দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভাতে বলছেন দঙ্গাইয়োঁ কো উলটা লটকা কে মারুঙ্গা। মানে হলো দাঙ্গাবাজদের উলটো করে ঝুলিয়ে মারবো। আচ্ছা কে ঠিক করবে তারা দাঙ্গাবাজ কি না? কোথায় তাদের বিচার হবে? কে তাদের সাজা ঘোষণা করবে? আমাদের ভারতীয় দন্ডবিধি যা নাকি এখন মনু সংহিতার সঙ্গে মিলিয়ে দন্ড সংহিতা করা হয়েছে তার কোন ধারাতে, কোন জায়গায় এমন উলটা লটকা কে মারার শাস্তি বিধান আছে? এমন তো শুনেছি ইসলামিক দেশে হয়ে থাকে, প্রশাসন একজনকে দোষী সাব্যস্ত করলো, তাকে চৌরাস্তার মোড়ে বসানো হলো, তারপর সমবেত জনতা তার দিকে ঢিল ছুঁড়লো, শেষে একটা একে ফর্টি সেভেন এর ব্রাস ফায়ার, খেল খতম পয়সা হজম। এমনটা আমাদের দেশে যে হানাদারেরা এসেছিল, তৈমুর থেকে চেঙ্গিজের সিপাহীরা, তারা করেছে। আমাদের দেশকে কি তাহলে ইসলামিক দেশের মত বানানো হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিক করে দিলেন ও দাঙ্গাবাজ, ওকে উলটো লটকে মারা হোক। আইন নেই বিচার নেই, বিচারক নেই সবচেয়ে বড় কথা একজন দাঙ্গাবাজকেও কোন ধারাতে উলটো ঝুলিয়ে মারা হবে? অমিত শাহ সেটাই চাইছেন। এবং অমিত শাহ নন দুনিয়ার সব স্বৈরতন্ত্রীরাই এটাই চান, এক্সট্রা জুডিসিয়ারি কিলিং। আদালতের বাইরেই ইন্সাফ। উত্তরপ্রদেশের দিকে তাকান, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ঠোক দো, পুলিশ গিয়ে মেরে আসছেন। আসলে এটাই আরএসএস বিজেপির আইন সম্পর্কে ধারণা। আমাদের দেশে শাসনতন্ত্রের তিনটে ভাগ আছে, আইনসভা, মানে লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা, বিধান পরিষদ ইত্যাদি, যারা আইন তৈরি করে, পরিকল্পনা তৈরি করে, ব্যয় বরাদ্দের হিসেব তৈরি করে। প্রশাসন, যারা আইন লাগু করবে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবে, ব্যয় বরাদ্দ বুঝে খরচ করবে, তার হিসেব রাখবে। আর বিচারবিভাগ, যারা সংবিধান, আইনের রক্ষা করবে। আইন মেনে কাজ হচ্ছে কিনা তার বিচার করবে, প্রশাসন কাউকে অভিযুক্ত বলে হাজির করলে, তার বিচার করবে। কোনও নাগরিক, সে যার বিরুদ্ধেই হোক, অভিযোগ নিয়ে হাজির হলে তার বিচার করবে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৪৪)
সংবিধানে এই তিন স্তম্ভ, আইনসভা, পুলিশ – প্রশাসন, বিচারবিভাগের কাজের দায়রা, মানে তারা কী করতে পারে, কী করা উচিত তা লেখা আছে। হ্যাঁ এখনও পর্যন্ত যে সংবিধান মেনে দেশ চলছে তাতে এটা লেখা আছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানেন না? আলবত জানেন, কিন্তু এই ব্যবস্থাটাই চান না। মধ্যযুগীয় এক ব্যবস্থা চান যেখানে শাসকের হাতেই থাকবে আইন, তাদের ইচ্ছে খুশি মতন, তাঁদের যাকে দোষী মনে হবে তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে লটকানো হবে, উলটো করে ঝুলিয়ে মারা হবে, হাত কেটে নেওয়া হবে। তারজন্য তাঁরা প্রথম যে কাজটা করেন তা হল বিচার ব্যবস্থার গুরুত্ব কমিয়ে আনা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি রায় দিয়েছেন, নির্বাচনী বন্ড বে আইনী, অগণতান্ত্রিক। দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এই নির্বাচনী বন্ড অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার, মানে আবার জিতে এলে আবার একেই লাগু করা হবে। বিচার ব্যবস্থাতে নিয়োগ নেই, বিচার পাচ্ছে না মানুষ, লক্ষ কোটি বিচার ঝুলছে আদালতে। এবং মানুষ ভাবছেন বা তাকে ভাবাতে বাধ্য করা হচ্ছে যে বিচার ব্যবস্থার দরকার নেই, দোষী কে চিহ্নিত করো, ঝুলিয়ে দাও জেলে পচিয়ে মারো। তারই অঙ্গ হিসেবে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা অজস্র প্রতিবাদী মানুষ, তাদের কেউ সাংবাদিক, কেউ মিডিয়া ব্যবসায়ী, কেউ সমাজকর্মী, কেউ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, তাদেরকে জেলে পোরা হয়েছে, মিলিয়ে নেবেন, নির্বাচন হয়ে যাক, এঁদের অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হবে, আবার কিছুদিন পরে ধরে আনার জন্য। দেশের বৃহত্তম গণতন্ত্রের উৎসবে দেশের দুজন নির্বাচিত মূখ্যমন্ত্রী একটা কথাও বলতে পারছেন না, এটাই ঐ লটকা কে মারুঙ্গার এক্সটেনশন। আমাদের সম্পাদকও জেলে, ঘাড় নোয়ান নি বলেই জেলে, প্রতিবাদ করছেন এবং করে যেতে নির্দেশ দিচ্ছেন বলেই জেলে, অন্যায় অভিযোগের ভিত্তিতে জেলে, এটাই এখন নিও নর্মাল। আর আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। মোদি – শাহের নেতৃত্বে এক ইডি রাজ চলছে, এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। আমরা তাই প্রতিবাদী। আমরা জাস্টিস চাই, কেবল আমাদের সম্পাদকের জন্য নয়, দেশ জোড়া বিরোধী রাজনৈতিক দল, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, মিডিয়ার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করার বিরুদ্ধে আমরা বলে যাবো। লালু যাদব বা তামিলনাড়ুর স্তালিন বা কেরালার পিনারাই ভিজয়ন বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন সমেত দেশের প্রতিবাদী মানুষজন যে এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তের মুখোমুখি সে কথা আমরা বার বার বলবো। বলবো জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: