বুধবার রাজ্য বিজেপির বর্ধিত সাংগঠনিক বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলের ঘোষণা, এখন যেমন চলছে, বিধানসভা ভোটেও সেভাবেই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি লড়াই করবে। ২৬-এর ভোটপ্রস্তুতিতে এদিন সল্টলেকের একটি হোটেলে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকের আয়োজন করেছিল বিজেপি। সুকান্ত, শুভেন্দু ছাড়াও সব সাংসদ, সাধারণ সম্পাদক-সহ রাজ্যস্তরের সব পদাধিকারী, জেলা সভাপতি, জেলা ইনচার্জরা ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্যরা। কেবল ছিলেন না দিলীপ ঘোষ। এই বাংলায় ভোট, ভোটের প্রস্তুতির বৈঠকে দিলীপ ঘোষ নেই, এটা ভাবাও যায়? ভাবা যায় না, কিন্তু এটাই বাস্তব। দলের ১৩ শতাংশের স্ট্যাগনেশন কাটিয়ে যে নেতা দলকে ৪০ শতাংশের দোরগোড়ায় আনল সে নেই, বা থাকবে না, এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কীভাবে? এর মূল কারণ কিন্তু ওই রকেট গতির সাফল্য। দেশজোড়া বিজেপির সাফল্য, তার পরিসংখ্যান দেখলে, অ্যানালাইজ করলে বুঝতে পারবেন যে সেখানে একধরনের সাফল্য এসেছে যাকে অর্গানিক গ্রোথ বলে, মানে কাঁঠাল গাছেই পেকেছে, তাকে কিলিয়ে পাকানো হয়নি, কিন্তু এই বাংলাতে দিলীপ ঘোষ আমলে হয়েছিল এক ইন-অরগ্যানিক গ্রোথ, মানে দল তার শিকড় চালিয়ে, এই মাটি থেকেই সমর্থন হাসিল করে ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ হয়েছে এমন নয়, আর সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে সমস্যা যে সমস্যা আজ বিজেপির মুখোমুখি, যে সমস্যা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজেপিকে, সেই সমস্যার এক নাম দিলীপ ঘোষ, সেটাই বিষয় আজকে, দিলীপ ঘোষ দল থেকে বাদ পড়ছেন?
২০১১-তে ক্ষমতা হারিয়ে দু’ চারটে চড় থাপ্পড়ের বেশি পড়েনি সিপিএম কর্মীদের গায়ে মাথায়, খানিকটা নেত্রীর আদেশে, আর খানিকটা কুঁকড়ে যাওয়া সিপিএম-এর চেহারা দেখে করুণায় কেউ তেমন কিছু বলেনি। কিন্তু ২০১৬-র আগে হঠাৎ কেন সিপিএম এর মনে হয়েছিল, আবার হতে চলেছে অষ্টম বাম সরকার, তারা হঠাৎই এক মরিয়া ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল।
আরও পড়ুন: Aajke | বোমার ভয়ে কলকাতা
এইবারে মার এল, ২০১৬র জয় তৃণমূলকে দিল এক্সট্রা কনফিডেন্সে, সিপিএমকে দিল এক্সট্রা ঝাড়, এবং মাথায় রাখুন তার আগেই মোদি সরকার এসে গেছে, এদিকে তৃণমূলের দ্বিতীয় স্তরের নেতাদের সরাসরি নির্দেশেই প্রবল ঝাড় নেমে এল সিপিএম-এর উপরে। দিলীপ ঘোষের গাড়ি ভাঙা হয়েছে এই সময়েই, কিন্তু তিনি বাইক নিয়ে গামছা কাঁধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, এবং সিপিএম-এর এই মার খাওয়া কোণঠাসা পাবলিক আশ্রয় নিয়েছে বিজেপিতে, বিজেপি ১৫ থেকে ৪০ হয়েছে। ঠিক এই সময়েই দিল্লির মনে হয়েছিল সুযোগ এসেছে মুঠোয়, একঝাঁক তৃণমূল প্রথম দ্বিতীয় সারির নেতারা এলেন বিজেপিতে, সঙ্গে এলেন তাঁদের অনুগামীরা। উপরে গলাগলি কোলাকুলি হচ্ছে কিন্তু নীচে সিপিএম থেকে ঝাড় খাওয়া নেতারা সেই ১৬-১৭ থেকে এই দাদাদের রুখে দলকে দাঁড় করাচ্ছিল, তারা দেখল, ওমা তারাই আবার তাঁদের ওপরে, আর এইখানেই সমস্যা। বিজেপির নেতৃত্বে এখন সেই নব্য বিজেপিদের সংখ্যাধিক্য, কাজেই দিলু ঘোষ কোণঠাসা। সিপিএম-এর শেষ দিকের সবকটা অসুখ এখন বিজেপির গায়ে মাথায় পেটে বুকে। দলের নেতারা রিপোর্ট দিয়েছিল, রিপোর্ট নিয়ে ফের বনসলদের একরাশ বিরক্তির মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে। দলীয় সূত্রে খবর, বুথ ও মণ্ডল কমিটি গঠন নিয়ে জেলা সভাপতিদের রিপোর্ট শুনে বনসল প্রশ্ন করেন, “সত্যি কথা বলুন তো, এই রিপোর্টে কত জল মেশানো আছে? আদৌ হয়েছে কমিটি?” এক্কেবারে এই কথা ২০১৪/১৫/১৬-তে বলেছেন গৌতম দেব, কমরেডরা রিপোর্টে জল মেশাচ্ছেন, সেই কমরেডরা সেই জল মেশানোর হ্যাবিট ছাড়তে পারেনি। আর একদল ডিমরালাইজড হতাশ কর্মী বাহিনী নিয়ে সরকার দখল? অসম্ভব। অসম্ভব সেটা বুঝেছেন দিলীপ ঘোষও, তিনি সম্ভবত একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন দলকে ট্র্যাকে আনার, কিন্তু দল বেলাইন বহু আগে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, দিলীপ ঘোষ দল ছাড়বেন, নাকি অপেক্ষা করছেন দল তাকে কবে বহিষ্কার করে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
দিলীপ ঘোষ নিজে থেকে দল ছাড়বেন না, উনি ভালো করেই জানেন তাহলে তাঁর ইমেজ নষ্ট হবে, উনি জানেন যে বরং দল থেকে বহিষ্কার ওনাকে এক অন্য রাস্তায় নিয়ে যেতে পারে, দল থেকে বেরিয়ে কানাগলিতে না ঢুকে উনি এখন বাজার গরম করেই যাবেন, চাইবেন হয় দল তার কথা মানুক, না হলে বহিষ্কার করুক, তারপর রাজনীতিতে স্ট্রেঞ্জ বেড পার্টনারের গল্প তো আমরা জানি, উনি নিজের ঘর তৈরি করবেন না অন্য ঘরে আশ্রয় নেবেন, তা তো সময়ই বলবে।