skip to content
Friday, December 13, 2024
HomeBig newsমোদি স্টেডিয়ামে নেমে এলো মারাকানজো

মোদি স্টেডিয়ামে নেমে এলো মারাকানজো

Follow Us :

আমেদাবাদ: ম্যাচ পূর্বাভাস মেলেনি সেটা প্রথমেই স্বীকার করে নিয়ে বলি — শতাব্দীর সবচেয়ে জৌলুসভরা বিয়ে বাড়িতে খরচা করে প্লেনের টিকিট ফিকিট কেটে যদি শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন খেয়ে ফেরত আসেন তাহলে কেমন লাগবে ?

কাপ ফাইনালের হতমান দর্শকদের আপাতত সেই অবস্থা। ক্ৰোধ নিশ্চই কোনো একটা সময়ে আসবে।আপাতত বিহ্বলতা।

অজান্তেই যেন ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে বিশাল জাতীয়তাবাদী বিস্ফোরণের গর্ভস্থল হতে বসেছিল নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। সকাল থেকে স্টেডিয়ামের বাইরে- ভেতরে যা সব কোলাজ তৈরি হচ্ছিল তাকে সত্যি দেখছি কিনা এক একসময় সন্দেহ হচ্ছিল। ফিল্মে সেট তৈরি করে হয়। কিন্তু ক্রিকেটমাঠে স্বতঃস্ফূর্ত ঘটছে। জাতীয় পতাকার যেন মেলা বসেছে । গোটা মাঠের গেরুয়া গ্যালারিতে নীলরঙা জার্সির ভিড় হয়ে একটা অদ্ভুত কালার কম্বিনেশন। তরুণীরা সেই নীলের সমুদ্রে নাচছে যেন মাঠে ঢোকার আগেই এটা জাতীয়তাবাদি ডিস্কোথেক। মহিলারা খোলা গাড়িতে করে ভিআইপি গেট দিয়ে বন্দেমাতরম গাইতে গাইতে মাঠে ঢুকছেন। কোরাস চলছে ম্যাচের দু ঘন্টা আগে থেকেই —-ইন্ডিয়া ,ইন্ডিয়া। ভারত খেললে বিশ্বের সর্বত্র হয়। ওয়াংখেড়ে সেমি ফাইনালেও হয়েছে ক’দিন আগে। কিন্তু এই মাত্রায় উগ্র জাতীয়বাদ সেখানে প্রকাশ পায়নি। ট্র্যাভিস হেড- লাবুশেন পার্টনারশিপে একশো রান উঠে যাওয়ার পরেও গ্যালারি চিৎকার করে যাচ্ছিল– -জিতেগা ভাই জিতেগা। ইন্ডিয়া জিতেগা। টানা দশ ম্যাচে ভারতের দশ জয় যেন দর্শক-আত্মবিশ্বাসকে এমন চূড়োয় তুলে দেয় যে ম্যাচ টিকিটে খেলা দেখতে যাওয়া আজ প্রথম অংশ। আসল হল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পার্টিতে নেমন্তন্ন পেয়ে গিয়েছি। খেলাটা জাস্ট শেষ করে কাপটা তুলে নিক। তার সঙ্গে সেলফি তুলে বাড়ি যাব।

প্রধানমন্ত্রী আসবেন। সকাল থেকে তাই আদ্ধেক রাস্তাঘাট বন্ধ। সকাল নটার কথা বলছি। অথচ তিনি এলেন রাত নটা নাগাদ। তার চেযেও আশ্চর্যের নিজের স্টেডিয়ামে নরেন্দ্র মোদী এলেন কার্যত তাঁর উপস্থিতি নিয়ে কোনও হাঁকডাক হল না। পুরস্কার বিতরণের আগে তিনি চলেও গেলেন মাত্র কয়েক ওভার খেলা দেখে। বেশি রাতে তাঁর টুইট দেখলাম টিমের সঙ্গে থাকছেন প্রবলভাবে। কিন্তু কোথাও মনে হয় মাঠের অঙ্গসজ্জা যদি একশো চল্লিশ কোটি মানুষের ভাবনা অনুযায়ী চলত , তাঁকে অনেক সরব ভাবে পাওয়া যেত।

রাজা -প্রজা -মন্ত্রী কেউ আসলে ভাবতে পারেনি একটা নিখুঁত চিত্রনাট্যের পরিণতি অকস্মাৎ বিগড়ে খাদের দিকে এভাবে লাট খেতে পারে। ৪৩ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ২৪০ চেস করে দেওয়ার পর গ্যালারির কোথাও কোনো বিদ্বেষ বা টিমকে গালাগালি চোখে পড়ল না। রোহিত শর্মা তো রানার আপের পুরস্কার নিতে এসে যথেষ্ট হাততালি পেলেন। আসলে এই আবেগটা চৈতন্য সাময়িক অসাড় হয়ে যাওয়ার এবং অবিশ্বাসের। ফাটিয়ে জিতবো জেনে যাচ্ছি। অথচ উপহার হিসেবে এমন একপেশে ফাইনাল আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল —এই কঠোর বাস্তবের সঙ্গে মানাতে পারছে না কেউ। চিৎকার করা বা গালাগাল দেওয়ার ক্ষমতাটাও যেন অবশ হয়ে গিয়েছে এমন রূঢ় ট্র্যাজেডিতে। লেসার শো। বায়ুসেনার শো। প্রীতমের গান। লহারে দো-র সঙ্গে নাচ। সবই তো হল। কিন্তু কাপ যদি না আসে বাকি সব নিরর্থক।

