ভারতবর্ষ (India) জুড়ে রয়েছে আসাধারণ প্রাকৃতিক শোভা স্মৃতিসৌধ , মিনার ফোর্ট। নিখুঁত শিল্পকার্য থেকে আর্কিটেকচার অথবা স্থাপত্যশিল্প এক অনন্য আধুনিকতার পরিপুষ্ট এই দেশ। ভারতের বুকে আরও অনেকগুলি ঐতিহাসিক (Heritage) স্থান রয়েছে যা এখনও পর্যটকদের কাছে অজানা। ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের দিক থেকে এই স্থানগুলোর গুরুত্ব কিন্তু অপরিহার্য।
জগেশ্বর ধাম- উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) অনেক হিন্দু মন্দির ও তীর্থস্থান আছে বলে, এটিকে ‘দেবভূমি’ বা ‘দেবতাদের দেশ’ বলা হয়। হিমালয়, ভাবর ও তরাই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই রাজ্য বিখ্যাত। জগেশ্বরের (Jageshwar) একটি ঐতিহাসিক মন্দির। প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের একটি ৭ম থেকে ১৪ শতকের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে প্রধান দেবতা জগেশ্বরের নামে, যা ভগবান শিবকে উৎসর্গ করা হয়েছে। ১২৫টিরও বেশি বড় এবং ছোট মন্দির রয়েছে। আলমোড়ার কাছে অবস্থিত, এটি একটি দর্শনীয় পুরানো স্থান।
উদাভাল্লি গুহা– ভারতীয় শিলা-কাটা স্থাপত্যের উদাহরণ। উদাভাল্লি গুহা (Udavalli Cave) অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর শহরে (Guntur city of Andhra Pradesh) অবস্থিত। এই গুহাগুলি চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর স্থাপত। এবং ইতিহাস প্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ। গ্রানাইটের একটি ব্লকে খোদাই করা অবশিষ্টনাগের উপর হেলান দিয়ে বিষ্ণুর একটি ৫ মিটার দীর্ঘ মূর্তি রয়েছে। এখান থেকে উপরে উঠলে ‘ত্রিদেব’-এর মূর্তিগুলি আসে: ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান বিষ্ণু এবং শিব। এর উপরে একটি হেলান দেওয়া ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি রয়েছে যার পাশে একটি সর্প এবং ভগবান গরুড় রয়েছে। পরের তলায় সিংহ ও হাতির সুন্দর ভাস্কর্য রয়েছে। উন্দাভাল্লি গুহাগুলি কেবল স্থাপত্যের সেরা অংশ নয়, এটি একটি কাঠামো যা বিভিন্ন ধর্মের একীকরণের সাক্ষী। এই গুহাগুলিকে প্রথমে জৈন গুহা হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং পরে হিন্দু স্থাপত্যগুলিকে হিন্দু দেবতার মূর্তির আকারে গুহাগুলিতে একীভূত করা হয়েছিল এবং বৌদ্ধরা বিশ্রামাগার হিসাবে ব্যবহার করেছিল। মেঝেতে জৈন আবাস, তীর্থঙ্কর ভাস্কর্য এবং জৈন বিহারের মতো কাঠামো রয়েছে।
কুম্বলগড়– কুম্ভলগড় (Kumbhalgarh) পশ্চিম ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজসামান্দ জেলার একটি ছোট শহর। এই দুর্গটি মূলত মেওয়ার সাম্রাজ্যের একটি অসাধারণ নিদর্শন। এখানে রাজকীয়তা, ইতিহাস, সংস্কৃতির এক অসামান্য মেলবন্ধন খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্গটি ১৫ শতকে রানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের বৃহত্তম দুর্গগুলির মধ্যে একটি। কুম্বলগড় দুর্গ প্রাচীর জুড়ে ছড়িয়ে আছে দুর্গে মোট ৩৬০টি মন্দির রয়েছে এর মধ্যে ৩০০টি জৈন মন্দির এবং বাকীগুলো হিন্দু মন্দির হিসেবে পরিচিত। তবে কুম্বলগড় এর প্রধান আকর্ষণ হল কুম্বলগড় অভয়ারণ্য।
মালুতি মন্দির- প্রাচীন মন্দিরটির উৎপত্তি প্রাগঐতিহাসিক যুগে। যা ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া অঞ্চলের কাছে মালুতি গ্রামে অবস্থিত। সম্পূর্ণ মন্দিরটি ছোট ছোট ৭২টি প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত। এই মন্দিরটি বিশ্বের ১০টি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অন্যতম। মন্দিরের দেওয়ালের লক্ষ্য করা যায় রামায়ণ এবং মহাভারতের কাহিনী সজ্জিত রয়েছে।
রাখিগরহি- হরিয়ানায় (Haryana) অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতার আরেক নিদর্শন রাখিগারহি। ভারতের হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শনগুলির মধ্যে রাখিগারহি সবচেয়ে বিস্তৃত। খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত এখানে একটি সভ্যতা বিরাজমান ছিল। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের শ্রী অমরেন্দ্র নাথ দ্বারা খনন করা, এই স্থানটি একটি পরিকল্পিত জনপদ দ্বারা উপস্থাপিত। এখানকার সড়কপথের নকশা এবং মাটির নীচে উন্নতমানের নিকাশী ব্যবস্থা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন প্রত্নতত্ববিদরা। রাখিগারহি এলাকার মাটি খুঁড়ে মিলেছে পোড়ামাটির মূর্তি, ব্রোঞ্জের খেলনা সহ একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মিলেছে এখানে।
হাম্পি, কর্ণাটক– কর্ণাটকের (Karnataka) তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত হাম্পি শহর (Hampi city)। প্রাচীন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এই হাম্পি শহর। মন্দির ঘেরা এই প্রাটীন শহর। এই শহরের জনপ্রিয়তা কিন্তু সেই রামায়ণের সময় কাল থেকে। বালি, সুগ্রীব, হনুমানদের বাসস্থান ছিল এই হাম্পি। প্রাচীন নাম কিষ্কিন্ধ্যা। হাম্পিতে গেলে যন্ত্রধারক হনুমান মন্দির, পাথরের রথ, বিরুপাক্ষ মন্দির এবং নন্দী মূর্তি দেখতে ভুলবেন না যেন।
সিকিমের রাব্দেন্স – সিকিমের পূর্বতন রাজধানী রাব্দেন্স পশ্চিম সিকিমে অবস্থিত। পর্যটনের উদ্দেশ্যে এখানে অনেক কম খরচে হোমস্টে রয়েছে। শহরের প্রাচীন মনেস্ট্রি পেমায়ণগৎসেও এই অঞ্চলেই অবস্থিত। একসময় রাব্দেন্স বৌদ্ধদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে যা একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তবে এই ধ্বংসস্তূপ থেকে কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘার একটা অসাধারণ রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়।
বিহারের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়– নবম শতাব্দীতে পাল যুগের সম্রাট ধর্মপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করেছিলেন। একসময় বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একমাত্র গৌরবময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হত। বর্তমানে এটি ভাগলপুর থেকে ৫০কিমি পূর্বে অবস্থিত। প্রায় ১০০ একর বিস্তীর্ণ জমির উপর বৌদ্ধদের বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ৫২ টি কক্ষ রয়েছে এবং দুই প্রাঙ্গণের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশাল স্তূপ রয়েছে। হাজার বছর আগের ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেমন ছিল, কীভাবে শিক্ষকরা ছাত্রদের শিক্ষা প্রদান করতেন সেই সম্পর্কে জানতে হলে এখানে আপনাকে আসতেই হবে।