Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | মোদি–শাহ ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের আয়ু কতদিন?
Fourth Pillar

Fourth Pillar | মোদি–শাহ ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের আয়ু কতদিন?

প্রতি বছর এমপি বা এমএলএদের এফিডেভিট চেক করুন, তাঁদের রোজগার বাড়ছে

Follow Us :

এমনিতে আমাদের দেশের গণতন্ত্র যে খুব আহামরি কিছু একটা ছিল তেমন মনে করার তো কোনও কারণ নেই। কারণ নেই এইজন্যই যে স্বাধীনতা এসেছে ১৯৪৭ সালে, আজকেও ২০ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর, সই করার মতো অক্ষরজ্ঞানও নেই। দেশের ১৭ শতাংশ গ্রামে পানীয় জলের কোন ব্যবস্থাই নেই, দেশের ১৯ শতাংশ অঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এখনও দেশের ৮০ কোটি মানুষকে সরকারের দেওয়া ৫ কেজি আনাজের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়, আজকের হিসেবে দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষের কাছে আছে ২০ শতাংশ সম্পদ, আর ৭ শতাংশের কাছে ৮০ শতাংশ সম্পদ। ওই ৯৩ শতাংশ মানুষের আবার উপরের ৩০ শতাংশের কাছে আছে ১৬ শতাংশ সম্পদ। মানে দেশের কমবেশি ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের ৪ শতাংশ সম্পদও নেই। ১৯৪৭ থেকে আজ অবধি কোনও একটা ক্রিমিনাল মামলাতে একজন কোটিপতি মানুষ বা তার সন্তানের ফাঁসি হয়নি। এই বাংলা শেষ ফাঁসি দেখেছিল এক গৃহপরিচারকের। এত বৈষম্যই বলে দেয় যে গণতন্ত্র, মানে আমাদের দেশে বহাল গণতন্ত্রে কেমিক্যাল লোচা আছে, ভালো রকমের গড়বড় আছে। এ গণতন্ত্র দেশের পয়সাওলা মানুষজনের গণতন্ত্র, তাদের শিক্ষার গণতন্ত্র, তাদের আমোদ প্রমোদ আহ্লাদের গণতন্ত্র। কিন্তু তবুও তাও বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতে হয় বইকী, যদি সেটুকুও চলে যায়? তাহলে চুঁইয়ে পড়া যেটুকু জোটে, সেটুকুরও গঙ্গাযাত্রা হয়ে যাবে। সেটা কারা বাঁচাবে? সেটার দায়িত্বও কিন্তু ওই মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষজনের। গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসবের পরিসংখ্যান তো তাই বলে।

