Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | খেলা ঘুরছে, চাকা ঘুরছে, পরধান সেভক মোদিজি নার্ভাস
Fourth Pillar

Fourth Pillar | খেলা ঘুরছে, চাকা ঘুরছে, পরধান সেভক মোদিজি নার্ভাস

বিভাজন করতে গিয়ে যতরকমের মিথ্যে বলার বলে যাও

Follow Us :

তাস খেলায় ব্লাফ দেওয়া বলে একটা কথা খুব প্রচলিত। সামনের খেলোয়াড়কে খানিক ঘাবড়ে দিতেই এমন একটা হাবভাব করা যাতে করে সামনের বসে থাকা লোকটার মনে হয়, উরিব্বাস, ওনার কাছে তো তিনটে রাজা, বা তিনটে টেক্কা আছে, ফেললেই খেলা শেষ। এটা খুব শক্ত ব্যাপার, কিন্তু কেউ কেউ পারে। সমস্যা হল কয়েকবার ব্লাফ দেওয়ার পরে সামনের লোকটা জেনে যায়, ব্লাফ দিচ্ছে, সে আর কেয়ার করে না। তো আমাদের মোদিজি সেই তাসুড়ের মতো, পাকাপোক্ত ব্লাফবাজ। নির্বাচন আসছে, এবার মানুষ প্রশ্ন করবে, ভাই কী কী হল? চাষির রোজগার তিন গুনা হো জায়েগা, বলে তো ছিলে, ক’গুণ হল? হরেক কো রহনে কা ঘর, ঘর মে কল, কল মে জল, কমরে মে বাল্ব জলেগা। থাম থাম ভাই কাঁদাবি নাকি? কেবল বাড়ি ক’টা হয়েছে তাই বল? চাকরি? সাল মে দো কড়োর নৌকরি? তার কী হল? রুপেয়া তো ইনকে সময় গিরতে হি রহেগা, বেশ তো উনকে সময় তো চলা গয়া, এখন তো আপনার সময় স্যর? রুপেয়া এখনও পড়ছে তো পড়ছেই। ডিজেল পেট্রল কা ভাও ইতনা কিউ? ২০১৪-র নির্বাচনী প্রচারের সময় জিজ্ঞাসা করেছিলেন স্যর? এখন নিজেকেই প্রশ্ন করার পালা, ইতনা কিউ? কিন্তু এসব প্রশ্ন শোনার অভ্যেস ওনার নেই, খটমট প্রশ্ন এলেই দোস্তি বনি রহে বলে, এক গ্লাস জল খেয়ে পতলি গলি সে পগার পার। তো সেই তিনি আগেভাগেই বুঝেছেন ২০২৪-এ মাঠেঘাটে এসব প্রশ্ন আসবে, আসবেই। মানুষ জানতে চাইবে চাকরির কথা, কৃষকের আয়ের কথা, জল, ইলেক্ট্রিসিটির কথা অতএব উনি আগে থেকেই অন্য খেলায় নেমে গেছেন। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে বিভাজিত করো, তারপর শাসন করো। বহু আগে ওনাদের বন্ধুরা, যাদের দালালি করে ওনাদের দিন কাটত সেই ইংরেজরাও এই কাজটাই করতেন, ডিভাইড অ্যান্ড রুল, বিভাজন করো শাসন করো, মোদিজি সেখান থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন।

আর সেই বিভাজন করতে গিয়ে যতরকমের মিথ্যে বলার বলে যাও, ঝুট বোলো, ঝুট বোলো, আউর ঝুট বোলো। তো মিথ্যে বলা মোদিজির কাছে নতুন কিছু নয়, উনি কখন ক’টা সত্যি বলেন সেটার হিসেব রাখা অনেক সোজা। তিনি মিথ্যে বলা শুরু করলেন, এবং চারিধারে কাড়ানাকাড়া, উনি ব্লাফ দিলেন ৩৭০ পার, ৪০০ পার, ভক্তকুলে আহ্লাদ, সমস্বরে সবাই বললো অবকি বার চারশো পার। সেই কলরবে আগে থেকে ভাড়া করে আনা ঢাকিরা যোগ দিল, তারাও চিৎকার শুরু করে দিল অবকি বার ৪০০ পার। কেবল সেটাই বলল তাও নয়, সেই সংবাদমাধ্যম, কেন ৪০০ পার তার ব্যাখ্যা দিতেও শুরু করল। কঠিন সব ব্যাখ্যা। কীভাবে মানুষ স্বচ্ছ ভারত এই প্রথম দেখল, কীভাবে এক টোয়েন্টি ফোর ইন্টু সেভেন কাজ করা এক নেতাকে দেখে মানুষ উদ্বেল, ৫০০ বছর পরে রাম ঘরে ফিরলেন, ঠিক ফিরলেন এমনও নয়, তাঁকে ফেরালেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এসবের মধ্যে কিছু বদমাস কিছু নির্বাচনী সমীক্ষা নিয়ে হাজির। অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার পিছনের মানুষ হলেন প্রদীপ গুপ্তা, যিনি গত বেশ কয়েকটা নির্বাচন হিসেবের দিক থেকে মিলিয়ে দিয়েছেন, বাংলাতে ধেড়িয়েছিলেন কিন্তু বাকি অনেকগুলোতে তাঁর এগজিট পোল একদম ঠিকঠাক। তিনি তাঁর নিজের টুইটার হ্যান্ডলে ১৬টা রাজ্যে বিজেপি সমস্যায় লেখার পরে টুইট ডিলিট করেছেন। কিন্তু তারমধ্যে গুচ্ছ স্ক্রিনশটও উঠে গেছে, এখনও এ নিয়ে তিনি চুপ।

ওদিকে লোকপোল নামের এক সমীক্ষা জানাচ্ছে কর্নাটকে ১৭-১৮টা আসন পাবে কংগ্রেস, আর বাংলাতে তৃণমূল ২৮, কংগ্রেস দুই, বিজেপি ১০, মহারাষ্ট্রে ২৩টা বিরোধী ইন্ডিয়া জোট পাবে। কেবল ওরা নয় মহারাষ্ট্রে এমন কথা তো অনেকেই বলছেন। সব মিলিয়ে যাকে বলে কেলোর কীর্তি। এমনকী রাজস্থানেই নাকি ৩-৪টে আসন ইন্ডিয়া জোট পাবে। বিহারেও নাকি জেডিউ ২-৩টে আসন পেলে সেটাই বিরাট ব্যাপার হবে গতবার ৪০-এর মধ্যে ১৬টা পেয়েছিল নীতীশ কুমারের জেডিইউ। তাহলে এই যে বলা হচ্ছিল অবকি বার চারশো পার, অবকি বার ৩৭০ পার, সেটা তাহলে সত্যিই ব্লাফ ছিল? আর সবচেয়ে বড় কথা হল, ওধারের ব্লাফ মাস্টার তো অন্তত জানে যে এটা ব্লাফ এবং তা ধরা পড়ে যাচ্ছে। কাজেই এবারে প্ল্যান বি নিয়ে নেমে পড়েছে আরএসএস–বিজেপি। কোনও রাখঢাক নেই, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী জনসভা থেকেই দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াতে ছড়াতে যাচ্ছেন। মিথ্যে তো বলেনই এখন সেই মিথ্যে দিয়ে হিন্দু-মুসলমান বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু হয়েছে। সেই অশিক্ষিত কথাগুলো একটু শুনুন। ১৯ মার্চ তামিলনাড়ুর সালেমে গিয়ে বললেন, ইন্ডি জোট, উনি ইন্ডিয়া জোট বলেন না, ইন্ডি জোট পরিকল্পিতভাবে হিন্দুধর্মকে হেয় করে, কংগ্রেস ডিএমকে ইন্ডি জোটের অন্যান্যরা অন্য ধর্ম নিয়ে একটা কথাও বলে না, কেবল সুযোগ পেলেই হিন্দু ধর্মকে আক্রমণ করে। ৬ এপ্রিল সাহারানপুরে জনসভাতে বললেন, কংগ্রেসের ইতিহাস আগে মুসলিম লিগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, এখনও তাই, আর বাকি যা আছে তাতে চেপে বসেছে বামপন্থীরা। ইতিহাস কী বলছে? ১৯৪০-এ নেতাজি হিন্দু মহাসভা, যার নেতা আজকের বিজেপির বাংলার আইকন, তাদের আদর্শ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে বা মুসলিম লিগ সম্পর্কে কী বলছেন?

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | প্রশ্ন কোরো না কেউ উত্তর পাবে না, উল্টে পুরেই দেবে জেলে

“That was a long time ago when prominent leaders of the congress could be members of the communal organisations like Hindu Mahasabha and Muslim League. But in recent times, the circumstances have changed. These communal organisations have become more communal than before. As a reaction to this, the Indian National Congress has put into its constitution a clause to the effect that no member of a communal organisation like Hindu Mahasabha and Muslim League can be a member of an elective committee of Congress.” লেখাটা আছে ওনার বই (Netaji Subhas Chandra Bose Forward Bloc Weekly, 4th May 1940)-তে।

তিনি পরিষ্কার জানাচ্ছেন, হিন্দু মহাসভা বা মুসলিম লিগের কোনও নেতা কংগ্রেসের সদস্য হতে পারবে না। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত এই দশ বছরে ভারতের ইতিহাসে মুসলিম লিগ আর হিন্দু মহাসভার ভূমিকা কী ছিল? ১৯২৯— জিন্না দিল্লি মুসলিম লিগের সভায় ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান সম্পর্কে ১৪ পয়েন্টের একটি প্রস্তাব পেশ করেন। মূল দাবিগুলি ছিল ১) প্রতিটি রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন চাই। ২) আইনসভায় সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ৩) কেন্দ্রীয় আইনসভায় এক তৃতীয়াংশ মুসলিম সংরক্ষণ চাই। জিন্না এই নিয়ে আলোচনা এবং সমঝোতায় আসতে চেয়েছিলেন।

