Monday, June 30, 2025
Homeআন্তর্জাতিকমোদি সরকারের বিদেশনীতি চূড়ান্ত ব্যর্থ, আফগানিস্তানের দখল নিচ্ছে তালিবান

মোদি সরকারের বিদেশনীতি চূড়ান্ত ব্যর্থ, আফগানিস্তানের দখল নিচ্ছে তালিবান

Follow Us :

কলকাতা: এই মুহূর্ত পর্যন্ত যে খবর আসছে তাতে বোঝা যায় আফগানিস্তানে সরকার পড়ে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে৷ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী-সহ ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফিরতে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে৷ পৃথিবীর নানা দেশের নাগরিকরাও যত দ্রুত সম্ভব ছাড়ছেন আফগান মাটি৷ পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন সে দেশটি পুরোপুরি তালিবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া এখন কেবলমাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা৷ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে এমন বিদ্যুৎ গতিতে সেদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে যেতে পারে এটা কি ভেবেছিল ভারত? এদেশের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিদেশ সচিব তথা বিদেশমন্ত্রকের বড় বড় কর্তাদের মাসখানেক আগের হাবভাবে এর কোনও ইঙ্গিত কেউ পায়নি৷ ভারতের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের রাজনীতিতে এমন মৌলবাদী পরিবর্তন প্রায় নীরব দর্শকের মত দেখা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে আর কখনও হয়েছে কিনা কেউ মনে করতে পারছে না৷

মধ্যবয়স্ক তথা বৃদ্ধদের মনে পড়বে বাংলাদেশ যুদ্ধের কথা৷ ১৯৭০-৭১ সালে, যখন সে দেশকে প্লাবিত করে দেয় পাকিস্তান বাহিনী, এদেশের তৎকালীন সরকার কিন্তু মুখ বুজে বসে থাকেনি৷ সেসময়ে পূর্ব পাকিস্তানে ক্রমশই বেড়ে ওঠা মুক্তি সংগ্রামের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত সরকার৷ শেষ পর্যন্ত ১৯৭১-এ ভারতীয় সেনাবাহিনী সরাসরি ঢুকেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে৷ ওই বছর ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল এক লক্ষ পাকিস্তানি সেনা৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হয়ে উঠেছিলেন এশিয়ার মুক্তি সূর্য৷ সেদিনের সঙ্গে আজকের ভারত সরকারের কতই না ফারাক৷ চোখের সামনে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক দাবালন জ্বলছে আর মোদি-শাহের মুখে কুলুপ৷ ভারতের বিদেশনীতি এই ভগ্নস্তূপ যে দেখতে হবে সেটা কল্পনা করা যেত না কয়েকবছর আগে৷

ভারত স্বাধীন হওয়ার তিন দশক আগে থেকে আফগানিস্তান ব্রিটিশ কবল-মুক্ত হয়েছিল৷ ১৯২০-২১ সালে যুদ্ধে হেরে ব্রিটিশরা আফগানিস্তান থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল৷ সেদেশে গড়ে উঠেছিল নিজস্ব সরকার৷ কিন্তু আফগানিস্তানে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, খাদ, ভয়ঙ্কর সুন্দর উচ্ছল নদী আর হাজার হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসে লাগাতার চলেছে ভাঙা-গড়া৷ গত শতকের মাঝামাঝিও সেই ভাঙা-গড়ার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়েছিল৷ সেসময়ে ঠান্ডা যুদ্ধের পরিবেশে সোভিয়েতকে কোণঠাসা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমী দেশগুলি মদত দিয়েছিল মুসলিম মৌলবাদী শক্তি মুজাহিদিনকে৷ ১৯৭৮ সালে আফগানিস্তানের তৎকালীন শাসক দাউদ খানকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করা হয়, আফগানিস্তানের দখল নেয় কর্ণেল আব্দুল কাদিরের নেতৃত্বাধীন আর্মড ফোর্সেস রেভিউলুশনারি কাউন্সিল৷ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নুর মহম্মদ তারাকি৷ এই তারাকি সেসময়ের কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আফগানিস্তানের মৈত্রীকে দৃঢ় করেছিলেন৷ তারাকিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে মার্কিন-ব্রিটিশ মদতপুষ্ট মুজাহিদিনরা (ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী) বিদ্রোহ করে৷ এই বিদ্রোহ ঠেকাতে সোভিয়েত সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের সরকারকে মদত দিয়েছিল৷

পরবর্তীকালে ১৯৭৯ সালে তারাকি খুন হয়ে যান৷ এবং তাঁরই সরকারের বিদেশমন্ত্রী হাফিজুল্লা আমিন ক্ষমতা দখল করেন৷ হাফিজুল্লা আমিনকেও অল্পদিনের মধ্যে খুন হয়ে যেতে হয় এবং বাবরাক কামাল ক্ষমতায় বসেন৷ এই সময় থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-সহ পশ্চিমি শক্তি মুজাহিদিনকে সবরকম সমর্থন টাকা পয়সা জোগানো, অস্ত্র সরবরাহ করা শুরু করে৷ পাকিস্তান, ইরান প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশগুলিতে মুজাহিদিনরা ঘাঁটি গাড়ে এবং সোভিয়েতপন্থী সরকারের উপর হামলা চালাতে থাকে৷ এই পরিস্থিতিটা চলতে থাকে প্রায় এক দশক জুড়ে৷ ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরে যায়৷ পাঠকের হয়তো মনে পড়বে ১৯৮৯ সালে খোদ রাশিয়ার অভ্যন্তরে চলছে যুগান্তকারী পরিবর্তন৷ ভেঙে পড়ছে কমিউনিস্ট শাসন৷ তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচকের হাত ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে বয়ে যাচ্ছে উদারবাদী মুক্তির তাজা বাতাস৷

সে যাই হোক আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর শেষ সোভিয়েতপন্থী আফগান রাষ্ট্রনেতা নাজিবুল্লাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে মুজাহিদিনরা৷ তীব্র লড়াই চলতে থাকে প্রায় দু’বছর৷ অবশেষে নাজিবুল্লা যুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে পড়েন এবং তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করে ইসলামি মৌলবাদীরা৷ আফগান মাটিকে সোভিয়েত মুক্ত করার এই পশ্চিমি প্রকল্পটি এভাবে সাফল্যের মুখ দেখেছিল৷ কিন্তু সোভিয়েতের হাত থেকে আফগান মাটিকে বের করে আনার মূল্য হিসাবে দিতে হয়েছিল মৌলবাদীদের অবাধ বাড়বাড়ন্তকে মেনে নেওয়ার লাইসেন্স৷ এই মুজাহিদিনরাই সোভিয়েত পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিজেদের তালিবান হিসেবে পুনঃসংগঠিত করে৷ কিন্তু তালিবানরা মার্কিনিদের খবরদারি বেশিদিন সহ্য করেনি৷ নিজেদের মত করে আফগানিস্তান চালানোর ব্যাপারে তারা ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ নিজেদের মত করে বলতে মধ্যযুগীয় বর্বরতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা৷ যেমন, মহিলাদের শিক্ষা, বাড়ির বাইরে কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া মহিলাদের বাড়ির বাইরে বেরনো নিষিদ্ধ করা, এক বিশেষ ধরনের অত্যন্ত গোঁড়ামিপূর্ণ মত ছাড়া অন্য ধর্মমতকে গ্রাহ্য না করা, মূর্তি গড়া তথা শিল্পকর্ম এবং আধুনিক শিল্পের তীব্র বিরোধিতা করা ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এমনকী হাজার হাজার বছর পুরনো ভাস্কর্য কামান দেগে উড়িয়ে দেয়৷ যেমন বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি৷ পশ্চিমি সভ্যতার গণতন্ত্রকামী, আধুনিকতাবাদি মনোভাব তালিবানিরা সহ্য করতে পারেনি৷ এরই পরিণতিতে আমেরিকার সঙ্গে আফগানের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসা তালিবানদের বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে৷ ১৯৯৫-৯৬ সাল নাগাদ এক সুদর্শন, শ্মশ্রু-গুম্ফ ধারী দীর্ঘদেহী যুবক আফগান-তালিবানদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন৷ এই মানুষটির নাম ওসামা বিন লাদেন৷

 

