Friday, June 13, 2025
Homeফিচাররক্ত দেখলেই কেমন গা গুলিয়ে ওঠে

রক্ত দেখলেই কেমন গা গুলিয়ে ওঠে

Follow Us :

কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: রক্ত দেখলেই আমার কেমন গা গুলিয়ে ওঠে। আপিসে যাওয়ার সময় মেট্রো থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে দেখি, মাংসের দোকানের সামনে এক পাল ছাগলকে বেঁধে রাখা হয়েছে। দোকানির সামনে রক্ত মাখা কয়েকটা ছাগলের মাথা। কোনওটার চোখ খোলা, কোনওটার চোখ বোজা। একটু আগেও হয়ত ওরা বেঁচে ছিল। দোকানের উলটোদিকে যে ছাগলগুলো বাঁধা থাকে, তাদেরই পরে কাটা হয়।

মাঝে মাঝে ভাবি, গলায় দড়ি বাঁধা ওই ছাগলগুলো মৃত্যুর প্রাক মুহূর্তে কী ভাবে? ওদের নিজেদের মধ্যে কি কোনও ভাব বিনিময় বা কথা হয়? ওদের টেনে নিয়ে যখন যাওয়া হয়, তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। ওরা কি বাঁচার জন্য আকুতি জানায়?

একই চিত্র দেখি মুরগির মাংসের দোকানেও। আমাদের পাড়ার লুঙ্গি পরা মনসুর ঝুড়ি থেকে এক টান মেরে একটা মুরগি ধরে কুচ করে গলাটা কেটে দেয়। চিৎকার করতে করতে মুরগিটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। ঝুড়ির বাকি মুরগিগুলো ভাবে, এবার আমার পালা। এদিক ওদিকে দৌড়ে বেড়ায় তারা, যদি প্রাণে বাঁচতে পারা যায়।

এভাবেই তো যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছিলেন জর্জ ফ্লয়েড মিনিয়াপোলিসের রাস্তায়। ৪৬ বছর বয়সি কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডের গলা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছিলেন পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন। ৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ড ওই অবস্থায় থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন ফ্লয়েড। তিনি অন্তত ২৭বার বলেছিলেন, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। তবু পুলিশ অফিসার তাঁকে ছাড়েননি। আদালতে ডেরেকের দাবি, তিনি নাকি এরকম কোনও কথা শুনতেই পাননি।

এভাবেই তো মানুষ মানুষকে খুন করে, মানুষ মানুষের রক্ত ঝরায়। আপিসে যাওয়ার পথে অসহায় ছাগলগুলোকে দেখে মনে পড়ে আফগানিস্তানে তালিবানদের হাতে শয়ে শয়ে মানুষ হত্যার কথা। খোলা রাস্তার বধ্যভূমিতে হাত বাঁধা, চোখ বাঁধা অবস্থায় কত মানুষকে গুলি করে বা পাথর ছুড়ে মেরেছে তালিবানের দল, তার কোনও হিসেব নেই। ইচ্ছে হল, এক জনপ্রিয় মহিলা খেলোয়াড়কে মারবে। বাড়ির থেকে ডেকে এনে তাঁর গলাটা কেটে ফেলা হল। কিংবা কাউকে মেরে রক্তাক্ত দেহটা বিমানের ডানায় বেঁধে ঘোরানো হল। আমজনতাকে বোঝানো হল, দেখ, যে কোনও মুহূর্তে তোমারও এই হাল হতে পারে।

আরও পড়ুন: একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, একটি ফুলের জন্য আমরা অস্ত্র ধরি

কিংবা ধরা যাক, জঙ্গিদের হত্যালীলার কথা।

দেশে দেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ মারা তো জঙ্গিদের কাছে জলভাত হয়ে গিয়েছে। সে ভারতবর্ষ হোক, পাকিস্তান হোক, আফগানিস্তান হোক, সিরিয়া হোক বা যে কোনও প্রান্তেই হোক। আবার এর উলটোটাও ঘটে। ভুয়ো সংঘর্ষে মানুষ মারা কিংবা জঙ্গি নিধন। তার বহু নজির আমাদের দেশেই আছে।

ঠিক এই মুহূর্তে জম্মু কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা এবং তার পাল্টা এনকাউন্টার লেগেই আছে।

প্রায় রোজই খুনোখুনি চলছে উপত্যকায়। হয় জঙ্গি মরছে, নয় পুলিস মরছে, নতুবা সাধারণ মানুষ মরছে। বেড়েই চলছে মৃত্যুর মিছিল।

আসলে গোটা পৃথিবী জুড়েই চলছে শুধু রক্তপাত, চলছে হত্যালীলা, হানাহানি। তার পিছনে আছে রাজনীতি, আছে রেষারেষি, আছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। এই রক্তপাত, হত্যালীলার অবসান কবে হবে, বিশ্বের কারও জানা নেই।

আরও পড়ুন: ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার চীন দেশে, ডিমের ভিতর গুটিসুটি শুয়ে ও কে!

বোধ হয়, পৃথিবীর সব দেশেই আছে বিসর্জনের একজন করে রঘুপতি, যে শুধু রক্ত চায়। রাজা গোবিন্দমানিক্যের রক্ত পেলে আরও ভালো। আজ থেকে কত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ বিসর্জন নাটক লিখেছেন। তাঁর সৃষ্ট রঘুপতির চরিত্র আজও বিদ্যমান দেশে দেশে। সেই রঘুপতির মুখে আমরা শুনি, ‘কে বা ভ্রাতা, কে বা আত্মপর! কে বলিল হত্যাকাণ্ড পাপ! এ জগৎ মহা হত্যাশালা। জানো না কি প্রত্যেক পলকপাতে লক্ষকোটি প্রাণী চির আঁখি মুদিতেছে! সে কাহার খেলা? হত্যায় খচিত এই ধরণীর ধূলি।….. হত্যা অরণ্যের মাঝে, হত্যা লোকালয়ে, হত্যা বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহ্বরে, অগাধ সাগর জলে, নির্মল আকাশে, হত্যা জীবিকার তরে, হত্যা খেলাচ্ছলে, হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বশে—চলেছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপণে, ব্যাঘ্রের আক্রমে মৃগসম, মুহূর্তে দাঁড়াতে নাহি পারে।’

ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে বাজারে যেতাম মাঝে মাঝে। বাড়িতে তখন কদাচিৎ পাঁঠার মাংস আসত। তখন চিকেনের চল ছিল না। মাংসের দোকানে পাঁঠা কাটতে দেখলেই গা কেমন গুলিয়ে উঠত। কসাই পাঁঠার চার পা নিজের পা দিয়ে চেপে ধরত। তারপর গলাটা কাটত। আর ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোত। বাড়িতে ফিরে মাকে বলতাম, আর কখনও বাজারের মাংস খাব না। মাংস যে বাজারেরই হয়, সেই বোধটাও ছিল না। ওই বয়সে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তখন থেকেই রক্ত দেখলেই গা কেমন গুলিয়ে ওঠে। আজও সেই গা গুলিয়ে ওঠা গেল না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran | ইরানে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি অ্যাডভাইজরি ভারতীয় দূতাবাসের, কী কী বিষয় সতর্ক থাকতে হবে?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইসরায়েল যু/দ্ধ শুরু, এবার কী হবে? শুনুন জয়ন্ত ঘোষালের বিশ্লেষণ
00:00
Video thumbnail
Amit Shah | Air India | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘ/টনা নিয়ে বড় মন্তব‍্য অমিত শাহর, কী বললেন শুনে নিন
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভা/ঙা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতের, কী পদক্ষেপ দিল্লির?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | বিগ ব্রেকিং, ইরানের বিরুদ্ধে যু/দ্ধ ঘোষণা ইজরায়েলের,কী জানালেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের হা/ম/লায় নি/হ/ত ইরানের সেনাপ্রধান
00:00
Video thumbnail
Air India | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘ/টনায় একমাত্র জীবিত ব্যক্তি প্রথম মুখ খুললেন ক‍্যমেরার সামনে
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের হা/ম/লার পর ইরানে কী অবস্থা? দেখুন ইরানি রিপোর্টারের কভারেজ
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | কলকাতা টিভির আভাসই সত‍্যি হল, শুরু ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, এবার কী করবে আমেরিকা?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানকে শে/ষ করতে ইজরায়েলের অপারেশন রাইজিং লায়ন, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00