একটা হিসেবের খাতার কয়েকটা পাতা দেখিয়ে আমাদের চ্যানেল সম্পাদককে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। কে জুগিয়েছেন সেই ছেঁড়া পাতাগুলো? যিনি জেলের মধ্যে থেকেই এই পাতাগুলো ইডিকে ইমেল করে পাঠিয়েছেন সেই পিঙ্কন মালিক মনোরঞ্জন রায় আদালতের রায়ে মানুষ ঠকানোর দায়ে যাবজ্জীবন জেল খাটার সাজা খাটছেন। আসুন আমরাও অন্য কিছু হিসেবের পাতা দেখে নিই। ব্যাঙ্ক ঋণ তো মুখ দেখে দেবার কথা নয়, একটা কোম্পানিকে ঋণ দেবার আগে তার ব্যবসা, তার লাভ, তার গুডউইল ইত্যাদি বহু হিসেব করেই দেওয়া হয়। আসুন দেখা যাক অনিল আম্বানির আরকম-কে ব্যাঙ্ক কী দেখে লোন দিল? ২০১৮-২০১৯ সালে অনিল আম্বানির আরকম তাদের নিজেদের খাতায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি দেখাচ্ছে, তার আগের আর্থিক বছর, মানে ২০১৭-২০১৮ তে ২৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি দেখাচ্ছে, মজার কথা হল সেই বছরেই তারা ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে, তার মানে এক লস মেকিং কোম্পানিকে ঋণ দেবার জন্য ব্যাঙ্ক উঠে পড়ে নেমেছিল? কেন? কারা তাদের এই নির্দেশ দিয়েছিল? কেন দিয়েছিল? এসব প্রশ্ন তো উঠবেই।
প্রশ্ন আরও আছে, এই টাকা সাইফন হয়ে গ্যালো কোথায়? এ তো ভারি মজা, ৩০০০ কোটি টাকা ধার নাও, ১০০০ কোটি টাকা রাজনৈতিক দল শাসক দলকে ভেট দাও, তারও লিগ্যাল বন্দোবস্ত করা আছে, আর ১০০০ কোটি টাকা ব্যাংককে ফেরত দাও, বাকি ১০০০ কোটি টাকা নিয়ে কেটে পড়ো। সোজা হিসেবে খেলা চলছে, আর কিছু বললেই, সীয়াচীন মে জওয়ান খড়ে হ্যাঁয়! দেশপ্রেম নয়তো হিন্দু খতরে মে হ্যায়, মুসলমান জনসংখ্যা নাকি এমন বাড়ছে যে দু-তিন বছরে হিন্দুদের পার করে যাবে, এমন খাড়াই মিথ্যেকে সামনে রেখে শ্লোগান দেওয়া হবে অভি না জিসকো খুন না খৌলে, খুন নহিঁ ওহ পানি হ্যায়। রাজকোষে চুরি হয়ে যাবে, চোরেরা জন্মদিন পালন করবে, ছেলের বিয়ে, নিজের ম্যারেজ অ্যানিভারসারি পালন করবেন, রাজনৈতিক নেতারা হেঁ হেঁ করতে করতে গিয়ে হাজির হবেন, সেখানে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কর্তাব্যক্তিরাও থাকবেন, তাঁরা দেখবেন পরিস্কার, কাকে ঋণ দেওয়া উচিত, কাকে নয়। অনিল আম্বানির আরকম কোম্পানির বোর্ড অফ ডাইরেক্টরস এ, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, হ্যাঁ নকড়া ছকড়া ম্যানেজার ইত্যাদি নন, ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান একে পুর্বা ছিলেন, এক ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, নিজে এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত, কে কাকে ধরবে? কে কাকে আটকাবে?
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৪৫)
একটা ফরেনসিক অডিট হয়েছিল, ২০১৮-১৯ এ, এই আরকম কোম্পানি তে। ফরেনসিক অডিটে কোম্পানির ক্ষতি কেন হল, কীভাবে হল, কারা দায়ী, এসব কিছুই খুঁজে বার করা হয়, তাতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে ৫৫০ কোটি টাকা বিভিন্ন ভাবে ঘোরানো হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত কোম্পানি থেকে সাইফন হয়ে গেছে। হ্যাঁ, এই রিপোর্ট ২০১৮-২০১৯ এর। তাহলে সেই রিপোর্ট আজ এই ২০২৪ এও বাইরে এলনা কেন? কে কোন ঠান্ডা বস্তায় ফেলে কোনখানে রেখে দিয়েছে? সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে অনিল আম্বানিকে লক আপ এ পোরা হল না কেন? তার দাদা মুকেশ আম্বানিকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হল না কেন, যে এসবের হদিশ তিনি রাখতেন কি না? দেশের চৌকিদার থেকে এই ফোর টোয়েন্টি মানুষজন জেলের বাইরে আর প্রতিবাদ করলেই জেলে, এটাই মোদি শাহের জামানায় নিও নর্মাল।
মোদি – শাহের নেতৃত্বে এক ইডি রাজ চলছে, এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। আমরা তাই প্রতিবাদী। আমরা জাস্টিস চাই, কেবল আমাদের সম্পাদকের জন্য নয়, দেশ জোড়া বিরোধী রাজনৈতিক দল, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, মিডিয়ার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করার বিরুদ্ধে আমরা বলে যাব। লালু যাদব বা তামিলনাড়ুর স্তালিন বা কেরালার পিনারাই ভিজয়ন বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন সমেত দেশের প্রতিবাদী মানুষজন যে এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তের মুখোমুখি সে কথা আমরা বার বার বলব। বলব জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: