ভারত–২ কিরঘিস্থান–০
(সন্দেশ ঝিঙ্গন, সুনীল ছেত্রী–পেনাল্টি)
প্রত্যাশামতোই ত্রিদেশীয় ফ্রেন্ডলি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। মঙ্গলবার ইম্ফলের খুমান লাম্পোক স্টেডিয়ামে ভারত পরিষ্কার দু গোলে হারিয়ে দিল কিরঘিস্থানকে, যারা ফিফা র্যাংকিংয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু ৯৪ নম্বরে থাকা কিরঘিস্থানের বিরুদ্ধে ১০৬ নম্বরে থাকা ভারত শুরু থেকেই যে দাপট নিয়ে খেলা শুরু করল এবং শেষ পর্যন্ত সেই দাপটটা বজায় রেখে যোগ্য দল হিসেবেই ম্যাচ এবং টুর্নামেন্ট জিতল। ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ৮৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলের দ্বিতীয় গোলটি করলেন। এটি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর ৮৪ নম্বর গোল। খুব বেশি দিন আর দেশের হয়ে হয়তো খেলবেন না ৩৮ বছর বয়সী সুনীল। কিন্তু এ বছর বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট খেলবে ভারত। জুন মাসে বেঙ্গালুরুতে সাফ কাপের পর ইন্টার কন্টিনেন্টাল টুর্নামেন্ট আছে। তার পর কিংস কাপ এবং মারডেকা টুর্নামেন্টেও খেলবে ভারত। তারপর নতুন বছরের শুরুতে আছে কাতারে এশিয়ান কাপ। নিয়মিত গোলের মধ্যে থাকা এবং পরিণত বয়সেও গোলের ক্ষুধা বজায় রাখা সুনীল শেষ পর্যন্ত কোথায় থামেন তাই এখন দেখার। তবে এদিনের ম্যচের সেরা হলেন লেফট ব্যাক আকাশ মিশ্র। হায়দরাবাদ এফ সি-র এই ডিফেন্ডার চোট পেয়ে ম্যাচ শেষের কিছুক্ষণ আগে বসে গেলেও বাকি সময়টা তিনি যা খেলেছেন তাতে তাঁর ম্যাচের সেরা হওয়া নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
গত বাইশে মার্চ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভারত ১-০ গোলে হারিয়েছিল মায়ানমারকে। তার পর কিরঘিস্থান কিন্তু হারাতে পারেনি মায়ানমারকে। তাই মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ভারতের ড্র করলেই হত। কিন্তু ভারত জেতবার জন্যই মাঠে নেমেছিল। ভারতের খেলাকে এদিন নেতৃত্ব দিলেন দশ নম্বর জার্সিধারী গোয়ার ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ। দলের আক্রমণকে সচল রাখাই শুধু নয়, তাঁর দুর্দান্ত ফ্রি কিকগুলোতে গোলের গন্ধ ছিল। শুরুতেই বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর ফ্রি কিক গোলে ঢোকার মুখে ফিস্ট করে বাঁচান কিরঘির গোলকিপার। কিন্তু ৩৪ মিনিটে আবার ব্রেন্ডনের ফ্রি কিক সবার অলক্ষ্যে থাকা সন্দেশ ঝিঙ্গন আলতো পুশে যখন বল রাখলেন তখন তা ওই গোলকিপারের হাতে-পায়ে লেগে গোলে ঢুকে গেল। ব্রেন্ডনকে কেন ৫৫ মিনিটে স্টিমাক তুলে নিলেন তা তিনিই জানেন। তবে তাঁর পরিবর্ত মণিপুরের ভূমিপুত্র নাওরম মহেশ সিং নামাতে ভারতের বামপ্রান্তিক আক্রমণ আরও জোরদার হয়। এবং ওই মহেশকে ৮৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে ফেলে দিলেন কিরঘির ডিফেন্ডার। নিশ্চিত পেনাল্টি। এবং তা থেকে গোল করতে ভুল করেননি সুনীল।
আই এস এল-এর পরে পরেই এই টুর্নামেন্ট বলে মায়ানমার ম্যাচ স্টিমাক প্রথম একাদশের প্লেয়ারদের বিশ্রাম দিয়েছিলেন। এদিন কিন্তু ভারতের সেরা প্লেয়াররাই খেলেন। গোলে গুরপ্রীত সিং, চার ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, আনোয়ার আলি এবং আকাশ মিশ্র। তিন মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা, সুরেশ এবং জিকসন সিং। সামনে ছাংতে সুনীল এবং ব্রেন্ডন। তবে কিরঘিস্থান হারলেও তারা কিন্তু আক্রমণ করতে ছাড়েনি। এবং তাদের সামাল দিতে ভারতের ডিফেন্ডাররা প্রায়শই ঝামেলায় পড়েন। বিশৈষ করে প্রীতম কোটাল। সারা আই এস এল-টা সেন্টার ব্যকে খেলার পর এদিন রাইট ব্যাকে শুরুর দিকে তিনি খাবি খাচ্ছিলেন। একবার হলুদ কার্ডও দেখলেন বেমক্কা ট্যাকল করার জন্য। কিন্তু সন্দেশ এবং আনোয়ার দুর্দান্ত খেলায় প্রীতমের ভুলচুকগুলো কোনও সমস্যার সৃষ্টি করেনি। আর লেফট ব্যাকে আকাশ তো ছিলেনই। আর এদের সবার পিছনে ছিলেন গুরপ্রীত। বিশাল কাইথ যতই আই এস এল-এর সেরা গোলকিপার হোন না কেন, দেশের এক নম্বর গোলকিপার কিন্তু গুরপ্রীত সিং। স্টিমাক যোগ্য লোককেই তিন কাঠির নীচে দাঁড় করাচ্ছেন।
অতএব বেশ ভালভাবেই ভারত উতরে গেল দুটো ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। এর পর আবার জুন মাসে সাফ কাপ বেঙ্গালুরুতে। এই টুর্নামেন্টে ভারত আট বারের চ্যাম্পিয়ন। নবম বার তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।