Monday, June 30, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : হিন্দু তালিবান

চতুর্থ স্তম্ভ : হিন্দু তালিবান

Follow Us :

তালিবানরা দখল নিয়েছে আফগানিস্তানের, তিনমাস হয়ে গেল। কিছু মানুষজন যারা নাকি আমেরিকার গুপ্তচর, অন্তত তালিবানদের তাই বক্তব্য, তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু সরকারি কর্মচারী, যারা আগের সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত ছিল, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নাকি বিচার হবে। কিন্তু কোনও বিচারের আগেই যাদেরকে বেধড়ক মারা হল, কিছুজনকে তো মেরেই ফেলা হল, তারা কারা? তারা আফগানিস্তানের সাংবাদিক, তাদের অনেকেই এই তালিবানি ফতোয়া না মেনে সত্যি কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তালিবানি শাসনে যা ঘটছে, যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, প্রতিবাদের যে ঢেউ আছড়ে পড়ছে, তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অতএব তারা শত্রু, অতএব তাদের প্রকাশ্যে বা থানায় নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারো, প্রয়োজনে জানে মেরে দাও। এটাই তালিবানি শাসন।

কিন্তু এটা বলার মানে এরকমটা নয় যে, গোটা বিশ্বে কেবল তালিবানরাই এরকমটা করছে, কেবল তালিবানরাই স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের বিরোধী, না এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আফগানিস্তানের বাইরে, তালিবান শাসনের বাইরে এমন অনেক দেশ আছে, এমন অনেক সরকার আছে যারা সাংবাদিক শুনলেই নিজেদেরকে অসুরক্ষিত মনে করে, তারা স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের বিরোধী, তারা পোষা অর্ণব গোস্বামী চায়, তারা প্রশ্নকর্তা হিসেবে অক্ষয় কুমারকে চায়, যে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করবে, আম চুষে খান না চিবিয়ে খান না কেটে খান?

তাকিয়ে দেখুন রাশিয়ার দিকে, পুটিনের স্বৈরাচারী শাসনে সবথেকে বেশি আক্রমণ স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর, তাকিয়ে দেখুন ব্রাজিলের দিকে, সাংবাদিক খুন বা এক্কেবারে উধাও হয়ে যাওয়া সেখানে জলভাত, চীনে তো স্বাধীন গণমাধ্যম বলে কোনও কথাই নেই, কোনও সামরিক জমানায় প্রথম আক্রমণ নামে সংবাদ মাধ্যমের ওপর, ইন্দিরা গান্ধী যেদিন জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন, সেই দিনই প্রেস সেন্সরশিপ চালু হয়েছিল, কাগজের ডামি পাঠাতে হত তথ্যদফতরে, মন্ত্রী আমলারা ঠিক করতো কোন খবর যাবে কোন খবর যাবে না, হিটলারের জার্মানিতেও এরকম দফতর ছিল, যারা খবরের কাগজে কোন খবর যাবে, কোন ছবি ছাপা হবে কেবল তাই নয়, কোন পাতায় ছাপা হবে তাও ঠিক করে দিত। আসলে তালিবান নয়, যে কোনও স্বৈরাচারী শাসনের চেহারাটা একই। সেই প্রেক্ষিতেই আজকের ভারতবর্ষ নিয়ে আজকের আলোচনা।

এমনিতেই মহামান্য মোদিজী আসার পরে, আমাদের দেশের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েছে, ১৮০ টা দেশের মধ্যে ২০২১ সালে ফ্রিডম ইনডেক্সে আমরা ১৪২ তম স্থানে আছি, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এমনকি পাকিস্তানও আমাদের উপরে আছে।
হ্যাঁ আমরা রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো বা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেই আছি, আমরা সেই তালিকাভুক্ত দেশ, যার সম্বন্ধে এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে অ্যা ডেঞ্জারাস কন্ট্রি ফর দ্য জার্নালিস্ট, ট্রায়িং টু ডু দেয়ার জব প্রপারলি, মানে যে সাংবাদিকরা তাদের কাজ ঠিকভাবে করতে চাইছে, তাদের পক্ষে এক সাংঘাতিক দেশ, কারণ এখানে সাংবাদিকদের জানে মেরে ফেলা হয়, জেলে ভরে রাখা হয়, কেবলমাত্র তাদের লেখা ছাপানোর জন্য, বা ছাপানোর আগেই তাদের দেশদ্রোহী বলে জেলে পোরা হতে পারে, হয়।

