Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeঘোষাল নামাঘোষাল নামা (Ghosal Nama) | হে বাঙালি তুমি কোথায়?

ঘোষাল নামা (Ghosal Nama) | হে বাঙালি তুমি কোথায়?

Follow Us :

শুভ নববর্ষ। ১৪৩০-কে স্বাগত জানাই। আমার সমস্ত পাঠককে জানাই নতুন বছরের অভিনন্দন। কলকাতা টিভি ডিজিটাল-এর পক্ষ থেকে আমার আজ এক নতুন যাত্রা শুরু। শিরোনাম— ‘ঘোষাল নামা’। 

আমি জয়ন্ত ঘোষাল বলছি। আপনাদের কাছে প্রতিনিয়ত আসতে থাকব, নানান অভিজ্ঞতার পশরা নিয়ে। চল্লিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেছি। ঘুরে বেড়িয়েছি পথে-প্রান্তরে। এই যেমন ধরুন, আজ নববর্ষের দিন আমি আছি ভারতের প্রাচীনতম শহর কাশীতে (Varanasi)। 

মার্ক টোয়েন (Mark Twain) বলেছিলেন, এই বেনারস শহরটা ইতিহাসের থেকেও প্রাচীন। এই শহরে একটা সময় বাঙালিদের রমরমা ছিল। শুধু বাঙালি টোলা বলে নয়, ত্রিগুণা সেন এখানে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি-র উপাচার্য। শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয়, যোগীরাজ— তাঁর নামে এখনও রাস্তা রয়েছে বেনারসে। জয়নারায়ণ ঘোষাল এখানে এসে প্রথম স্কুল-কলেজ পত্তন করেছিলেন। 

নিছক বেনারসের বাঙালিদের হৃতগৌরবের তালিকা রচনা করা তো নববর্ষের দিনের কাজ নয়, তবে, আমার কেবল এটাই মনে হচ্ছে যে, সেই বাঙালির গৌরব গাথা গেল কোথায়? বাঙালি কি অবলুপ্ত হয়ে গেল? একটা সময় এই শহরে বাঙালিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আজ শুধু সংখ্যালঘু নয়, বাঙালিদের সেই মর্যাদাটুকুও অবলুপ্ত। 

বেনারসের কথা শুধু বলব কেন, আজ আমরা কলকাতা (Kolkata) থেকে দিল্লি (Delhi), বাঙালি জাতির অবস্থাটা কি খুব হই-চই করার মতো? গর্ব করার মতো? জাতীয় মূলস্রোত থেকে বাঙালি কি একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল? 

গত কয়েক দশক থেকে দিল্লিতে সাংবাদিকতা করছি। আর এই কথাটাই বছরের পর বছর ধরে লিখে চলেছি। এবার কি সত্যি সত্যিই বাঙালি জুরাসিক পার্কের ডাইনোসর? তারা কি এক অবলুপ্ত প্রাণী? 

রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা সময় সময় বিধান রায় থেকে অতুল্য ঘোষ, সর্বভারতীয় রাজনীতির চাবিকাঠি নিয়ন্ত্রণে তাঁদের ভূমিকা কম ছিল না। আবার জ্যোতি (Jyoti Basu) বসু থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায় (Pranab Mukherjee), সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি, কিন্তু রাষ্ট্রপতি তো হতে পেরেছিলেন। 

বাঙালিদের কিছু হতে গেলে অনেক লড়াই করতে হয়। অবশ্য বঙ্গ সংস্কৃতিতেও কি বাঙালির গুণগত উৎকর্ষ আর আগের মতো আছে? বাঙালি শিল্প-বিমুখ— এই গঞ্জনা শুনতে শুনতে বৃদ্ধ হয়ে গেলাম। অথচ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আলা মোহন দাস, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, এঁরা কিন্তু বাংলার ব্যবসাকে পথ দেখিয়েছিলেন। 

আমরা দ্বারকানাথ ঠাকুরের উত্তরসূরি হতে চাইনি। আমরা রবীন্দ্রনাথকে (Rabindranath Tagore) আঁকড়ে ধরেছি বলে বলে দাবি করি। গান-কবিতা-নৃত্য আর বই পড়া, এসবেও কি বাঙালি ভাবের ঘরে চুরি করছে? বাঙালির বই পড়া বাড়ছে বলে প্রতিনিয়ত শুনি। বই কেনাও নাকি অনেক বেড়ে গেছে। চারিদিকে বইমেলা হচ্ছে। তবে, বই পড়ছে এবং সেই বই পড়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, এমনটা খুবই কম দেখছি। আসলে হয়তো ঠিক যে ধরনের বাংলা বই বিক্রি হচ্ছে আর যে ধরনের সিরিয়াস বাংলা বই-পাঠ আগে ছিল, তার মধ্যে এখন অনেক ফারাক হয়েছে। তারা বোধহয় আজ সংখ্যালঘু। 

রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটি নির্ধারক নাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি আপনি পছন্দ করতে পারেন, আবার না-ও করতে পারেন। অনেক লড়াই করে একজন বাঙালি হিসেবে রাজনীতিতে একটা জায়গা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে নিয়েছেন। 

আজ নববর্ষে রাজনীতির (Politics) কথা বলতে আসিনি। কথা হচ্ছে বাঙালিকে নিয়ে। প্রশ্ন একটাই— বাঙালি, তুমি আজ কোথায়?

আমরা গর্বিত বাঙালি। আমরা গর্ববোধ করি রবীন্দ্রনাথের জন্য। আমরা আজ গর্ববোধ করি ক্ষিতিমোহন সেনের দৌহিত্র অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) জন্য। তবুও শুনতে হয়, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি।’ আমরা তো ক্ষুদ্র বাঙালি নই। আমরা সঙ্কীর্ণ বাঙালি নই। আমরা অখণ্ড ভারতের বাঙালি। আমরা বহুত্ববাদের বাঙালি। আমরা সমন্বয়ের সাধনায় বাঙালি। আমরা বিশ্ব নাগরিক বাঙালি। আমাদের নিতান্ত পরিচয়, আমরা বাঙালি। আসলে আমরা ভারতীয় বাঙালি। আমাদের ভারতীয়ত্বও নিতান্ত পরিচয় হয়ে যায়, যখন আমরা বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহার করি। 

কেন জানি না, আজ নববর্ষের দিনে হিন্দি বলয়ের এক প্রাচীন শহরে বসে মনে হচ্ছে, আমাদের বাঙালি অস্মিতা সম্পর্কে বোধহয় সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। আমরা আগে বাঙালি, তারপরে ভারতীয় হই। ‘বাঙালি কাঁকড়ার জাত’— এই অপবাদকে সত্য প্রমাণ করার জন্য প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছি। এক বন্ধুবর বলছিলেন, কলকাতায় একটুকরো মাংস-খণ্ড নিয়ে একশ’জন বাঙালি লড়াই করে। তাই বোধহয় বাঙালির এত গ্লানি, এত সংকীর্ণতা। এরজন্য অবশ্য আর্থ ও সামাজিক পরিস্থিতি দায়ী। আর দায়ী কর্মহীনতা। 

বাঙালি খুব সামান্য নিয়েই সন্তুষ্ট। সামান্য নিয়েই বাঙালি লড়াই করে। তার চেয়ে বেশি পাওয়ার জন্য বাঙালি অস্মিতার ঐক্য প্রয়োজন। সেটা বোধহয় বাঙালিকে বুঝতে হবে। যেভাবে তামিল-জাতীয়তাবাদী, হিন্দি-জাতীয়তাবাদীর বিরুদ্ধে লড়াই করে, আমরা বাঙালিরা কিন্তু সেটা করি না। আমরা ‘তোমার সুর, আমার সুর’ বলে গর্ববোধ করি। আজ এই নববর্ষে বোধহয় ভাবার সময় এসেছে, ‘অতঃকিম’!

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments