আরএসএস–বিজেপির সমস্যা হল এদের যাবতীয় প্রশংসা নিজেদেরই করতে হয়, মানে নিজেদের ঢাক নিজেই বাজাতে হয়। আগেকার দিনে রাজারাজড়াদের মতো আর কী। ধরুন এদের গুরুদেব সাভারকর, ওনার জীবনী প্রকাশিত হল, লেখকের নাম আগে কেউ কখনও শোনেইনি, লেখকের নাম ছিল চিত্রগুপ্ত, বইটার নাম ছিল লাইফ অফ ব্যারিস্টার সাভারকর, এই বইতেই তাঁকে বীর সাভারকর বলা হয়েছিল। বহু পরে এই ১৯৮৭তে এই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশক রবীন্দ্র রামদাস নিজেই জানিয়েছিলেন, চিত্রগুপ্ত আর কেউ নয়, স্বয়ং সাভারকর। মানে ইতিহাসের সেই গিনে চুনে লোগ যিনি নিজেই নিজেকে বীর উপাধী দিয়েছিলেন। কারণ ততদিনে সুভাষ বসু নেতাজি, গান্ধীজি মহাত্মা হয়ে গেছেন, ওনাকেও একটা কিছু হতেই হত। ঠিক সেভাবেই ওনার উত্তরসূরি আমাদের ফকির কাম চওকিদার কাম চায়ওলা সাহেব নিজেকে বিশ্বগুরু হিসেবে প্রজেক্ট করেছেন, তিনিই নাকি বিশ্বগুরু, বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন, ওয়ার রুকুয়া দিয়া পাপা তো আমরা জানি। তো সেই বিশ্বগুরুর দেশকে পশ্চিম গণমাধ্যম বা পশ্চিমের বহু সংস্থা কোন চোখে দেখে?
ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, “ক্ষোভ দমিয়ে জয়ী হওয়াটা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর।” কে ক্ষোভ দমাচ্ছে?দেশের সরকার, সরকারের মাথায় থাকা মোদিজি। কাদের ক্ষোভ, নিশ্চয়ই আম্বানি আদানিদের নয়, দেশের কৃষক শ্রমিক, সংখ্যালঘু মানুষজন। দ্য ফিনানসিয়াল টাইমস প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে বিজেপিই কি গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম- দক্ষ রাজনৈতিক দল। রুথলেসলি এফিসিয়েন্ট কথাটা তাঁরা ব্যবহার করেছেন। ওই লেখাতেই বলা হয়েছে মাদার অফ ডেমোক্রেসি ভালো নেই। ব্লুমবার্গ লিখছে, “কোটিপতি রাজ ভারতকে স্বৈরাচারী করে তুলছে, কোটিপতি মালিকেরা প্রেসের। স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের গলা টিপে ধরছে। ফ্রান্সের লা মঁদ বলেছে আজকের ভারত নামেই গণতন্ত্র। টাইমস লিখেছে, ভারত মাথা তুলছে, পশ্চিমি দেশগুলো কি মোদিকে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা থেকে ঠেকাতে পারবে? দ্য অ্যাটলান্টিক ম্যাগাজিন লিখেছে, ভারতে আইনের শাসনের কী হল? বিশ্বজুড়ে আমাদের স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর কী অপূর্ব ছবি। এই ছবিই কি আমরা দেশের মধ্যে দেখছি না। আজ আমরা ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের জেলে পোরার ঘটনা রোজ দেখছি, ৯৮ শতাংশ অভিযোগ আর গ্রেফতারি বিরোধী নেতাদের জন্য বরাদ্দ। সাংবাদিক থেকে সমাজকর্মীদের জেলে পাঠানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-৪৯)
ইডি-সিবিআইকে দিয়ে তোলাবাজির ছবিও আজ পরিষ্কার। মোদি শাহ নাড্ডা তোলাবাজি করে টাকা তুলেছেন নিজেদের ঘরে। এখন তাতেও শান্তি নেই, এনআইএকে নামিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে, রাতের অন্ধকারে ৩/৪/৫ বছর পুরনো মামলাতে ধরপাকড় চলছে। বিশ্বগুরু সামান্য বিরোধিতাও সহ্য করবেন না, এটাই হল বটম লাইন আর সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই আমাদের সম্পাদক জেলে। আমরা আইনের শাসন চাই, আমরা সুবিচার চাই, আমরা জস্টিস চাই, জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: