Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | চাকরি ফেরত পেলেন শিক্ষকরা

Aajke | চাকরি ফেরত পেলেন শিক্ষকরা

Follow Us :

ক’দিন আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার জন্য বিচারকের কলমের এক খোঁচায় চলে গিয়েছিল ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি। যে বাজারে একটা সাধারণ চাকরির জন্য অনায়াসে এক লক্ষ বেকারের অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ে, সেই বাজারেই ৩২ হাজার মানুষের চাকরি চলে গেল। মহামান্য বিচারপতির রায় নিয়ে তো প্রশ্নও তোলা যায় না, প্রশ্ন করাও যায় না। কত শত মোটা মোটা আইনের বই পড়েই তেনারা রায় দান করেন। আমরা বরং সেই রায়দানের পরের অবস্থার কথা বলি। ৩২ হাজার মানুষ মানে ৩২ হাজার পরিবার, পরিবার পিছু ৫ জন ধরলে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষের ভাত-ডাল, কাপড়, মাথার উপর ছাদের জোগানের দায়। যেদিন এই ঘোষণা হল, সেদিন তাঁদের মাথার ওপর আক্ষরিক অর্থেই বাজ ভেঙে পড়েছিল। তাঁদের বেশিরভাগ গত ৬-৭-৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। বিচারপতির তো চাকরি দেওয়ার দায় নেই, কিন্তু চাকরি কেড়ে নেবার অধিকার? আছে বইকী। কিন্তু সেই অধিকার প্রয়োগ কি কেবল আইনের মোটা বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? আইন কি কেবল কিছু ধারা আর তার বিশ্লেষণ? 

জেরোম কে জেরোমের ‘থ্রি মেন ইন আ বোট’ উপন্যাসের এক অংশে লন্ডনে গাঢ় শীতের রাতে এক ডাবল ডেকারে আর কেউ নেই, উঠেছেন দুই মহিলা, তাঁদের সঙ্গের এক কুকুরছানা আর সেই বাসের কন্ডাক্টরের গল্প বলেছেন লেখক নিজেই, যিনি নিজেই সেদিন বাসে ছিলেন। কুকুরছানাটিকে নিয়ে দুই মহিলা ডাবল ডেকারের নীচের আসনেই বসেন, কারণ উপরে তো ঠান্ডায় জমে যাবেন। কিন্তু বাস কন্ডাক্টার জানায়, তাদের উপরেই যেতে হবে কারণ কুকুরছানা নিয়ে ডাবল ডেকারের নীচেরতলায় বসা যায় না। মহিলারা বাধ্য হয়ে ছানাটিকে নিয়ে ডাবল ডেকারের উপরতলায় যান কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার নীচে নেমে আসেন, কারণ উপরে অসম্ভব ঠান্ডা, নীচে তো আর কেউ নেই, তাই নেমে এলাম, এটাই ছিল যুক্তি। কন্ডাক্টর আসে, আবার তর্কাতর্কি, আবার ওনারা ওপরে যান, আবার থাকতে না পেরে নীচে নেমে আসেন, আবার কন্ডাক্টর। এরকম বেশ কয়েকবার ওঠানামার পরে মহিলারা ওই ঠান্ডার রাতে বাস থেকে নেমে যান। এরপরে লেখক যা নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা হল, আইন মানুষের জন্য নাকি মানুষ আইনের জন্য? আজও সে প্রশ্নের সমাধান হয়নি। কিন্তু আপাতত স্বস্তি, ওই রায়ের উপর বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আজ সেটাই বিষয় আজকে, চাকরি ফেরত পেলেন শিক্ষকেরা।

আরও পড়ুন: Aajke | উঠে গেল নিষেধাজ্ঞা  

জাস্টিস গাঙ্গুলি তো আপাতত বাঙালির ঘরে এক পরিচিত নাম, এবার পুজোয় আমার চেনাজানা কর্মকর্তাদের অনেকেই পুজো প্যান্ডেল উদ্বোধনের জন্য জাস্টিস গাঙ্গুলিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তো সেই তিনি জানিয়েছিলেন, ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি আর নেই, তাঁরা পার্শ্ব-শিক্ষকের অর্ধেক মাইনে পাবেন, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হবে, যারা ছাঁটাই হলেন তাঁরা আবার সেই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। কিন্তু সেই রায় পড়ে বোঝা যায়নি যে যারা ইতিমধ্যেই ওই চাকরির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার করে ফেলেছে, তাদের কী হবে? ৬-৭-৮ বছর যাঁরা চাকরি করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই তো ওই চাকরির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার করে ফেলেছেন, তাঁরা কী করবেন। চাকরি প্রার্থী বা তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকেই বললেন, ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই কিল মারার গোঁসাই। কিন্তু সেসব তো রাগের কথা আর সেই কথাতে আমাদের সায় নেই হুজুর, আমরা কেবল খোঁজ নিয়েছিলাম আজ যে স্থগিতাদেশ আসল, সেখানে এই চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে উকিল ঠিক কী সওয়াল করেছিলেন? তো যা জানা গেল সেটাই বলি। প্রথম কথা যা বলা হয়েছিল যে, হুজুর মাইবাপ, এই বাজারে ৩২ হাজার মানুষের চাকরি খারিজ করা মৃত্যুদণ্ডের চেয়ে তো কম কিছু নয়, তো মৃত্যুদণ্ডের আসামিকেও তো আত্মপক্ষ সমর্থন করার অধিকার দেওয়া হয়, এই ৩২ হাজার শিক্ষকের কি সেটুকু অধিকারও প্রাপ্য নয়। সওয়ালে বলা হয়েছে হুজুর মাইবাপ, মানুষ তো ভাত নয় যে একটা ভাত চিপেই পুরো হাঁড়ির গল্প বোঝা যাবে? তো হুজুর শুনেছেন এবং ওই ছাঁটাইয়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। আজ নিশ্চিত এই জাজ সাহেবের নামে হরির লুট দেবেন এই ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকেরা। সে যাই হোক, একটা প্রশ্ন তো তাহলে থেকেই যাচ্ছে, শিক্ষকদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার আগে তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়াটা কি জরুরি ছিল না? চলুন দেখি মানুষজন কী বলেন।

এসব রায়, চাকরি, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয় বাদই দিলাম। আমাদের মনে হয়, আপনাদেরও কি মনে হয় না যে চারিদিকে এক রাজনীতি চলছে, ক্ষমতার রাজনীতি, কামিয়ে নেওয়ার রাজনীতি, যা ইচ্ছে করার রাজনীতি? আর সেই নোংরা ক্ষমতার ইচ্ছের আড়ালে কিছু মানুষ স্রেফ বোড়ে হয়ে যাচ্ছে, জানতেই পারছে না তার দোষ কী? ঘ্যাচাং করে গলা কাটা পড়ছে। আমজনতা, কমন পিপলকে সামনে রেখে কী কদর্য রাজনীতিই না চলছে। এমনটা এর আগে দেখাই যায়নি, যে যার মতো খেলে নিচ্ছে, যে যার মতো গুছিয়ে নিচ্ছে, মধ্যিখান থেকে কিছু মানুষ হঠাৎই বুঝতেও পারছেন না, তাঁদের মাথা কাটা গেল কেন? জুড়েই বা দিল কে? আবার কাটা যাবে না তারই বা গ্যারান্টি কী। সেই কবে কবি বলেছেন, মানুষ বড় অসহায়, মানুষের হাত ধরো। প্রশ্ন, সে হাতটা ধরবে কে?

RELATED ARTICLES

Most Popular