Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeঘোষাল নামা (Ghosal Nama) | দেশ ভাগের সঙ্গে কখনও উৎসব পালিত হয়...
Array

ঘোষাল নামা (Ghosal Nama) | দেশ ভাগের সঙ্গে কখনও উৎসব পালিত হয় না

Follow Us :

কলকাতা: ছোটবেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা অথচ পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে মাতামাতি কোনওদিন দেখিনি। বিজেপি হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের ডাক দিয়েছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর যখন ছিলেন তখন রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছিলেন। বর্তমান রাজ্যপাল তিনিও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে উদ্যত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার মুখিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে এই দিবস পালন না করার আবেদন জানান রাজ্যপালকে। রাজ্য সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন।

২০ শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের এই ঘনঘটা নিশ্চয় বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের দিক থেকে সুপরিকল্পিত। তাদের যুক্তিটা কি? বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী তিনি তার যে জেলা সেখানে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেছেন। কি চাইছে বিজেপি? বিজেপির বক্তব্য দেশভাগের সময় হিন্দুদের সুরক্ষিত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। সেদিন বাংলা ভাগ না হলে হিন্দুরা সুরক্ষিত হতো না। এমন একটা ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী হিন্দুদের জন্য পশ্চিমবঙ্গটা তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু সেটাই কি প্রকৃত ইতিহাস? আসুন আমরা পশ্চিমবঙ্গ দিবসের পেছনের ইতিহাসটা একটু জেনে নিই। কেন এই দিনটা পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে ঘটা করে পালন করা অনুচিত। কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি গ্রহণযোগ্য, সে কথাই আমি আপনাদের জানাতে চাইছি।

আরও পড়ুন: অভিষেকের নবজোয়ারে লাভ হবে পঞ্চায়েতে?

ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেওয়া হবে যখন এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তি গ্রহন করল তখন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ভারতের ভাইসরয়। ১৯৪৭ সাল। দিল্লিতে তখন কিন্তু কংগ্রেস, মুসলিম লীগ এইসব নিয়ে একটা জাতীয় সরকার চলছে। আর সেই সরকারের প্রধান ছিলেন জহরলাল নেহেরু। তখন কেন্দ্রের যে সরকার সেই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল আর অর্থমন্ত্রী ছিলেন মুসলিম লীগের ইয়াকত আলি। বাংলায় প্রাদেশিক একটি সরকার। আর সেই সরকারের প্রধান ছিলেন এইচ এস সুরা ওয়ারদি। যিনি প্রথম থেকেই বাংলা আর পাঞ্জাব ভাগে আপত্তি করেছিলেন। তার মনে হয়েছিল যে পাকিস্তান যদি আলাদা হয় তাহলে এই দুটো প্রদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হবে। অন্যদিকে ছিলেন পন্ডিত নেহেরু। তিনি এই দুই প্রদেশ ভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি দেশ ভাগেরই বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু প্যাটেল প্রথম থেকে দেশ এবং সেই সঙ্গে বাংলা এবং পাঞ্জাব ভাগের পক্ষে ছিলেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় ভয়ঙ্কর দাঙ্গা হলো। নোয়াখালীতে দাঙ্গা হলো। গান্ধীজি দাঙ্গা থামাতে পৌঁছে গেলেন। দুই জায়গাতেই মূলত মুসলিমদের হাতে হিন্দুরা নিহত হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। এর প্রতিক্রিয়া বিহারেও হয়েছিল। বিহারেও দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছিল। এরপর পাঞ্জাবেও হিন্দু এবং মুসলিম বিরোধ বাধে। ফলে মাউন্টব্যাটেন প্রথম থেকেই এই দুই প্রদেশ ভাগের পক্ষে ছিলেন। তিনি ভারতে আসার চার মাসের মধ্যেই ৩রা জুন ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ব্যাপারে সরকারি প্রস্তাব পেশ করেন। সেখানে তিনি জানান অবিভক্ত বাংলার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলার বিধানসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি দল ভোট দিক। তখন বাংলার গভর্নর ছিলেন ফ্রেডরিক ব্যারেন্স। সুরা ওয়ারদী বলেছিলেন হিন্দু এবং মুসলমানদের ভাষা এবং সংস্কৃতি এক। দুটো সম্প্রদায় একসঙ্গে বাস করছে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাই এই ক্ষেত্রে দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা সাজে না। বাংলা অভিভক্ত স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র হবে। সুরা ওয়ারদী ভোট দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম লীগ নেতার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই প্রস্তাব দেন। তাদের মতের পক্ষে ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরত বসু, কিরণ শঙ্কর রায় প্রমুখ। কৃষক প্রজা পার্টি সৈয়দ হাবিবুল রহমান এর পক্ষে ছিলেন। বিপক্ষে ছিলেন কংগ্রেসের বিধানচন্দ্র রায়, হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আকস্মিক ঘোষণা বিরোধীদের বিপাকে ফেলল?

১৯৪৭ সালের ২০ শে মে  সুরা ওয়ারদী এবং তার যে ৫ দফা পরিকল্পনা পেশ করা হয় তাতে কি বলা হলো? তাতে বলা হলো যে, ফ্রি স্টেট বেঙ্গল এর প্রথম সংসদের ৩০ জন সদস্য থাকবে। তার মধ্যে ১৬ জন মুসলমান অবিভক্ত বাংলার মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি ছিল। ১৪ জন হিন্দু ছিল। হিন্দু মুসলিম সকলের সমান অধিকার দিতে হবে এবং ভোট দানের ক্ষমতা থাকবে। নেহেরু এই ব্যাপারে প্রাথমিক সম্মতি দিলেন। যদিও সেই সময় কংগ্রেসের সভাপতি যে ভি কৃপালান খুব আপত্তি করেছিলেন। তার মানে বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ এই দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। বিজেপির পক্ষে বারবার হিন্দু মহাসভার কথা বলা হয় কিন্তু মাউন্টব্যাটেন হিন্দু মহাসভা এবং তাদের একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে পাত্তাই দেয়নি। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায় সেখানকার শিক্ষকদের ভোটে জিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছিলেন। তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে জানিয়ে দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের প্রতিনিধি হচ্ছে কংগ্রেস পার্টি। সুতরাং আমরা কংগ্রেস পার্টি যা বলবে সেটাই  শুনবো। যাই হোক মাউন্টব্যাটেনের কথা মতো ২০শে জুন বেঙ্গল স্টেট অ্যাসেম্বলিতে ভোট হলো। অবিভক্ত বাংলা পৃথক রাষ্ট্র’ পাকিস্তানে যাবে কিনা সেই নিয়ে মতের ওপর সেখানে বিধানসভার যৌথ অধিবেশনে । মনে রাখতে হবে মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরে কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভার একজন মাত্র প্রতিনিধি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি।সেখানে কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রম্ভ-সহ তিন জন ছিলেন। ১২০ এবং ৯০ ভোটে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মোশান প্রস্তাবের পক্ষে ছিল। প্রস্তাব টা কি ছিল? প্রস্তাবটা ঠিক ছিল, “if Homeland of Bengali Hindu and Bengali Muslim remain undevided. it will be a part of constituent assembly of Pakistan”. কংগ্রেস এবং লীগের একাংশ এই ব্যাপারে  বিরোধিতা করেন। সঙ্গে কৃষক প্রজা পার্টি এবং কংগ্রেসের তিনজন সদস্য ছিলেন। ওই দিনই দ্বিতীয়বার ভোট হল। পূর্ববঙ্গের মুসলিম প্রধান জেলা প্রতিনিধিরা ভোট দিলেন। সেখানে মোশান ছিল বাংলা ভাগ করা হবে কিনা। ১৬০ আর অন্যদিকে ৩৫ ভোটে বাংলা ভাগের প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেল। অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের মুসলমান এবং হিন্দু প্রতিনিধিরা জানিয়ে দেন যে তারা বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস লীগ কমিউনিস্ট পার্টির বড় অংশ, ১০৬ জন এর মধ্যে আছেন। তারমানে সব দলেরই অধিকাংশ প্রতিনিধি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার মত দেন।এমনকি দলিত হিন্দু প্রতিনিধিরাও পর্যন্ত। এই চার ভোটের ফলাফল গভর্নর ফ্রেডরিক বারেন্স এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর তিনি ভাইসরয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। তাহলে এই ইতিহাসের ঘটনাবলী শোনার পর এবং জানার পর আমরা কি করে বলবো যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করাটা জরুরি? কাজেই দেশ ভাগের সঙ্গে যখন পশ্চিমবঙ্গ গঠনের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এবং তার জন্য এত দাঙ্গা, এত রক্তপাত, এত যন্ত্রণা, এত কষ্ট তখন সেই পশ্চিমবঙ্গ দিবসকে জোর করে পালন করে একটা হৈ হৈ করা এবং উৎসব করা সেটা বোধহয় বাঙালির সংস্কৃতি আর বাঙালির রুচির সঙ্গে মেলে না। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে ঘটা করে হৈ হৈ করাটা বোধ হয় পরিহার করতে পারলেই ভালো হয়। বিষয়টা সংবেদনশীল। পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ গঠনের জন্য আমরা আলাদাভাবে সংস্কৃতি উৎসব করছি। যে রকম পাঞ্জাবেও কিন্তু পাঞ্জাব দিবসটাকে মূলত সংস্কৃতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশ ভাগের সঙ্গে কখনও উৎসব পালিত হয় না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Top News | কোথায় আবু তালেব? কেন তার বাড়িতে এত অস্ত্রশস্ত্র মজুত?
41:28
Video thumbnail
পায়ে পায়ে ধর্মযুদ্ধে | কেষ্টহীন বীরভূমে আজ কী বার্তা অভিষেকের?
03:01
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | Satabdi Roy | অনুব্রতহীন বীরভূমে অভিষেক, শতাব্দী রায়ের সমর্থনে প্রচার
04:11
Video thumbnail
Sandeshkhali | সন্দেশখালির 'অস্ত্রভান্ডার'-এর মালিক কে এই আবু তালেব, কোথায় রয়েছে সে?
05:57
Video thumbnail
Weather Update | আরও সাত দিন তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা, উত্তরবঙ্গের ৩ জেলায় ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা
01:05
Video thumbnail
Sandeshkhali | সন্দেশখালিতে অস্ত্র উদ্ধারে CBI-NSG, নির্বাচন কমিশনে তৃণমূল
13:55
Video thumbnail
KKR vs PBKS | বোলিং ব্যর্থতাতেই পঞ্জাবের বিরুদ্ধে গো-হারা কলকাতা
03:14
Video thumbnail
Sandeshkhali | শেখ শাহজাহানের গড়ে আরডিএক্সের খবর কোথা থেকে পেলেন শুভেন্দু?
04:06
Video thumbnail
Kamarhati | 'জিততে পারলে, কামারহাটিতে BJPর কবর দেব' বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মদনের
04:02
Video thumbnail
Sandeshkhali | 'পুলিশকে না জানিয়ে কেন অপারেশন?' মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে নালিশ তৃণমূলের
05:20