এটিকে মোহনবাগান–২ এফ সি গোয়া–১
(লিস্টন কোলাসো, রয় কৃষ্ণ) (ওরটিজ)
কোচ বদল করে, মনে হচ্ছে, ভালই হয়েছে এটিকে মোহনবাগানের। নতুন কোচ জুয়ান ফেরান্দো, যাঁকে মোহনবাগান সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে গোয়া থেকে, প্রথম দুটো ম্যাচেই শুধু জিতলেনই না, তাঁর দলও বেশ ভাল খেলল। মরসুমের মাঝপথে কোচ বদলালে ফুটবলার তো আর বদল করা যায় না। সেই পুরনো ছেলেদের নিয়েই দল সাজাতে হয়, ঠিক করতে হয় রণ কৌশল। দেখা যাচ্ছে বয়স খুব কম হলেও (মাত্র ৪০) জুয়ানের মস্তিষ্ক বেশ ক্ষুরধার। এমন নয় যে গোয়া এবার খুব ভাল টিম। তাদের টিমে তেমন বড় মাপের প্লেয়ার নেই। আর জুয়ান যখন কোচ ছিলেন তখন প্রথম তিনটে ম্যাচেই হেরেছিল তাঁর দল। তার পর দুটো ম্যাচে জয় (যার মধ্যে একটা আবার ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে) এবং তার পরেই তো তাঁর পুরনো দল ছেড়ে নতুন দলে আসা।
জুয়ান যে দলটার দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই টিমটাও তো বেশ ভাল। চারটে জোনে চারটে ভাল প্লেয়ার আছেন। গোলে অমরিন্দর, ডিফেন্সে তিরি, মাঝ মাঠে হুগো বুমো এবং ফরোয়ার্ডে রয় কৃষ্ণ। এদের পাশে ডিফেন্সে প্রীতম কোটাল, মাঝ মাঠে কার্ল ম্যাকহিউ দুই উইংয়ে লিস্টন কোলাসো এবং মনবীর সিং। সব মিলিয়ে সাজানো টিম। দরকার ছিল এদের ঠিক মতো ব্যাবহার করা। পর পর দুটো ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছে জুয়ান তাঁর কাজটা ঠিক মতো করার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, বাকি যে দুজন বিদেশিকে তিনি প্রথম এগারোয় জার্সি দিতে পারেননি, সেই জনি কাউকো এবং ডেভিড উইলিয়ামসকে তিনি বিরতির পর ঠিক সময়ে নামালেন হুগো বুমো এবং রয় কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে। দুর্দান্ত যে খেললেন ওঁরা দুজন তা বলা যাবে না। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল তা কিন্তু একটু হলেও কমবে। তবে ওই দুই বিদেশি কিন্তু তাঁদের সুনামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
বহু দিন পর মিডফিল্ডার প্রবীর দাসকে মাঠে দেখা গেল। লেফট ব্যাক শুভাশিস বসু প্রথমার্দ্ধে চোট পেয়ে বসে যাওয়ায় তাঁর জায়গায় নামেন প্রবীর। রাইট ব্যাক আশুতোষ মেহেতা সরে যান লেফট ব্যাকে। প্রবীর তাঁর পছন্দের জায়গা রাইট ব্যাকেই খেলেন। এক সময় এটিকে-র প্রথম একাদশের প্লেয়ার ছিলেন। চোট পাওয়ায় বহু দিন মাঠের বাইরে ছিলেন। আবার মাঠে ফিরছেন এবং দেখালেন তিনি প্রথম একাদশে ফেরার জায়গায় আছেন। ব্যাপারটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। জুয়ান চার ডিফেন্ডারের সামনে দুজন ডিফেন্সিভ মিডিও রাখলেন। এর পর তিন অ্যাটাকার। সামনে শুধু রয় কৃষ্ণ। এতে কী হল গোয়ার ফুটবলাররা মাঝ মাঠে প্রচুর পাস খেললেও মোহনবাগানের ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি। ডিফেন্সে তিরি যা খেললেন তাতে বলা যায় মোহনবাগানের ডিফেন্স নিয়ে চিন্তা কিন্তু দূর হওয়ার পথে। মোহনবাগান যে গোলটি খেয়েছে তাতে ডিফেন্সের কোনও দোষ নেই। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ওরতিজের শট অমরিন্দরের দুই তালুর মধ্য দিয়ে গলে গিয়ে গোলে ঢুকে যায়। নেহাত তখন মোহনবাগান দু গোলে এগিয়ে ছিল আর ম্যাচেরও বেশি বাকি ছিল না (৮১ মিনিট) তাই রক্ষে। কিন্তু এই গোল যদি ম্যাচের শুরুর দিকে হত তাহলে সমস্যায় পড়ত এটিকে মোহনবাগান।
হুগো বুমো তো ভাল প্লেয়ার। মুম্বই থেকে এসে ভালই খেলছেন। কিন্তু অবাক করে দিচ্ছেন লিস্টন কোলাসো। গোয়ার প্রাক্তন এই ফুটবলার কিন্তু তাঁর নতুন দলের সঙ্গে ভালই মানিয়ে নিয়েছেন। বুধবারের গোলটা নিয়ে তাঁর পাঁচটা গোল হয়ে গেল। এবারের আই এস এল-এ ভারতীয়দের মধ্যে টপ স্কোরার। ২৩ মিনিটে বক্সের বাইরে একটা লুজ বল পেয়ে কয়েক গজ এগিয়ে ডান পায়ের একটা উঁচু শটে গোল করলেন। যে গোলটা করেছেন তার জন্য ম্যাচের হিরোর পুরস্কার পাওয়া অবধারিত ছিল। সেটাই হয়েছে। বিরতির পরেই রয় কৃষ্ণ গোলটা করে ফেললেন। হুগো বুমোর কর্নার থেকে বলটা এ পা ও পা ঘুরে তাঁর পায়ের কাছে আসতেই ডান পায়ের একটা বুলেট শট বেরোল। গোলকিপার ধীরাজ সিংয়ের পাশে একজন ডিফেন্ডার ছিলেন। পা-টা বাড়িয়েও ছিলেন। বল তাঁর পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়।
অতএব বছরের শেষ ম্যাচ জিতে মোহনবাগান উঠৈ এল তিন নম্বরে। আট ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৪। সামনে শুধু মুম্বই (১৬) এবং হায়দরাবাদ (১৫)। এই ধারা বজায় রাখতে পারলে মোহনবাগানের প্লে অফ-এ যাওয়া আটকাবে কে?