১৯৩০— কংগ্রেস এই প্রস্তাব সর্বাংশে নাকচ করে। জওহরলাল নেহরু একে ‘হাস্যকর’ আখ্যা দেন। নেহরুর ধারণা ছিল ভারতীয় মুসলিমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আছে, অতএব সমঝোতা নিষ্প্রয়োজন। কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগের বিরোধিতার সূত্রপাত হয়।

১৯৩৭— এগারোটা প্রদেশে নির্বাচন হয়। কংগ্রেস ৮টা প্রদেশে জেতে। বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশে হারে। মুসলিম লিগ ভোট এবং আসন সংখ্যায় সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়, কিন্তু একটিও প্রদেশ তাদের হাতে ছিল না। কংগ্রেসের সাফ জানিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে মুসলিম লিগের কোথাও কোনও সমঝোতা হবে না। জিন্না এই সময় থেকেই ক্রমশ ‘মুসলিম পরিচয়’ বা আইডেন্টিটির দিকে ঝুঁকতে থাকেন। সাভারকরের আনা দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। এই নির্বাচনে হিন্দু মহাসভাও খুব খারাপ ফল করেছিল।

১৯৩৯— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, সমস্ত কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেন। মুসলিম লিগ ক্ষমতার স্বাদ পায়। খুব অদ্ভুত ব্যাপার হলেও, মুসলিম লিগ সিন্ধ এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে এবং এই বাংলাতে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট সরকার বানায়। হিন্দু মহাসভা বাংলায়ও ফজলুল হকের সঙ্গে যে জোট সরকার করে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সে সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির চ্যালারা আজ কংগ্রেসকে মুসলিম লিগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলছে। ৬ এপ্রিল রাজস্থানের আজমেরে গিয়ে মোদিজি বললেন, কংগ্রেস দল রামমন্দির প্রতিষ্ঠা বয়কট করেছে, যাঁরা গেছেন তাঁদের বহিষ্কার করেছে, ওরা রাম বিরোধী। ৭ এপ্রিল নওয়াদা বিহারে গিয়ে বলেছেন আরজেডি, কংগ্রেস চেষ্টা চালিয়ে গেছে যাতে রামমন্দির তৈরি না হয়, ভগবান রামের সঙ্গে এদের শত্রুতা, রামনবমী আসছে, এদের শাস্তি দিন। ১১ এপ্রিল ঢোলপুর রাজস্থানে গিয়ে বললেন কংগ্রেস জমানাতে রামনবমীর মিছিলে ঢিল ছোড়া হত, তুষ্টিকরণের জন্য মন্দির ভাঙা হত। ১৯ এপ্রিল অমরোহা, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বললেন, কংগ্রসের শাহজাদা বলেছেন যে দ্বারকাতে যেখানে আমি পুজো করলাম সেখানে নাকি কিছুই নেই, ওরা সনাতন ধর্মকে ঘৃণা করে, হাজার হাজার বছরের ভক্তিকে এরা নাকচ করে দিচ্ছে। ২১ এপ্রিল বাঁসোয়ারাতে গিয়ে বললেন, আপনাদের মা বোনেদের সোনা রুপো মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলছে এরা, এরাই আগে বলেছিল দেশের সম্পত্তির আসল হকদার মুসলমানেরা, আপনাদের সোনা মঙ্গলসূত্র কেড়ে এরা মুসলমানদের দিয়ে দেবে। বিষ উগরোচ্ছেন। ১০ বছরে দারিদ্র বেড়েছে, বৈষম্য বেড়েছে, দেশের অর্থনীতি খারাপ হয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, কৃষকদের রোজগার কমেছে, আজ নির্বাচনের আগে সেই প্রশ্ন উঠছে আর তা তোলার আগেই একজন চৌখস ব্লাফবাজের মতো তিনি ব্লাফ দিচ্ছেন, ৩৭০ আর ৪০০ পারের গল্প বলছেন, বাস্তবে চাকা ঘুরছে, খেলা ঘুরছে, ওনার ব্লাফ ধরা পড়ে যাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | রাজভবনে 'শ্লীলতাহানি', তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি, বিস্ফোরক রাজ্যপাল
35:16
Video thumbnail
Stadium Bulletin | আইএসএল ফাইনালে আবারও কি হাবাস ম্যাজিক?
18:10
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | তৃণমূল দুর্নীতির দোকান খুলেছে : নরেন্দ্র মোদি
06:06
Video thumbnail
SSC Scam | চাকরিহারাদের মধ্যে যোগ্য- অযোগ্য কারা? চিহ্নিতকরণ সম্ভব, বলছে কমিশন
17:12
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন মমতার
11:11
Video thumbnail
নারদ নারদ (03.05.24) | অবৈধ বালি উত্তোলনে রাজনৈতিক তরজা, মামলার প্রেক্ষিতে কড়া বার্তা আদালতের
14:58
Video thumbnail
Kunal Ghosh | সাংবাদিক বৈঠক থেকে কী বললেন কুণাল, দেখুন ভিডিও
04:43
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন জেলার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
15:06
Video thumbnail
Loksabha Election 2024 | ভোট আবহে দুই থানার ওসিকে অপসারণ কমিশনের
02:26
Video thumbnail
Kaustuv Ray | ফের নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন কৌস্তুভ রায়ের
03:24