বছর পাঁচেক পরে ২০০১ সালে লাদেনের অনুগামীরা কয়েকটি উড়ন্ত বিমান দখল করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন মাটিতে এটাই ছিল বৃহত্তম হামলার ঘটনা৷ এই সময় থেকে আফগান রাজনীতি এক নয়া পর্বে প্রবেশ করে৷ সেটা ছিল সরাসরি মার্কিন সেনাদের আফগান মাটিতে ঘাঁটি গাড়া এবং আফগানিস্তান জুড়ে তালিবান বনাম মার্কিন সেনার তথা মার্কিন মদতপুষ্ট আফগান সরকারের সেনাদের সংঘর্ষ৷ এই সংঘর্ষে তালিবানিরা প্রায় ১৫ বছর তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি৷ কিন্তু ২০১৪-১৫ সাল থেকে পরিস্থিতির মধ্যে ধীর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়৷ কাকতালীয় হলেও এই সময়েই ভারতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখল করে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি৷ তালিবানদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় প্রতিদিন মৃত মার্কিন সেনাদের কফিন উড়ে যেত নানা মার্কিন গ্রাম শহরে৷ একটানা এই মৃত্যু মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে জনমত তৈরি করেছিল আফগান মাটি থেকে সেনাবাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার সপক্ষে৷ মার্কিন-ব্রিটিশ সেনা আফগান মাটি ছাড়লে যে একটা শূন্যতা তৈরি হবে তা বুঝতে বড় বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পরে না৷ কিন্তু মোদি সরকার সে ব্যাপারে কিছুই করতে পারেনি৷ এর প্রধান কারণ হল, ভারতে এই হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির নৈতিক প্রভাব ছিল না আফগান জনগণের উপর৷ অনেকেই মনে করেন এই পর্বে যদি কংগ্রেস ভারত সরকারের নেতৃত্বে থাকত তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরি না-ও হতে পারত৷ হয়তো সেক্ষেত্রে আফগান রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব অনেক বেশি হতে পারত৷

কেবলমাত্র আফগানিস্তান নয়, এই দেশটির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ ছাপ ফেলবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে৷ ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, রাশিয়া এই সবগুলি দেশকেই ভাবতে হবে নতুন করে৷ নয়া চিন্তার দরকার হবে পশ্চিমি শক্তিগুলিরও৷ আফগানিস্তানের রাজনীতিতে বহির্দেশীয় হস্তক্ষেপ ব্যর্থতায় ডুবে গেছে বারবার৷ গণতন্ত্র বা প্রগতি কোনও কিছুর নামেই বাইরের হস্তক্ষেপ আফগানিস্তান যে মানবে না তা স্পষ্ট৷ মনে করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামি মৌলবাদী শক্তির কিছুটা বাড়বাড়ন্ত হতে পারে৷ তার ছাপ পড়তে পারে কাশ্মীর-সহ ভারতের নানা জায়গায়৷ এরকম একটা পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িকতাকে খুঁচিয়ে তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চিন্তা আসতে পারে মোদি-শাহদের মাথায়৷ পরিস্থিতি যথেষ্ট আশঙ্কাজনক৷ ভবিষ্যৎ বেশ ধোঁয়াশা৷ ভারত এখানে সবথেকে নিরাপদ থাকতে পারে একটা নীতি সম্মত রাস্তা অবলম্বন করে৷ তা হল, আফগান রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ না করার নীতি, আর এদেশের অভ্যন্তরে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের নীতি৷ মোদি-শাহ কি এভাবেই ভাবছেন?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | ল' কলেজের সিসিটিভি ছিল মনোজিতের আন্ডারে? দেখুন EXCLUSIVE রিপোর্ট
01:29:30
Video thumbnail
Donald Trump | Iran-Israel | ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ নিয়ে এ কী বললেন ট্রাম্প? দেখুন এই ভিডিও
01:21:16
Video thumbnail
Kasba Incident | BJP | কসবা কাণ্ড নিয়ে কী বলল বিজেপি? দেখুন ভিডিও
01:29:21
Video thumbnail
Madan Mitra | Jayanta Ghosal | মদন মিত্রকে শোকজ তৃণমূলের, কী বললেন জয়ন্ত ঘোষাল?
01:33:06
Video thumbnail
Chirag Paswan | Kasba Incident | কসবাকাণ্ড নিয়ে বি/স্ফো/রক চিরাগ পাসওয়ান, কী বললেন শুনে নিন
01:24:55
Video thumbnail
Madan Mitra | TMC | বিগ ব্রেকিং, কসবা কাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্য, মদন মিত্রকে শোকজ তৃণমূলের
01:33:46
Video thumbnail
Kasba Incident | কসবা ল কলেজে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জাতীয় মহিলা কমিশন, দেখুন ভিডিও
01:58:01
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | মোদির বিদেশ সফরের নির্যাস কী? কী ফল পেল দেশবাসী?
03:20:16
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | Anik Chatterjee | ট্রাম্পের খ্যাপাটেপনায় ভারত কী সমস্যায় পড়বে?
01:19:35
Video thumbnail
Kunal Ghosh | TMC | তৃণমূল ভবনে CCTV ফুটেজ দেখালেন কুণাল, তোলপাড় বাংলার রাজনীতি
02:48:30

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39