আচ্ছা এই ইডি তো আর বিজেপির আবিস্কার নয়, ১৯৫৭-তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেকটরেট নাম নিয়ে ইডির যাত্রা শুরু। তাহলে এই ইডির অপারেশন নিয়ে বা তার সঙ্গে সিবিআই, যা নাকি পয়লা এপ্রিল হ্যাঁ এপ্রিল ফুল দিবসেই ১৯৬৩-তে পথ চলা শুরু করে তা নিয়ে এত হৈচৈ কেন? দেশে অসাধু লোকজন আছেন, নেতা থেকে ব্যবসায়ী থেকে অনেকেই, তাঁদের বিভিন্ন অন্যায় লুটমার ধরার জন্য এইসব এজেন্সি তো থাকারই কথা, সব দেশেই আছে, আমাদের দেশেও শুরু থেকেই আছে। তো আমরা কেবল পর্যালোচনার জন্য দুটো সময়কালকে ধরে নিই, একটা হল ইউপিএ-র ১০ বছর, মানে ২০০৪ থেকে ২০১৪, মাথায় রাখুন এই সময়েই সর্বোচ্চ আদালত সিবিআই-কে সরকারের তোতাপাখি বলেছিল। অন্য সময়টা হল ২০১৪ থেকে এই ২০২৪ অবদি, এও তো সেই ১০ বছর।
তো সেই ইউপিএ জামানাতে ২৬ জন রাজনৈতিক নেতা কে ইডি ধরেছিল, যার মধ্যে ৫৩% ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলের, আর ৪৭% ছিল শাসক দলের। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অন্যান্য অনেকের সঙ্গে ১২১ জন রাজনৈতিক নেতাকে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে ১১৫ জন, মানে ৯৫% হল বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা। ইউপিএ জমানাতে অভিযান তল্লাশি গ্রেপ্তার ইত্যাদির পরে ৯৩% ক্ষেত্রে মামলা করা গেছে। আর ৩০০০ টা রেইড করে তল্লাশি করে গ্রেপ্তার করে মোদি জামানাতে মামলা করা গেছে মাত্র ২৯% তে। মনমোহন জামানাতে বিরোধী শিবিরের ২ জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ৩ জন মন্ত্রী, ৩ জন সাংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল, দোষি সাব্যস্ত হয়েছেন ৩ জন, তদন্ত চলাকালীন একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। মোদি জমানাতে বিরোধী শিবিরের ২ জন মূখ্যমন্ত্রী, ১৪ জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ১৯ জন মন্ত্রী, ২৪ জন সাংসদ, ২১ জন বিধায়ক, ১১ জন প্রাক্তন এমপি, ৭ জন এমপির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং তদন্ত চলাকালীন ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ৩ জন। এই হিসেব কেবল ইডির। এবং মাথায় রাখুন এই হিসেবের মধ্যে বিরোধী ঘনিষ্ঠ বা সরকার বিরোধী সাধারণভাবে আরএসএস বিজেপির রাজনীতির বিরোধী সমাজকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবিদের হিসেব নেই, হিসেব নেই বিরোধী রাজনৈতিক দল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদেরও।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৪৩)
এই হিসেবই পরিস্কার বলে দিচ্ছে যে মোদি – শাহের নেতৃত্বে এক ইডি রাজ চলছে, এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। আমরা তাই প্রতিবাদী। আমরা জাস্টিস চাই, কেবল আমাদের সম্পাদকের জন্য নয়, দেশ জোড়া বিরোধী রাজনৈতিক দল, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, মিডিয়ার সম্পাদককে গ্রেপ্তার করার বিরুদ্ধে আমরা বলে যাব। লালু যাদব বা তামিলনাড়ুর স্তালিন বা কেরালার পিনারাই ভিজয়ন বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন সমেত দেশের প্রতিবাদী মানুষজন যে এক ভয়ঙ্কর চক্রান্তের মুখোমুখি সে কথা আমরা বার বার বলব। বলব জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: