কলকাতা : নটী বিনোদিনীর (Noti Binodini) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মঞ্চ ও ছবির দুনিয়ায় নতুন নতুন কাজ হয়ে চলেছে তাঁকে নিয়ে। কেউ মঞ্চে, কেউ আবার ছবির পর্দায় তাঁকে প্রকাশ্যে আনছেন। বাংলাতে তিনটি ছবি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক তৈরি হচ্ছে। অবন্তী চক্রবর্তীর নাটক ‘বিনোদিনী অপেরা’য় নটী চরিত্রে অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty)। আর প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো বিনোদিনী দাসীর প্রতি সকলের এই শ্রদ্ধার্ঘ্যের ভিড়েও তাঁকে অবহেলার ছবিটাও প্রকাশ্যে আনলেন তিনিই। নিজের ফেসবুক (Facebook) পোস্টে একটি ছবি পোস্ট করেছেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী।যা একটি নামফলকের। নটী বিনোদিনীর চিরাচরিত ছবি নাম লেখা একটি ফলক।উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলের কাছে সেই ফলকটি আজ অতি বিবর্ণ ও অবহেলিত।যা দেখে সুদীপ্তা প্রশ্ন তুলেছেন ‘‘আমরা কি সত্যিই আত্মবিস্মৃত জাতি নই??’’ বাংলা সংস্কৃতি জগতে নটী বিনোদিনীকে নিয়ে আলোচনা, গবেষণা, কাজকর্ম অবশ্য নতুন কিছু নয়। তা চলছেই বহুদিন ধরেই। আজও যে ‘বিনোদিনী দাসী’ কতটা প্রাসঙ্গিক, তা বারবার ফিরে দেখেছেন বিনোদন জগতের মানুষজন। যেমন বিনোদিনীকে থিয়েটারের মঞ্চে এনেছেন পরিচালক অবন্তী চক্রবর্তী। তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সেসময়কার তীব্র পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক পরিবেশের মধ্যে নটীর উঠে আসা এবং সাফল্যলাভ।
অবন্তীর কথায়, ‘‘নটী মারা যাওয়ার ৫০০ বছর পরেও যদি বাংলা থিয়েটার থাকে তাহলে উনিও প্রাসঙ্গিক থাকবেন। ওনার অভিনয়, কনট্রিবিউশন ছাড়াও বলা দরকার উনি যে পিতৃতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে কাজ করেছিলেন, যে রকম সামাজিকভাবে ব্রাত্য থাকা অবস্থাতেও মঞ্চের কাজে সফল হয়েছিলেন সেটা তুলনাহীন। তাও মাত্র উনি ১১ বছর কাজ করেছেন।’’ আর অবন্তীর ‘বিনোদিনী’ সুদীপ্তা চক্রবর্তী।নটী বিনোদিনীর প্রতি এত এত মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধার প্রতিফলনের মাঝে কিন্তু অবহেলার ছবিটাও চাপা নেই। নিজের ফেসবুকে সেই অবহেলার ছবিটাই তুলে ধরেছেন সুদীপ্তা।
হোয়াটস অ্যাপে তাঁর এক শিক্ষিকার সূত্রে পাওয়া সেই ছবিকে সামনে এনে সুদীপ্তা লিখেছেন, “বিধান সরণিতে হাতিবাগানে KMC অফিসের উলটোদিকে স্টার থিয়েটার থেকে কয়েক মিটার দূরে বড় অনাদরে পড়ে আছে নটী বিনোদিনীর নামে এই ফলক। Does she deserve this? আমরা কি সত্যিই আত্মবিস্মৃত জাতি নই??”সত্যি, বাংলার সংস্কৃতি জগতের এহেন এক তারকার সামান্য একটি নামফলক গড়েও তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এটা কি নিছকই উদাসীনতা? নাকি ভুলে যাওয়া, ভুলিয়ে দেওয়ার ছল? প্রশ্ন তো উঠছেই। উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব বোধহয় সংস্কৃতি নিয়ে বড়াই করা আত্মবিস্মৃত বাঙালি জাতির।