শিশু চোখ মেলিল আর ওমনি তাহার মনে হাজারো লক্ষ প্রশ্নের উদয় হইল। হ্যাঁ এমনটাই হয়, তার কারণ মায়ের পেটে ১০ মাসের বেশি সময় কেটে গেছে, এক অদ্ভুত আলো আঁধারিতে, সেখানে তেমন স্পষ্ট তো কিছুই নেই। আগে ছিল মায়ের হৃৎপিণ্ডের শব্দ এখন তার সঙ্গে নিজের হৃৎপিণ্ডের লাবডুব লাবডুব শব্দ, সে শোনে। আপাতত মায়ের শরীরজাত রসে তার পুষ্টি, এক হাল্কা আলো অন্ধকার আর অচানক কিছু শব্দের মধ্যে দুটো হৃদয় বেজে চলা। কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে, চারিধারে তীব্র আলো, রং, নানান শব্দ, কিন্তু সেই ক্রমাগত বাজতে থাকা লাবডুব লাবডুব আর নেই। কিন্তু জুড়েছে নতুন আরেক ইন্দ্রীয়, সে এখন গন্ধ পায়, সবচেয়ে কাছের গন্ধটা তার বেশ চেনা, বড্ড পুরনো। আর ক’দিন পর থেকে সে চোখ মেলে তাকায় আর অবাক হয়ে যায়, কত কিছু তার চার পাশে, আকার, অবয়ব ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে। এবং ঠিক এই সময় তার মস্তিষ্ক কাজ শুরু করে, কত প্রশ্নের জন্ম হয়, কত শত প্রশ্ন, নির্বোধ এক শিশু তার প্রশ্নের ভেতর দিয়ে তার বোধকে খোঁজার চেষ্টা করে। আমাদের বিরোধী দলনেতা ঠিক তেমনিই এক আপাত নির্বোধ, এক গাঢ় অজ্ঞানতার অন্ধকারে তিনি নিমজ্জমান ছিলেন। সেই অন্ধকার থেকে উঠেই তাঁর মনের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে হাজারো প্রশ্ন, তিনি প্রশ্ন করছেন, অবিরাম আবাল সেসব প্রশ্নের উত্তরও চাইছেন। ঠিক এক আবাল শিশু যেন। এটা কী? জল। জল কী? জল খায়। কেন খায়? তেষ্টা পায়, তাই খায়। তেষ্টা কী? এইভাবে চলতে থাকে প্রশ্ন, আমাদের কাঁথির খোকাবাবুও তেমন প্রশ্ন করেই চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী কোথায় গিয়েছেন? কেন গিয়েছেন? সঙ্গে কে কে গিয়েছে? হোটেলের ভাড়া কত? হোটেলে কী কী খেলেন? হোটেল থেকে কোথায় গেলেন? প্রচুর এমন প্রশ্নের পরে বড়রা অনেক সময় বলে থাকেন, তুমি যখন বড় হবে, তখন বুঝবে অফিস কাকে বলে। তেমনই আমার বলতে ইচ্ছে করছে ও খোকাবাবু, আপনি যখন মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তখন এসব বুঝতে পারবেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। কিন্তু তারপরেই ভাবি, উনি কি কখনও মুখ্যমন্ত্রী হবেন? হতে পারবেন? আগামী লোকসভা নির্বাচনের পরেই কি ওঁর রাজনীতি ছেড়ে নামগান নিয়ে দিন কাটানোর তীব্র ইচ্ছে জন্ম নেবে না? সেসব কথা থাক, আপাতত তাঁর প্রশ্ন নিয়েই আলোচনা, সেটাই বিষয় আজকে, কাঁথির খোকাবাবুর মনে অনেক প্রশ্ন জমেছে।
বৎসরান্তে একবার করে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিদেশে পুঁজি আনতে যান তেমন নয়, হ্যাঁ বছর পাঁচ আগে থেকে বেশ ঘটা করে শিল্প মেলা ইত্যাদি হচ্ছে। এমন বলার কোনও সুযোগ নেই যে সে সব মেলায় ভূরি ভূরি বিনিয়োগ এসছে, আবার এমনও নয় যে সবটাই ফক্কিকারি, কিছুই হয়নি। আমাদের রাজ্যের সার্ভিস সেক্টর বাড়ছে, আইটি সেক্টরে কিছু নতুন পুঁজি এসেছে, পর্যটন শিল্পে কিছু কাজ হচ্ছে কিন্তু এক বিরাট মোড় ঘোরানো কোনও বিনিয়োগ এখনও আসেনি, এটাও সত্যি। আসলে রাজ্য রাজধানীর কাছাকাছি জমিতে মূলত চাষবাসই এখনও মানুষের মূল জীবিকা, সেই চাষের জমি কেড়ে শিল্প আনার মতো আহাম্মক সিদ্ধান্ত আপাতত কোনও রাজনৈতিক দলই নেবে না, তৃণমূল তো নয়ই। তো বহুদিন পরে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছেন বিদেশে, শিল্প নিয়ে কিছু আলাপ আলোচনা হবে। এক্কেবারে হোম ওয়ার্ক ছাড়াই হঠাৎ স্পেনে গিয়েছেন এমন ভাবার তো কোনও কারণ নেই। কিন্তু আমাদের বিরোধী দলনেতা তাঁর টেনিওরে এমন এক বিদেশ ভ্রমণের খবরে ক্ষিপ্ত, তিনি খরচ খরচার পাইপয়সার হিসেব চেয়েছেন। পেয়েও যাবেন, সরকারি সফর বলে কথা, প্রতিটি পাইপয়সার হিসেব থাকবে বই কী।
আরও পড়ুন: Aajke | কেরলে সিপিএম পরিচালিত কারুভান্নুর সমবায় ব্যাঙ্কে ইডি হানা
কিন্তু সে হিসেব দিয়ে কোন হিসেব মেলাবেন কাঁথির খোকাবাবু? তার পাল্টা হিসেবগুলোর কথা ভেবেছেন? এই সাড়ে ন’ বছরে প্যান্ডেমিকের দু’ বছর বাদ দিলেও যে পরিমাণ ভ্রমণ আপনার নেতা করেছেন, তার হিসেবের সামনে কোনও তথ্যই কি দাঁড় করানো যাবে? এই পরিব্রাজক নেতাটি এখন আস্ত একটা প্লেন ব্যবহার করেন বিদেশ ভ্রমণের জন্য, সেটা জানা আছে? এবং এই দেশভ্রমণের নিট ফল? দেশের ভূ-ভাগের দখল নিয়ে বসে আছে চীনা বাহিনী, এখনও ধারাবাহিকভাবে উগ্রপন্থী আক্রমণ জারি আছে, মৃত্যু মিছিল কমেনি। নতুন উপদ্রব খালিস্তানিরা মাথা চাড়া দিচ্ছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাতে। সেখানে আমাদের এমব্যাসি আক্রান্ত হচ্ছে, জাতীয় পতাকা নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উত্তর কোরিয়া, চীন আর রাশিয়া এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করছে। সব মিলিয়ে বিশ্বগুরু বিশ্বগুরু বলে তাল ঠুকলেও আমেরিকার জো বাইডেন প্রথম সুযোগেই মোদিজিকে গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ পড়িয়ে দিচ্ছেন। সেই পরিব্রাজক প্রধানমন্ত্রীর আপাতত ভক্ত হিসেবে কাঁথির খোকাবাবু গত ১০ বছরে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণের হিসেব চাইছেন চান, গণতান্ত্রিক দেশে তা চাওয়ার মধ্যে অন্যায়ও কিছু নেই, কিন্তু এক নির্বোধ শিশুর সারল্য বা আবালপনা আছে, যা হাস্যকর। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাড়ে সাত বছরে ৬৯টা দেশ ভ্রমণ করা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর একটা ভ্রমণের হিসেব না চেয়ে, গত ১৫ বছরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণের হিসেব চেয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, এটাকে কি শিশুসুলভ আচরণ বলব নাকি হিংসুটেপনা? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
আরটিআই করে সরকার ফেলা যায় না, খোল করতাল বাজিয়ে হনুমান পুজো করেও নয়। কাঁথির খোকাবাবু, আপনি তো দেখেছেন সেই ঝোড়ো দিনগুলো, এখন বিভিন্ন কথায় বার্তায় সেদিনেও আপনার গোপনে বিশ্বাসঘাতকতার বিভিন্ন কথা উঠে আসছে। তা থাক, আপনি বরং ভালো করে আপনার সেই দিনগুলোয় নেত্রীর ডায়রিটা দেখুন। সামান্যতম ইস্যুতে মানুষের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়া নেত্রীর কৃপায় মন্ত্রী হলেন, কিন্তু খেয়ালই করলেন না একটা সরকারের বিরোধিতা কোন স্পিরিট নিয়ে করা যায়, কতটা লড়াই করতে হয়, কতটা রাস্তায় থাকতে হয়। সেসব করার মুরোদ নেই জানি, কিন্তু সেটা ছাড়া সরকার বদলানো যায় না, হিসেব চেয়ে আরটিআই করে কাল খবরের কাগজে খানিক জায়গা পাবেন, তার থেকে বেশি কিছু হবে না।
