কলকাতা: হাইকোর্ট ও পুলিশের নির্দেশ ছিল হনুমান জয়ন্তীর (Hanuman Jayanti) মিছিলে (Procession) কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, বড় জমায়েত করা যাবে না। কিন্তু বৃহস্পতিবার দেখা গেল অন্য ছবি। আদালতের (Court) নির্দেশকে উপেক্ষা করে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার বেশকিছু জায়গায় মিছিলকারীদের অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে। মিছিলের আগে পিছে পুলিষ থাকলেও অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি কোনও অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। আবার বেশ কিছু এলাকায় তরোয়াল নিয়ে খেলতেও দেখা গিয়েছে মিছিলকারীদের।
আদালতের নির্দেশ মেনেই রাজ্য সরকার এদিন ৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী (Central Force) মজুত রেখেছিল রাস্তায়। কলকাতা, হুগলি এবং ব্যারাকপুরের জন্য সেই বাহিনি রাখা ছিল রাম নবমীর মিছিল থেকে শিক্ষা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার কড়া পুলিশি নজরদারি চালিয়েছিল। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য কোনও জেলা থেকে হনুমান জয়ন্তীকে ঘিরে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনার খবর মেলেনি। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বুধবার রাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন। আগামিকাল বাংলায় নতুন সূর্যোদয়ের দেখা মিলবে। হনুমান জয়ন্তীকে কেন্দ্র করে কোনও গোলমাল না হওয়ায় রাজ্য প্রশাসনও দিনের শেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। দুদিন আগে মেদিনীপুর সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার গোলমাল হতে পারে বলে।
এদিন সকালে বেলুড় থেকে হনুমান জয়ন্তীর একটি শোভাযাত্রা বের হয়। ওই শোভায়াত্রায় শামিল হন অসংখ্য মানুষজন। বেলুড় থেকে জিটি রোড ধরে শোভাযাত্রা কলকাতার দিকে আসে। বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল, রাজ্য বিজেপির সম্পাদক উমেশ রাইয়ের নেতৃত্বে ওই মিছিলে ব্যাপক ভি়ড় লক্ষ্য করা গিয়েছে।
হাওড়া গুলমোহর ময়দান থেকেও হনুমান জয়ন্তীর বিশাল মিছিল বেরিয়েছিল। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে প্রচুর মানুষ মিছিলে যোগ দেন। প্রশ্ন ওঠে, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মিছিলে এত লোক জড়ো হল কীভাবে? হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে এই মিছিলের আয়োজন করা নিয়ে ফের পুলিশের সঙ্গেও এদিন উদ্যোক্তাদের বিরোধ বাধে। ওই মিছিলের প্রধান উদ্যোক্তা বিজেপি নেতা উমেশ রায়ই বলেন, আমরা প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে মানুষকে জানিয়েছিলাম বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা ছটা অবধি মিছিল হবে। কিন্তু পুলিশ আজকে জোর করে আমাদের বলছে বিকেল তিনটে থেকে পাঁচটার মধ্যে মিছিল শেষ করতে হবে। আমাদের পুলিশের কাছে একটাই দাবি কেন পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী আমরা মিছিল করব?
আরও পড়ুন:Fourth Pillar | বিজেপির ৪৪-এ পা, মোদিজির ভাষণ
এদিন বাঁশবেড়িয়ায় হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে বিশাল এক শোভাযাত্রা বের হয়। হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে পুজোর আয়োজন। কোনও রকম বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন ছিল পুলিশ, রাফ। ওই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ যেতে বাধা দিলে লকেট দলবল নিয়ে রাস্তায়ই বসেও পড়েন। সেখানে হনুমান চালিশা পাঠ করেন বিজেপি নেতানেত্রীরা।
সকালে নন্দীগ্রামে হনুমান জয়ন্তী শোভাযাত্রায় যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিকেলে তিনি হাওড়াতেও শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তাঁর দাবি, আদালত এই সরকারের উপর ভরসা রাখতে পারেনি বলেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার র্নিদেশ দিয়েছিল। শুভেন্দু গতকালই পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন। এদিন প্রায় সব জেলাতে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে শোভাযাত্রা হয়। তবে আদালত ও পুলিশের কড়াকড়ির কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা হনুমান জয়ন্তী নিয়ে সেভাবে মাতামাতি করেননি।