স্পোর্টস ইতিহাসে আবেগের মহাশূন্য থেকে সমবেত পাতালপ্রদেশের এমন ভয়ঙ্কর নমুনা একটাই খুঁজে পাচ্ছি। ১৯৫০ সালে মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের বিশ্ব ফুটবল ফাইনালে ১-২ হেরে যাওয়ার। ম্যাচে এক গোলে এগিয়ে গিয়ে এক লক্ষ তিরাশি হাজার দর্শকের সামনে ব্রাজিল হারে উরুগুয়ের কাছে। সেই ম্যাচে রিও শহরের মেয়র হাফ টাইমে আগাম পার্টি শুরু করে দেন। গোটা মাঠ যখন আগাম বিজয়োৎসবে মত্ত। খাওয়াদাওয়া। নাচ চলছে। হঠাৎ খেলার গতির বিরুদ্ধে গোল শোধ হয়। আর শেষের এগারো মিনিট আগে আচমকা গোল খেয়ে যায় পেলের দেশ। আপ্রাণ চেষ্টাতেও সেই গোল শোধ করা যায়নি। ব্রাজিলজুড়ে আজও ট্র্যাজেডি হিসেবে তাদের দেশে জার্মানির কাছে ১-৭ হারার আগে পঞ্চাশের সেই হারকে রাখা হয়। বলা হয়েছিল হিরোশিমার বোমাবর্ষণের চেয়েও অনেক বিধ্বংসী ছিল সেই হার। বাকি জীবন কয়েদির মতো নিজের দেশে কাটিয়েছিলেন ব্রাজিলের গোলকিপার। তাঁকে ব্রাজিলীয়রা আর কখনো ক্ষমা করেনি।

মোদী স্টেডিয়ামে লোক তুলনায় কম ছিল। ৯৩ হাজার। কিন্তু তার বাইরের দর্শকের ওপর হারের প্রভাব ধরলে তো মারাকানাও নস্যি। নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে এই হার। টুর্নামেন্টে এত ভাল খেলেও যদি গত দশবছরের নিয়তি আইসিসি টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে –তাহলে তো আর অদূরভবিষ্যতেও ট্রফি ঘরে ঢুকবে না। রাহুল দ্রাবিড় যে শত চেষ্টাতেও কোথাও গিয়ে অর্জুনের ভাগ্য পাবেন না আজ প্রমাণ হয়ে গেল। ভাইস ক্যাপ্টেন হয়ে ২০০৩ সালে রানার আপ। চার বছর বাদে ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রাথমিক পর্বে বিদায়। আর এখানে কোচ হিসেবে ফেভারিট হয়েও জয়ীর মেডেল নিয়ে বাড়ি ফিরতে না পারা। টিমকে নতুনভাবে তৈরি করেও পাথরচাপা কপাল। একটা পর্যায়ের পর আর শচীন বা বিরাট হতে দেয় না। বললেন কোচ হিসেবে ভবিষ্যৎ ঠিক করেননি। কিন্তু এমন ট্র্যাজিক হারের পর তিনি ছেড়ে দিলে আশ্চর্য হব না।

রিচার্ড কেটেলবোরো টিম ইন্ডিয়ার জন্য সর্বাত্মক অপয়া এই মিথ আজকের পর আরো বাড়ল। ভারতের বিরুদ্ধে পিচ বিকৃত কৱা নিয়ে এত অভিযোগ। সত্যি যদি তারা রিমোটে আইসিসি কন্ট্রোল করত ,তাহলে অন্তত কেটেলবোরোকে নিজেদের নক আউট ম্যাচে আম্পায়ার হতে দিত না।

আসলে দ্রাবিড়ের কপাল। কেটেলবরোর পোস্টিং। আসল কারণ এগুলো নয়। একটাই কারণ কোথাও গিয়ে আধুনিক ভারতের বড় ম্যাচের নার্ভ গন্ডগোল করছে। এর চেয়ে অনেক উচ্চমানের পন্টিংয়ের টিমকে এগারোর বিশ্বকাপে ভারত হারিয়েছিল। সেখানে একটা যুবরাজ। একটা সেহওয়াগ। একটা গম্ভীর ছিলেন। ধোনি তো বাদ দিলাম। শচীন বাদ দিলাম। টিম ইন্ডিয়ায় রোহিত আর বিরাট বাদ দিলে সেই নকআউট নির্ভরযোগ্যতার বারবার খামতি ধরা পড়ছে। ভারতকে যে চোকার বলা শুরু হয়ে গিয়েছে তা গত দশ বছরের ইতিহাস থেকেই। সবাই ভেবেছিল রো-রা জুটি এমন জমে গিয়েছে। এবার কালের চাকা ঘুরবেই।

