কাঞ্চন কেন বিধায়ক? কারণ মমতা ব্যানার্জির ইচ্ছে হয়েছে তাই। আর কোনও একটা কারণও কি দেখানো যাবে? অভিনেতা কত বড়? গোটা দশ ছবি দেখুন, যেখানে কাঞ্চন মল্লিক আছেন, বুঝতে পারবেন নিজেই, গোটা চারেক এক্সপ্রেশনের রিপিটেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। সমাজ নিয়ে কিছু ভেবেছেন? দেশ নিয়ে? রাজ্য নিয়ে? মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, দেশের অর্থনীতি নিয়ে, বাজার নিয়ে, শিল্প বা কৃষি নিয়ে একটা সিরিয়াস কথা শুনেছেন কখনও ওনার মুখে, কিন্তু উনি বিধায়ক। আপাতত খবরে বিয়ের জন্য। দেশে আইন আছে, বিয়ে আছে, ডিভোর্সও আছে, আবার বিয়ে করাটা বেআইনি নয়, করেছেন বেশ করেছেন, এবার নিজের বিয়েতে হাফ প্যান্ট পরে নাচবেন না ফুল প্যান্ট সেটাও ওনার অধিকার। আম আদমির তো ওনার বিয়েতে নেমন্তন্ন ছিল না আর খুব সাফ লিখেও দেওয়া হয়েছিল এমনকী নিমন্ত্রিতদের ড্রাইভার বা দেহরক্ষীদেরও বিবাহস্থলে ঢোকা নিষেধ, বিয়ে দেখা নিয়ে সমস্যা নাকি প্লেটের দাম নিয়ে সমস্যা সেটা জানা যায়নি। কিন্তু এটাও সমস্যা নয়, কারণ তা তো ছিল ওনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবং এসব নানান বখেড়ার মধ্যে নির্বাচন চলে এসেছে। দেশ জুড়ে নির্বাচন, সংবিধান, সিএএ, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিজেপি বিরোধী জোট, জঙ্গি জাতীয়তাবাদ এসব শব্দের একটার সঙ্গেও পরিচয় নেই আমাদের কাঞ্চন মল্লিকের। থাকবে, এটা কেউ আশাও করে না। কিন্তু নির্বাচনে প্রচার তো করতে হবে। তো তাঁর বিধানসভা এলাকা উত্তরপাড়া পড়ে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে, যেখানে প্রার্থী তৃণমূলেরই কল্যাণ ব্যানার্জি, তিনি ম্যাটাডোরে চেপে বসলেন, কল্যাণ ব্যানার্জি হাতজোড় করে ঘুরবেন, তিনি পাশে হাত নাড়াবেন, যেমনটা হয় আর কী। কিন্তু এইখানেই হল সেই কেলো, আপনারা সেমসাইড গোলও বলতেই পারেন, কল্যাণবাবু বললেন নেমে যান, আপনার তিনটে বিয়ে করা ইমেজ আমার ভোটারদের কাছে আমার ইমেজ নষ্ট করবে, কাজেই অনেক হয়েছে কেটে পড়ুন। অন্য কোনও বিধায়ক হলে সঙ্গে থাকত অনুগামী ইত্যাদি। ঝাড়পিট শুরু হত। কাঞ্চন মল্লিক যে স্টাইলে রাজনীতি করেন তাকে বলে ফোকটায় রাজনীতি, হ্যাঁ ফোকটে রাজনীতি, নিজের অর্জিত নয়, মাটিতে লেগে থেকে, লড়ে আসন জেতা যাকে বলে, তিনি তো তা নন, নেত্রীর কৃপাধন্য, ব্যস। কাজেই সুড়সুড় করে নেমে বাইকে চেপে ধাঁ। আর করারই বা কী ছিল। কিন্তু এ তো গোপনে হয়নি, সর্বসমক্ষে হয়েছে, কাজেই সেটাই বিষয় আজকে, কাঞ্চণ কল্যাণ কথামৃত ও সেমসাইড গোলের আখ্যান।
এমনিতে কাঞ্চন কল্যাণ সম্পর্ক কীরকম? খারাপ কি? শোনা যায় সন্ধেবেলাতে ওনাদের আলোচনা জমে ওঠে, যেরকমটা প্রায়শই হয়। দিনের বেলায় কি আলোচনা জমে? তো কাঞ্চনকে বিভিন্ন সান্ধ্য আসরে দেখা যায় কল্যাণের সঙ্গে। পুজোর সময় ধুনুচি নাচেও দেখা গেছে, আহা সে কী নৃত্য। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ, যদিও এই নেত্যতে অ্যাডভানটেজ কাঞ্চন।
আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপি সাংসদ প্রার্থীরা সিএএ ফর্ম ভরছেন না কেন?
তাহলে কি সত্যিই তিনটে বিয়ে, সাম্প্রতিক ডিভোর্স এবং বিয়ে নিয়ে কাঞ্চনের ইমেজে এতটাই গ্যামাক্সিন পড়েছে যে তাঁকে নিয়ে প্রচারেই বের হতে পারছেন না তৃণমূলের সাংসদ? উত্তরপাড়ার ভোটারদের কি রাইট টু রিকল করার ডাক দেবেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়? নাকি সমস্যা কেবল গ্রামের ভোটার নিয়ে? যাঁরা সন্ধেবেলার সিরিয়ালে এর থেকেও অনেক জটিল বিবাহ সম্পর্ক তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন, তাঁরা কি সত্যিই কাঞ্চনের ডিভোর্স বা বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তিত? বা এমনকী যে উনি সঙ্গে থাকলে কল্যাণবাবুর ভোট কমে যাবে? নাকি সমস্যা আলাদা কোনও জায়গাতে? কোথাও কি কল্যাণবাবু খেই হারাচ্ছেন? উনি খুব প্রাচীনপন্থী গোঁড়া হিন্দু রীতি, সাতজন্মের চিরদিনই তুমি যে আমার গোছের বিশ্বাস নিয়ে চলেন, তাও তো নয়। কাছের মানুষজন খুব জানেন সেসব রসে বশে জীবনযাপনের কথা। তাহলে? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কাঞ্চন মল্লিক তৃণমূল করেন, দলের বিধায়ক, কল্যাণ ব্যানার্জিও তৃণমূলই করেন, দলের সাংসদ, তাহলে কেন প্রচার গাড়ি থেকে নিজের দলের বিধায়ককে এরকম অপমান করে নামিয়ে দিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি? পিছনের রহস্যটা কী? শুনুন দর্শকরা কী বলেছেন।
আসলে এক নিশ্চিত আসনে, নিশ্চিত জয়ের সামনে দাঁড়িয়েও অসম্ভব নার্ভাস কল্যাণ ব্যানার্জি। শোনা যাচ্ছে কিছুদিন ধরেই তিনি তাঁর মেজাজ হারাচ্ছেন, একে তাকে অকারণেই ধমক দিচ্ছেন, গতকাল কাঞ্চণ মল্লিককে সেই নার্ভাসনেসের শিকার হয়েই তিনি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলেন? যদি তাই হয় তাহলে তো ঠিকই আছে, এসব অভদ্রতা তো এসব দলের মধ্যে লেগেই থাকে, কিন্তু যদি তা না হয়? যদি সিরিয়াসলিই একজন মানুষের বিবাহ আর বিবাহ-বিচ্ছেদই নির্বাচনের ইস্যু হয়ে ওঠে? তাহলে তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। নির্বাচন মানুষের রুজি রুটি, চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থের ভিত্তিতেই হওয়া উচিত, তা যদি এই নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে তাহলে তা চিন্তার বিষয় বইকী।