Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | মদনের প্রতিবাদ

Aajke | মদনের প্রতিবাদ

Follow Us :

সাধে কি মার্কস সাহেব বলে গিয়েছিলেন, এমনি এমনি কিচ্ছুটি হয় না। গাছের পাতা পড়ারও একটা কারণ থাকে। প্রতিটি বিষয়েই এক কার্যকারণ সম্পর্কের কথা তিনি বলে গিয়েছিলেন। হঠাৎই কোনও কুকুর ভৌ ভৌ করে ডেকে ওঠে না, হঠাৎই ময়ূর পেখম তুলে নাচে না, ভোট না এলে নেতারা ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন না, মন্ত্রী হওয়ার পরেই সেসব প্রতিশ্রুতি এমনি এমনিই ভুলে যান না। তাই দালালি থেকে প্রতিবাদ, কারণ ছাড়া হয় না। খেয়াল করে দেখুন, যিনি অন্যায়ের চূড়ামণি, তিনি হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন, আবার এক প্রতিবাদী কখন সকলের অজান্তে এক দালাল হয়ে ওঠে। এবং এসব এমনি এমনি হয় না। এর পিছনে কারণ থাকে, সুনির্দিষ্ট কারণ। সে কারণ নির্দিষ্ট ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য? হতেই পারে। সে কারণ অনেক হয়েছে, এবার কামিয়ে নেওয়া যাক। হতেই পারে। আর রাজনীতিতে তা আরও অনিবার্য। ব্যক্তি জীবনে তবুও মাঝেমধ্যেই ব্যক্তির আচরণের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, কারণ আছে, কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু রাজনীতির মানুষদের, খেয়াল করলে পাঁচদিন আগেই বোঝা যায়, উনি কোন পথে চলিতেছেন, বা পথ পরিবর্তন করিবেন কি না। এবং আসুন এই প্রেক্ষিতেই মদন মিত্রের হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে ওঠার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

নাম না করেই তিনি বলেছেন, আমার নামে সোনা পাচার, কয়লা পাচার, গরু পাচারের অভিযোগ তো নেই। ইঙ্গিত স্পষ্ট, তিনি এক ব্র্যাকেটেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কেষ্ট মোড়লকে নিয়েই যা বলার বলে দিলেন। আগে অঞ্জন দত্তই ছিলেন এক গগলস পরা আইকন, আপাতত সেই নামডাক মদনের। চোখে নানান দামি ব্র্যান্ডের সানগ্লাসের তলায় এক প্রতিবাদী চোখ যে এতদিন লুকিয়ে ছিল তা আমরা জানতেও পারিনি। আজ তাই বিষয় আজকে হল, মদনের প্রতিবাদ।

আরও পড়ুন: Aajke | চাকরি ফেরত পেলেন শিক্ষকরা 

মদনের কথার সারবত্তা নেই? আছে বইকী। পিজি আগের থেকে অনেক ভালো, কিন্তু এখনও সেখানে দালাল ঘোরে, দালালি নিয়ে বেড পাইয়ে দেয়। এখনও ডাক্তারবাবুদের পিছনে পিছনে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা ঘোরে, এখনও অনেক মানুষ হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরে, এখনও পিজিতে বেড পাওয়া এক ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু এই কথা মদন মিত্রের মুখে মানায়? কোথায় ছিল এই প্রতিবাদ যখন আপনিই, হ্যাঁ, আপনিই মদন মিত্র জেল হাজত এড়িয়ে বছর দেড়েক এই পিজির বিছানা দখল করে বসেছিলেন? কার সাহায্যে? সিপিএম না তৃণমূল? সেদিন উডবার্ন ওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার অন্যতম সেরা ওয়ার্ডের কেবিন দখল করে বিলকুল রোগী বনে গিয়েছিলেন। সেদিন মনে ছিল না এই পিজির কোনও এক কর্তা, বা কিছু কর্তারা মিলেই আপনার জেল হাজতের বদলে আরাম বিলাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন? কত নামুষের চিকিৎসা হত ওই বেডটুকু পেলে, এটা জানেন না আপাতত আগমার্কা প্রতিবাদী মদন মিত্র? পিজির ইতিহাস কি কেবল মিত্রমশাই জানেন নাকি? এই হাসপাতালে আপনার কথা না শোনার জন্য ওয়ার্ড বয়ের ধমকি, অপমান সহ্য করেননি এক আনকমপ্রোমাইজিং ডাক্তারবাবু? কে ছিল সেদিনের ওই ওয়ার্ড বয়দের অসভ্য বিক্ষোভের পেছনে? আপনারই সায় নিয়েই সাফাই কর্মীরা নোংরা না তুলে নরক করে রাখেনি এই পিজি হাসপাতাল? কোন ধরনের আন্দোলন ছিল সেটা? সেদিন এই নীতিজ্ঞান কোথায় ছিল? হ্যাঁ, আপনিই পারেন ভর্তি করে দিতে, অন্য কেউ নয়, আপনার নির্দেশ আসত, মুহূর্তে বেড পেত আপনার পাঠানো রোগী, যারা আপনার দরবার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি, তারা? তাদের কী হত? সেদিন মনে হয়নি যে কেন একজনের নির্দেশেই চলবে এতবড় একটা প্রতিষ্ঠান? আজ সেই মাস্তানি গেছে, কন্ট্রোল চলে গেছে, একদন আগে থেকে বেড বুক করে রাখার মতো ক্ষমতা চলে গেছে, সেটাই কি কারণ এই হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে ওঠার? নাকি আরও কারণ আছে? কেউ কি আপনার বিধানসভা থেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আপনার দুই পুত্রই হয়ে উঠেছেন ডিফ্যাক্টো এমএলএ? সেই প্রশ্নের অবধারিত কারণগুলোও আপনি বিলক্ষণ জানেন, জানেন আপনার ভবিষ্যৎ, তাই হঠাৎ গলায় উচ্চস্বর, গলায় প্রতিবাদ? আচ্ছা মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করি, পিজিতে যা ইচ্ছে তাই করার ক্ষমতা খুইয়েই কি মদন হলেন প্রতিবাদী? মানুষ কী বলবেন? আসুন শুনে নিই, মানুষ কী বলেছেন। 

এমনিতেই বিজেপির দিন ভালো যাচ্ছে না, কর্নাটক সেকথা প্রমাণ করেছে। তারা জানে তাদের আসন মহারাষ্ট্র, বিহার থেকে অনেকটাই কমবে। কাজেই তাদের আপাতত নজর বাংলা। এখানে তাঁরা কড়া নজর রেখেছেন, সামান্য ছিদ্র দেখলেও কাজে নেমে পড়ছেন। মদনের প্রতিবাদ তো সেই নজর এড়ায়নি। প্রথম দিনের প্রতিবাদ, ধরে নিলাম এক সাময়িক উত্তেজনা, তারপরের ধারাবাহিক বিবৃতিগুলোর পেছনে কি সেই নজরদারেরা আছেন? কারণ এবার মদন কেবল দল নয়, অরূপ বিশ্বাস বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীই নন, চাঁদমারির বৃত্তে রাখলেন অভিষেক আর কেষ্ট মোড়লকে। হ্যাঁ, অনেকটাই পরিষ্কার, মদন প্রতিবাদী হচ্ছেন সময়কে মাথায় রেখে, তাঁর প্রতিবাদ আরও অনেক বড় ছকের অংশ, ভবিষ্যতে সে ছক মিলিয়ে দেখে নেব। আপাতত দেখতে থাকুন নয়া যাত্রাপালা, মদন হলেন প্রতিবাদী।

RELATED ARTICLES

Most Popular