মাত্র এই ক’দিনের মধ্যে দুটো ঘটনা সামনে এল। প্রথমটা বিহারের, বুদ্ধিনাথ ঝা ওরফে অবিনাশ ঝা, নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক, তার পোড়া মৃতদেহ পাওয়া গেল মধুবনি জেলার হাইওয়ের পাশে, ২২ বছরের এই সাংবাদিক প্রাইভেট ক্লিনিকের নামে যে জোচ্চুরি হচ্ছিল, তাই নিয়ে বেশ কিছু খবর জোগাড় করেছিলেন, কিছু পাবলিশও হয়েছিল। তারপর থেকে শাসানি শুরু হয়, জানে মেরে দেবো ইত্যাদি চলতে থাকে। এরপর এক বিকেলে সে ঘর থেকে বের হবার পরে আর ফিরে আসে না, বাড়ির লোকজন থানায় যায়, এফ আই আর করে। তারও একদিন পরে অচেনা নম্বর থেকে এক ফোন পেয়ে হাইওয়ের ধার থেকে, অবিনাশ ঝা’র পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, তাকে আগে গলা টিপে মারা হয়েছে, তারপর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত, দুজন ক্লিনিকের মালিক ইত্যাদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, ব্যাস। সাত দিন পেরিয়ে গেল, এখনও আসলে কী হয়েছে, তা জানা গেল না।

বিহারে এটাই প্রথম ঘটনা নয়, গত ৯ মাসে ২০ জন রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টিভিস্ট, হয় খুন হয়েছে, না হলে জাস্ট উবে গেছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যায় নি। ২০ জনের একটাই দোষ, তারা কিছু তথ্য জানতে চেয়েছে, মানুষকে জানাতে চেয়েছে। এবং আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ২০ জনের মৃত্যু বা উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একজনও, হ্যাঁ একজনও গ্রেফতার হয়নি, একটা মৃত্যুরও কিনারা হয়নি। দেশের প্রধানমন্ত্রী মাঝে মধ্যেই স্বচ্ছতা, প্রামাণিকতা ইত্যাদির কথা বলেন এবং তিনি খুব ভাল করেই জানেন, কেন ফ্রিডম ইন্ডেক্সে আমরা ১৮০ তে ১৪২, জানেন কিন্তু কেয়ার করেন না, বিদেশের কোন সংগঠন ভারত নিয়ে কী বলল, তাতে ওনার কিছু আসে যায় না, আমরা হাঙ্গার ইন্ডেক্সে পেছনে, ফ্রিডম ইন্ডেক্সে  পেছনে, এসব নাকি পাশ্চাত্যের ধ্যান ধারণা, আমাদের মাপকাঠিতে, মানে আরএসএস-এর মাপকাঠিতে আমাদের দেশে ক্ষুধা বলে কিছুই নেই, গণতন্ত্র আর স্বাধীনতা ঝরে ঝরে পড়ছে।

এবার ত্রিপুরার দিকে চোখ রাখা যাক, সেখানে কদিন আগে কিছু উগ্র হিন্দু সংগঠন, সংখ্যালঘু মানুষজনদের দোকান, উপাসনালয় ইত্যাদি ভাঙচুর করেন। বাংলাদেশে ঘটনা ঘটার প্রায় পরে পরেই। বাংলাদেশে কী হয়েছিল? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তীব্র নিন্দা করেছিলেন, দেশের এক বিরাট অংশের মানুষ, ছাত্র যুব রাস্তায় নেমেছিল, ঢাকায় শাহবাগে মুখরিত হয়েছিল ঐক্যের স্লোগান, মুসলমান মানুষজন রাত জেগে পাহারা দিয়েছিলেন, গ্রেফতার হয়েছিল বেশ কয়েকজন।

ত্রিপুরাতে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটল, দু-চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তো ছেড়েই দিন, উনি তো অরণ্যদেব, নিজে না চাইলে তাঁকে দিয়ে একটা কথাও বলানো যাবে না। আর এ বিষয়ে উনি বলবেনই বা কেন? মুখ্যমন্ত্রীও একটা কথাও বলেন নি। বেশ, এ তো তাঁদের রাজনীতি, স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে খবর করতে গিয়েছিলেন দুই মহিলা সাংবাদিক, স্বর্ণা ঝা এবং সমৃদ্ধি শাকুনিয়া, তারা এইচ ডাবলিউ নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক, তাঁরা ত্রিপুরার এই খবর করতে ওখানে যান, ঘটনাস্থলে যান, সেখানে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন, হোটেলে ফিরে আসার পর পুলিশ আসে, সন্ধ্যে হয়ে গেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে না, মহিলা পুলিশও ছিল না, তাদের জেরা করা হয়, যা করা যায় না। তাদেরকে গ্রেফতার করে তার পরদিন আগরতলায় এনে হাজির করা হয়, কেন জানা নেই, রামনগর এবং আগরতলা, দুটো জায়গাতেই দুটো এফআইআর করা হয়, অভিযোগ এনারা নাকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানোর কাজ করেছেন, পরদিন সি জে এম কোর্টে এনাদেরকে হাজির করা হয়, পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হয়, সাত দিনের পুলিশ কাস্টডি চাওয়া হয়। আদালত জানায় অভিযোগের পক্ষে এতটুকু প্রমাণও দেওয়া হয়নি, যা দিয়ে এই গ্রেফতারিকে আইনি বলা যায়, আদালত দুজনকেই বেল দিয়েছে, কেবল বলেছে যে, পুলিশ চাইলে তাদের জেরা করতেই পারে। শেষ খবর তাঁরা মুম্বাই ফিরে এসেছেন।