দেশের সবথেকে ধনী এলাকাগুলোতে ভোটদানের হার ৪৫ শতাংশেরও কম, অন্যদিকে দেশের দরিদ্রতম এলাকায় ভোট পড়ে ৭০ শতাংশ বা তারও বেশি। সেদিন ৩০০-৪০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি হয়, সেদিন এক প্যাকেট আলুর দম, ঘুগনি পাউরুটি মুড়ির জন্য ভোট পড়ে, এক বোতল কমদামি মদ হলে তো কথাই নেই। আহা আমাদের গণতন্ত্র। দেশের মানুষ গরীব, তাতে কী? দেশের নেতারা বড়লোক। লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে, ছোট্টবেলায় এমনটাই বোঝানো হত। এখন অনেক সোজা আর সরল হিসেবে বড়লোক হওয়ার, সবথেকে সোজা উপায় হল রাজনীতিতে নামা, এমপি-এমএলএ হওয়া। ব্যবসা করো, দোকান খোলো, বিভিন্ন সার্ভিস দাও, তার জন্য বহু খাটাখাটনি, তার জন্য বহু পরিশ্রম, তার জন্য অনেক হ্যাপা সহ্য করতে হবে। সোজা এবং সরল উপায় হল রাজনীতিতে নামুন, মানুষের সেবা করার কথা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বলে গেছেন, মানুষের সেবা করুন, পয়সা, স্বাচ্ছন্দ্য ঝরে ঝরে পড়বে। কেবল আপনাকে আপনার বিবেক বাঁধা রাখতে হবে গড়ের মাঠে, আপনার মনুষত্ব বোধ বুদ্ধি চেতনাগুলোকে বাবুঘাটে ছেড়ে আসতে হবে, তারা ভেলপুরি ফুচকা খাক, গঙ্গায় নৌকো করে ঘুরুক, আপনি মন দিয়ে রাজনীতি করুন। ভাবছেন কেবল শাসকদলের রাজনীতি করতে হবে? আরে না না, কেবল রাজনীতি করতে হবে, যে কোনও দলের রাজনীতি, তারপর পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলর, এমএলএ, এমপি এরকম কিছু একটা। পরে দলবদলের কথাও ভাবতে পারেন। যেখান থেকে হোক শুরুটা করে দিন। আপনার রোজগার বাড়বে। সারা দেশের মানুষের রোজগার কমছে, বাড়ছে না। কিন্তু প্রতি বছর এমপি বা এমএলএদের এফিডেভিট চেক করুন, তাঁদের রোজগার বাড়ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আচ্ছা এ রাজ্যের পরপর তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন এমন চার দলের চারজন এম পির এফিডেবিট তা দেখে জানাচ্ছি তাঁদের রোজগার কত শতাংশ বেড়েছে। তার আগে দেখে নিন আমাদের দেশের মাথা পিছু রোজগার কত বেড়েছে।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | দ্য গ্রেট চাণক্য অমিত শাহের ট্র্যাক রেকর্ড কিন্তু খুব ভালো নয়

২০১৪তে মাথা পিছু রোজগার ছিল ৭২৮০৫ টাকা, সেটা ২০২২-২৩ এ হয়েছে ৯৮৩৭৪ টাকা। এটা গড় হিসেব, মানে এতে আপনার রোজগার আছে, আপনার পাড়ার কালোদা যিনি চা বিক্রি করেন তাঁর রোজগার আছে, হাবুদা যিনি রিকশা চালান তাঁর রোজগার আছে, আবার মুকেশ আম্বানির রোজগারও আছে। আয়ের বৈষম্যকে যদি বাদ দিয়ে হিসেব করা যেত ভালো হত, কিন্তু সরকার সেরকম কোনও হিসেব করে না, করলেও জানায় না। আমার ধারণা উপরের রোজগার মানে উপরের ২০ শতাংশ মানুষের মোট আয় বাদ দিয়ে আয়ের গড় হিসেব বার করলে সেটা ওই ৭০-৭২ হাজারেই থাকবে কিংবা তার কমই হবে। সেই ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ, ম্যাঙ্গো পিপল, আম আদমি, যাঁদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠান তাঁদের প্রতিনিধি করে, তাঁদের হিসেবটা দেখুন। শুভেন্দু অধিকারী, ওনার ২০১৪তে মোট ঘোষিত সম্পদ ছিল ৬৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৬৭ আর ২০২১-এ সেটা হয়েছে ১ কোটি ৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৪৯। ওনার ১৫টা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে, ৬টা লাইফ ইনসিওর‍্যান্স পলিসি আছে, কৃষিজমি আছে ২টো, অকৃষি জমি আছে সাতটা, বাড়ি আছে তিনখানা। উল্টোদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ২০০৯-এ ওনার মোট ঘোষিত সম্পদ ছিল ৪১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৪৭৯, ২০১৯-এ সেটা ছিল ৬ কোটি, ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩৫৫। আসুন অধীর চৌধুরীর হিসেবটা দেখা যাক, ২০০৯-এ মোট ঘোষিত সম্পদ ছিল ২ কোটি ৯৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৫৭ টাকা আর ২০১৯-এ মানে ১০ বছর পরে সেটা ছিল ১০ কোটি ১৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৪৩৭ টাকা। এবারে আসুন হিসেব নিই মহম্মদ সেলিমের, ২০০৯ সালে ছিল ৮৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৪৬৭ টাকা আর ২০১৯-এ সেটাই হয়েছিল ৯৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৫১ টাকা, মাথায় রাখবেন, উনি কিন্তু পার্টির হোল টাইমার, সর্বসময়ের কর্মী।

এই পর্যন্ত শুনে কেউ কেউ উসখুস করছেন, কই মমতা ব্যানার্জির হিসেব দিলেন না তো? দিতে কি ভয় লাগছে? না লাগছে না, আগেই বলেছি আমার কোনও দায় নেই, দিইনি কারণ উনি সেই সব বিরল রাজনীতিবিদদের তালিকায় যাঁর ঘোষিত আয় কমেছে, অনেকটাই কমেছে। ব্যতিক্রম বলেই তার উল্লেখ করিনি। এবারে বিষয়ে ফেরা যাক। আমাদের রাজ্যের হিসেব তো হল, এবার দেশের কথা। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম নামের এক সংগঠন ক’দিন আগের এক সমীক্ষাতে জানাচ্ছে যে আমাদের দেশের লোকসভা সদস্যদের গড় সম্পদ ২০ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা, রাজ্যসভা সদস্যরা আরও বড়লোক, তাঁদের গড় সম্পদ ৭৯ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। হ্যাঁ, দেশের মানুষ যাঁরা ভোট দেন তাঁদের গড় আয় ৭০-৭২ হাজার টাকা, তাঁদের সেবা করার জন্য যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের গড় সম্পদ লোকসভাতে ২০ কোটি, রাজ্যসভায় ৭৯ কোটি টাকার বেশি। লোকসভার ৩৪ শতাংশ, রাজ্যসভার ৩৮ শতাংশ সদস্যদের নিজের আয় ১০ কোটি টাকার বেশি। একবারও ভাববেন না যে এই তালিকাতে বিরোধী নেতারা নেই, সবচেয়ে ধনী রাজ্যসভা সদস্য ডঃ বন্দি পার্থ সারথির মোট সম্পদ ৫৩০০ কোটি টাকা, উনি তেলঙ্গানার বিআরএস দলের প্রতিনিধি। সমাজবাদী দলের জয়া বচ্চনের সম্পদ ১০০১ কোটি টাকা। কংগ্রেসের নকুল নাথ, কমল নাথের পুত্র, ওনার মোট সম্পদ ৬৬০ কোটি টাকা। কংগ্রেসের সাংসদ ডি কে সুরেশের মোট সম্পদ ৩৩৮ কোটি টাকা। অবশ্য বিজেপির রেকর্ড সবচেয়ে ভালো, কারণ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল, তাঁদের ৯২ জন সাংসদের ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে। কংগ্রেসের ২১ জনের, ডি এমকের ১৩ জনের, ওয়াইএসআরসিপি জগন রেড্ডির দলের ১৩ জন সাংসদের মোট সম্পদ ১০ কোটি টাকার বেশি। এটা লোকসভার হিসেব, রাজ্যসভায় বিজেপির বিজেপির ৩৬ জন, কংগ্রেসের ২০ জন আর ওয়াইএসআরসিপির ৭ জন ওই ১০ কোটি ক্লাবের সদস্য। রাজ্যসভায় ১৩ জন তৃণমূল সদস্যের গড় সম্পদ ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ। বামপন্থীদের সম্পদের পরিমাণ অনেক কম, তাঁরা নির্বাচনী বন্ডের টাকা নেননি। এ অহঙ্কার তাঁদের থাকতেই পারে, কিন্তু এই প্রত্যেক বিরোধী দলের সঙ্গেই তাঁদের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনের মঞ্চে তো তাঁরাও আছেন, তাঁদের অহঙ্কার আর গর্বের কথা বলার সময়ে এটাও তো মাথায় থেকেই যায়।

তো যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, খুব তাড়াতাড়ি বিরাট বড়লোক হতে চাইলে রাজনীতিতে নামুন, নামার বহু উপায় আছে, শর্টকাট পদ্ধতি আছে, খুব শিগগির কেউ না কেউ সেই শিক্ষার কোর্সও শুরু করবে, ট্রেন কম্পার্টমেন্ট-এ ১০০টি সহজ উপায়ে ব্যবসা শুরু করুন, ৫০টি টাকা অর্জনের পদ্ধতি ইত্যাদি বইয়ের মধ্যে এই কোর্স এল বলে। বড়লোক হতে চাইলে রাজনীতি করুন, পলিটিক্স করুন। কিন্তু সেই অবশিষ্ট গণতন্ত্রও মোদিজির পছন্দ নয়। আসলে আরএসএস–বিজেপির সাধারণ ধারণাই তো গণতন্ত্রের উল্টোপথে চলে। তারা মনে করে এক রাষ্ট্র, এক ভাষা, এক নেতা, সেখানে নির্বাচন এক বোঝা মাত্র। খেলা শুরু হয়েছে স্বাভাবিক কারণেই গুজরাত থেকেই। কলেজ নির্বাচন, ক্লাব নির্বাচন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা শুনেছি আনকন্টেস্টেড উইন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের কথা, এবারে লোকসভাতেও সেটা দেখা গেল, প্রথমে সুরাতে, সেখানে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে যিনি ফর্ম জমা করেছেন তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, জিতে গেছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশের  খাজুরাহ আসনে মূল প্রতিপক্ষ সমাজবাদী দলের মীরা যাদবের প্রার্থীপদ বাতিল হয়েছে, প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়ার জন্য বিরোধীরা একজন ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছেন, তিনি কতক্ষণ উইকেটে টেকেন সেটা দেখার। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই গোটা চার পাঁচ আসনে বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেলে যাঁরা অবাক হবেন, যাঁদের হাঁ মুখে মাছি পড়বে তাঁদের জানিয়ে রাখি, এই সংখ্যাটা আগামী নির্বাচনে কমসম করেও দু আড়াইশোতে ঠেকবে। এবং তারপরে গণতন্ত্রের নেংটি এই নির্বাচনও থাকবে না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Election | মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে অবাধ নির্বাচনের লক্ষে আঁটসাঁট নিরাপত্তা, দেখুন ভিডিওতে
09:32
Video thumbnail
Loksabha Eledction 2024 | মালদহ উত্তর ও মালদহ দক্ষিণে ভোটের কী পরিস্থিতি দেখুন ভিডিওতে সরাসরি
04:48
Video thumbnail
Loksabha Eledction 2024 | আজ তৃতীয় দফার ভোটে মালদহে কী পরিস্থিতি দেখুন ভিডিওতে সরাসরি
03:51
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় কংগ্রেস নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি
06:17
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | ভোট শুরু হতেই ইভিএম খারাপ–বোমাবাজি–মারধর, তপ্ত মুর্শিদাবাদ
15:23
Video thumbnail
Eledction 2024 | তৃতীয় দফা ভোটে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে কোথায় কী পরিস্থিতি দেখুন ভিডিওতে
08:38
Video thumbnail
Lok Sabha Election 2024 | গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্রে মোদির সঙ্গে ভোট দিতে এলেন শাহ, দেখুন ভিডিওতে
02:07
Video thumbnail
Election 2024 | মালদা-মুর্শিদাবাদের ৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ, অবাধ নির্বাচনের লক্ষে আঁটসাঁট নিরাপত্তা
13:22
Video thumbnail
Loksabha Eledction 2024 | তৃতীয় দফা ভোটে কেন্দ্রগুলিতে কড়া নজরদারি কেন্দ্রীয় বাহিনীর
03:12
Video thumbnail
Eledction 2024 | চার আসনে মধ্যে মালদহ উত্তর ও মালদহ দক্ষিণে ভোটের কোথায় কী পরিস্থিতি দেখুন ভিডিওতে
17:21