মেদিনীপুর : প্রাথমিক শিক্ষক পদের জন্য নিয়ম মেনেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বাম আমলের সেই নিয়োগ প্যানেল থেকে ১১ জনকে বেআইনি ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ । দীর্ঘ ২৪ বছর আইনী লড়াইয়ের পর প্রাথমিক শিক্ষকপদে নিয়োগপত্র পেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বঞ্চিত ওই ১১ জন চাকরীপ্রার্থী। যদিও এত লড়াইয়ের পর তাঁরা চাকরি করবেন মাত্র ৯ মাস। কেউ আবার ১ বছর।
মঙ্গলবারই তাঁরা যোগদান করলেন স্কুলে স্কুলে। তাঁদের বেশিরভাগেরই বয়স ৫০ পেরিয়ে গিয়েছে। কেউ আবার একেবারেই অবসরের দোরগোড়ায়। চাকরির মেয়াদের শেষ মুহুর্তে আদালতের নির্দেশে নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে অনেকেই কেঁদে ফেলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ অফিসেই৷ সোমবার তাঁদের হাতে ফুলের তোড়া নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে মিষ্টি মুখ করান সংসদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শক ৷
১৯৯৬ সাল তথা বামফ্রন্ট আমলে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে যে প্যানেল তৈরি হয়েছিল তাতে অন্যায়ভাবে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন ওই ১১ জন চাকরীপ্রার্থী। এর প্রতিবাদে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ৷ মমলা চলেছে দীর্ঘ ২৪ বছর৷ অবশেষে আদালতে মামলাকারিদের জয়৷ আদালতের নির্দেশ, অভিযোগকারিদের দাবি সত্য, তাই চাকরি দিতে হবে ৷ সেই মতই সোমবার মোট ১১ জন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাকে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ৷
নিয়োগপত্র পাওয়া মেনকা মুণ্ডা বিশইয়ের বয়স বর্তমানে ৫৯ বছর ৩ মাস । সরকারি নিয়মে মাত্র ৯ মাস চাকরী করবেন তিনি। কিন্তু বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়ে জয় ছিনিয়ে আনতে পারার তৃপ্তি ছিল তাঁদের সকলের চোখেমুখে। সবং এর বাসিন্দা মেনকাদেবী বলেন-, ‘গ্রামের মানুষজন ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাকে ‘দিদিমনি’ বলে সম্বোধন করবেন এটাই সবথেকে বড় কথা। এই জয়টার জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছি।’
আরও পড়ুন – জলবন্দি খানাকুলবাসি, অনিশ্চিত স্বাভাবিক জীবন
সদ্য শিক্ষকপদে নিয়োগ হওয়া অশোক কুমার গরাই বলেন,’আমরা সকলেই তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত। আমাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সাধারন প্রার্থীদের একপ্রকার জোর করে নেওয়া হয়েছিল। সেই বিষয়টি নিয়েই উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম। দীর্ঘ ২৪ বছর আইনী লড়াই লড়েছি। অবশেষে জয় এসেছে। নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।’
আরও পড়ুন – পুজোর আগেই বন্যার আশঙ্কায় ভাগীরথী তীরবর্তী বাসিন্দারা
এই বিষয়ে চেয়ারম্যান কিষ্ণেন্দু বিশুই বলেন, ‘বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ওই ১১ জন চাকরীপ্রার্থী বঞ্চিত থেকেছেন। তাঁদের সকলেরই ৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। একজন মাত্র ৯ মাস চাকরী করবেন। বেশীরভাগই ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে অবসর নেবেন। ১১ জনের মধ্যে মাত্র একজনই সর্বাধিক ৯ বছর চাকরী করবেন। মানবিকতার দিক থেকেই তাদের বাড়ীর কাছাকাছি স্কুলে তাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে লড়াইয়ের পর নিয়োগপত্র নিতে আসা চাকরীপ্রার্থীরা মঙ্গলবারের মধ্যে যোগ দিয়েছেন নিজ নিজ বিদ্যালয়ে ৷