কী চায় বিজেপি? প্রথমে তারা মিডিয়া কিনে, এতটুকু প্রতিবাদী যারা তাদের চাকরি যাতে না থাকে তার ব্যবস্থা করল, তৈরি হল নতুন পরিভাষা গোদি মিডিয়া, আম চুষে খায় না চেটে খায় না কেটে খায়, তাদের এটাই প্রশ্ন। তারা প্রশ্নের আগে উত্তর নিজেরাই দিয়ে দেয়, কাজের বিরাট ফিরিস্তি নিজেরাই দেবার পর প্রশ্ন করে, এত কাজ কী করে করেন? এসব হয়ে যাবার পর কিছু লোক, শিরদাঁড়া সোজা করে, ছোট ছোট সংগঠন বানিয়ে সাংবাদিকতার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার শপথ নেয়, বিভিন্ন পোর্টাল তৈরি করে, ইন্টারনেটে সে সব পোর্টালই এখন ভারতবর্ষের প্রকৃত স্বাধীন গণমাধ্যম।

এবার মোদিজীর পরবর্তী পদক্ষেপ, তাদেরকে চুপ করানো, বিনোদ দুয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা, এন ডি টিভির প্রণয় রায়, তাঁর স্ত্রীর নামে মামলা চলছে, মাথাটা নোয়ালেই মামলা তুলে নেওয়া হবে, সিদ্ধার্থ বরদারাজনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, আমাদের কলকাতা টিভি বন্ধ করার নোটিস পাঠানো হয়েছে, মামলা চলছে, অসংখ্য সাংবাদিকদের জেলে পোরা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে, মেরে ফেলা হচ্ছে, তাহলে কেবল তালিবানদের দোষ দেব কেন?
এই হিন্দু তালিবানরা আলাদাটা কোথায়? এরাও মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা মানে না, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়। আর ঠিক এই কথাটাই বলেছেন, কংগ্রেসের প্রবীন নেতা সলমন খুরশিদ, লিবারাল, সেকুলার হিসেবে তিনি পরিচিত, তাঁর বইতে এই কথাগুলো লেখার জন্য, তাঁর ঘরে আগুন দেওয়া হল। না যথারীতি একজনও গ্রেফতার হননি, আমরা তো জানিই দেশের মাথায় একজন বসে আছেন, যাঁর জমানায় একজন মুসলিম সাংসদকে উন্মাদ হিন্দু তালিবানরা, জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছিল, যার বিচার এখনও হয়নি। যদিও আমার স্বদেশ গান্ধীর, বুদ্ধের, নানক, কবীরের দেশ, এখানে সকালে চৈতন্যের নামগানের সঙ্গে অনায়াসে মিশে যায়, ফজরের আজান, সন্ধ্যে আরতি ঘন্টার সঙ্গেই বাজে চার্চের বেল, আমাদের ঐতিহ্যকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে, আমাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিপদে, এখনও যদি না প্রতিবাদ করি, তাহলে প্রতিবাদ শব্দটা থেকেই বা লাভ কি?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | মোদির বিদেশ সফরের নির্যাস কী? কী ফল পেল দেশবাসী?
03:20:16
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | Anik Chatterjee | ট্রাম্পের খ্যাপাটেপনায় ভারত কী সমস্যায় পড়বে?
01:19:35
Video thumbnail
Kunal Ghosh | TMC | তৃণমূল ভবনে CCTV ফুটেজ দেখালেন কুণাল, তোলপাড় বাংলার রাজনীতি
02:48:30
Video thumbnail
India-Pakistan | ফের ভারতের ভয়ে কাঁপছে পাকিস্তান, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:23:25
Video thumbnail
America | China | India | আমেরিকা, চিন, সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাদাগিরি বন্ধ করবে ভারত?
02:31:21
Video thumbnail
Supreme Court | বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়ামে বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ, বি/স্ফো/রক বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত
03:31
Video thumbnail
Stadium Bulletin | এজবাস্টনে বুমরা নিয়ে নাটক চরমে
18:29
Video thumbnail
Hooligaanism | Melar Gaan | বকুলতলার মেলার গানে হুলিগানইজম
00:00
Video thumbnail
BJP | সখী আঁধারে একলা ঘরে...বিজেপি শাসিত কোন কোন রাজ্যে, কোন কোন গ্রাম অন্ধকারে?
01:17
Video thumbnail
Madan Mitra | Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে কী বলেছিলেন মদন? যার জন্য শোকজ, দেখুন সেই ভিডিও
04:26:16

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39