কিন্তু আবার নার্ভ সমস্যা করল। যা সমস্যা করা উচিত ছিল অস্ট্রেলিয়ানদের। প্যাট কামিন্স তো খেলার পর বললেন আমার কি নার্ভাস ছিলাম
না ? কিছুটা তো ছিলাম। সকাল থেকে উঠে যেদিকে তাকাচ্ছি দেখছি নীল জার্সি। টেনশন তো হবেই। তফাৎ হল অস্ট্রেলীয়রা সেই প্রেসারে চোখ করা দূরে থাক ,নিজেদের আরো বাড়িয়ে নিয়ে যান। ট্রাভিস হেডের ওই রোহিত -ক্যাচ চাপে কম্পমান কোনো ক্রিকেটার জীবনে ধরতে পারবে না। শুধু ক্যাচিং দক্ষতায় ওটা হয়না।বুকের পাতা দরকার।

ফাইনালের চাপ যখন শুভমন -সিরাজ-সূর্যকুমারকে চোক করাচ্ছে। তখন তাদের বিপক্ষ হলুদ জার্সি আরো হলুদ শস্য ক্ষেত্র হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বীরোচিত বললে কম বলা হয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে খুব ওপরের দিকে থাকবে এই জয়। ছয়বারের জয়ে হয়তো এক বা দুই।

ট্রাভিস হেড আউট হওয়ার পর যখন তাঁর সঙ্গে লাবুশেন মাঠের ধার পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেলেন এবং জড়িয়ে ধরলেন প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচকে। অসামান্য দৃশ্য তৈরি হল। যা বোঝায় কী পরিমান চাপ শত্রুসংকুল পরিবেশে কামিন্সদের ওপর ছিল। কিন্তু এজন্যই অস্ট্রেলীয়রা ফাইনাল জেতে। কারণ তাদের ফাইনাল জেতার নার্ভ আছে।

বিরাট কোহলি প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট জেতার ট্রফি নিতে গিয়ে যে ফ্যাকাশে মুখচোখ করে এলেন দ্রুত ওয়ান্ডারার্সের শচীনকে মনে পড়ল। সেবার ফাইনালে হেরেও গ্যারি সোবার্সের কাছ থেকে ট্রফি নিতে শচীন এমনি প্রাণহীন মুখচোখে হেঁটেছিলেন। আর জীবন এমন আশ্চর্য বদলায় যে এদিন শচীন নিজে তুলে দিলেন সেই পুরস্কার।

একটা জিনিসই বদলালো না। কুড়ি বছর আগে অজিদের কাছে ফাইনাল হারের সেই ধারা। বরং শোকের জায়গায় পড়ল নতুন শোকের তরোয়াল। এমনি গভীর মনে হচ্ছে এবারের ক্ষত যে আসছে বছর আবার হবে বলার উপায় নেই। আগামী চার বছরেও হবে কিনা ঘোরতর সন্দেহ। ম্যাচ প্রেডিকশন যেমন ভুল হয়েছে ,এটা হলেও গভীর আনন্দিত হব।

ভয় হচ্ছে এটা বোধহয় মিলবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Priyanka Gandhi | Narendra Modi | প্রথম ভাষণেই মোদিকে কড়া আক্রমণ প্রিয়াঙ্কার, সংসদে কী অবস্থা দেখুন
00:00
Video thumbnail
Israel | ইজরায়েলি সেনাকে উড়িয়ে দিল হামাস, কী হবে এবার?
00:00
Video thumbnail
Priyanka Gandhi Vadra | সংসদে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রথম ভাষণ, কী বললেন? দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | India | খেলা শুরু ভারতের, ৩০০ কিমি দখল করে বাংলাদেশে ঢুকে গেল আর্মি, এবার কী হবে?
06:48:00
Video thumbnail
Weather Update | ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জারি শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা, কোথায় কোথায় সতর্কতা জারি?
02:17
Video thumbnail
BJP MLA | সোনামুখী পুরসভার দুর্নী*তি নিয়ে বিজেপি বিধায়কের পোস্ট, পাল্টা হুঁশিয়ারি চেয়ারম্যানের
01:22
Video thumbnail
বাংলা এখন (Bangla Ekhon) | বাংলা এখনে দেখুন রাজ্যের সবচেয়ে আপডেট খবর
05:18
Video thumbnail
Iran | Syria| Ali Khamenei| খামেনির হুঙ্কার, সিরিয়া দখল করবে ইরান?
02:10:01
Video thumbnail
Allu Arjun Arrested | বিগ ব্রেকিং! গ্রেফতার অভিনেতা আল্লু অর্জুন
01:29:58
Video thumbnail
Syria | Israel | আল জোলানির হুঙ্কার , পরবর্তী টার্গেট নেতানিয়াহু? দেখুন বড় খবর
02:45:58