ছিলেন। সেদিনও তিনি রাজ্যপালের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: Adenovirus: মুখ্যমন্ত্রী-স্বাস্থ্যসচিব বৈঠক, বিকেলে স্বাস্থ্য কর্তাদের নিয়ে বসছেন নারায়ণস্বরূপ নিগম
এর পরই তাল কেটে যায়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার পরই রাজভবন থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়।তাতে রাজ্য সরকারের প্রতি কিছুটা প্রচ্ছন্ন হুমকিও ছিল। গত শনিবার কোচবিহারের দিনহাটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের জনসংযোগ কর্মসূচি ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি তুমুল সংঘর্ষ হয়। মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর হয়। তাঁর উপর হামলাও হয় বলে অভিযোগ। এমনকি গুলি-বোমাও চলে। এই ঘটনার পরই রাতে রাজভবন থেকে কড়া বিবৃতি জারি করে বলা হয়, রাজ্যপাল এই ঘটনার পর নিরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপর এই হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, তাও জানতে চায় রাজভবন।
এতেই আগুনে ঘি পড়ে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ কড়া ভাষায় রাজ্যপালের সমালোচনা করেন। শাসকদলের দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে রাজ্যপালকে বিজেপির এজেন্ট বলেও কটাক্ষ করা হয়। অভিযোগ তোলা হয়, এই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ভূমিকাতেই নেমেছেন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও।
এই সংঘাতের আবহেই মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপাল সরকারি ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠক করেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন প্রমুখ। পরে রাজ্যপালকে পাশে বসিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকও করেন। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সংঘাতের প্রসঙ্গও ওঠে।
ব্রাত্য বলেন, আমি মাসখানেক আগেও এখানে উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকের পর বার্তা দিয়েছিলাম, যা হয়েছে অতীত। নবান্নর সঙ্গে রাজভবন হাত মিলিয়ে কাজ করবে। আজও তাই বলছি। যতই উস্কানি থাক, যে যা বলুক, আমরা মাসখানেক আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করছি। মুখ্যমন্ত্রী চান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ঠিকমতো চলুক।
ব্রাত্য জানান, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সার্চ কমিটি গড়া হবে। যে উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা চলছিল, তাঁদের তিন মাসের এক্সটেনশন দিয়েছেন রাজ্যপাল। ব্রাত্য বলেন, আমাদের দল খোলামেলা। অনেকে অনেক কথা বলেন। কে কী বলেছে, আমি জানি না। রাজভবন এবং নবান্ন এক সঙ্গেই কাজ করবে।