Sunday, June 29, 2025
HomeআজকেAajke | বাংলাকে টুকরো টুকরো করতে চায় বিজেপি
Aajke

Aajke | বাংলাকে টুকরো টুকরো করতে চায় বিজেপি

সবে বাজেট শেষ হল, বিহারের বরাদ্দ বাংলার ৭০০ গুণ

Follow Us :

ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে, জানালেন আমাদের বাংলার মালদহ, মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যা চিত্র, ডেমোগ্রাফি বদলে যাচ্ছে। তাই সেগুলোকে বের করে ঝাড়খণ্ডের তিনটে জেলার সঙ্গে জুড়ে একটা কেন্দ্রশাসিত প্রদেশ হোক। ওই জেলাগুলোতে নাকি মুসলমান জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ অনন্ত মহারাজ সরাসরি বাংলাকে ভাগ করার কথা বললেন, বললেন কোচবিহার আলাদা রাজ্যের কথা। ওই একই দিনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি আমাদের উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে নতুন বিকাশ আর উন্নয়নের কথা বললেন, একটু ঘুরিয়ে নাক দেখানো আর কী। এঁদের সাংসদ রাজু বিস্ত, দেখা হলেই জয় গোর্খাল্যান্ড বলেন, জিইয়ে রাখেন গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ। আসলে বাংলাকে টুকরো করে আলাদা আলাদা প্রান্তে রাজত্ব করার ইচ্ছে এঁদের অনেক পুরনো। প্রায় একই সময়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি, বিজেপি রাজ্যসভা সাংসদ এবং ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ প্রায় একই কথা বলছেন, এটার মধ্যে কি কোনও যোগসূত্র আছে? একজন চাইছেন রাজবংশীদের উন্নয়ন, একজন চাইছেন উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন আর অন্যজন চাইছেন মুসলমানদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে, অন্তত সেরকমই বলার চেষ্টা করেছেন। মোদ্দা কথাটা হল, তিনজনেই চান রাজ্যটা টুকরো হোক, উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে দাও, মালদা মুর্শিদাবাদকেও আলাদা করে দাও, দেখি শালারা কী খেয়ে বাঁচে। এতেই কি রাজ্য আলাদা হয়ে যাবে? টুকরো হয়ে যাবে? না, যাবে না কিন্তু তার বীজ পোঁতা শুরু হল। এঁরা চান এ নিয়েই কাজিয়া চলতে থাকুক। আর তাই সেটাই বিষয় আজকে। বাংলাকে টুকরো টুকরো করতে চায় বিজেপি।

সবে বাজেট শেষ হল, বিহারের বরাদ্দ বাংলার ৭০০ গুণ, কেন বাংলা বঞ্চিত সে কথা না বলে বিজেপির এই নেতারা সুড়সুড়ি দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গের অনুন্নয়নের, মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির। কিন্তু এটাই কি প্রথম? না, বাংলাকে ভাগ করার প্রথম চক্রান্ত করেছিল ব্রিটিশরা, একবার নয় অনেকবার, সেদিন এই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রবি ঠাকুর, ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ বাংলার ইতিহাসে একটি অন্ধকার দিন। ১৯০৫ সালে এই দিনটাতেই লর্ড কার্জনের চক্রান্তে ‘বঙ্গভঙ্গ’ কার্যকর হয়। রবীন্দ্রনাথের গান ‘বাংলার মাটি বাংলার জল…’ কণ্ঠে নিয়ে বাংলা সেদিন জেগে উঠেছিল প্রতিবাদে। বাংলায় দিনটি ছিল অরন্ধন এবং উপবাসের। আপামর বাঙালি সেদিন হাতে ধারণ করেছিল ঐক্যের রাখি।

আরও পড়ুন: Aajke | অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে কি না সেটাই দেখতে হবে

বিশ্ব দেখেছিল এক চারণকবির সুর ও সঙ্গীতের শক্তি। সারা বাংলা প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। দিনটি মানুষ পালন করেছিল জাতীয় শোকদিবস হিসাবে। দেশ জুড়ে ডাক দেওয়া হয়েছিল হরতাল ও ধর্মঘটের। সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসাবে ও হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের নিদর্শন মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগেই শুরু রাখিবন্ধন। সেদিন সকালে তিনি সামনে, কলকাতার রাজপথে রাখিবন্ধনের শোভাযাত্রা ও গঙ্গাস্নানের সেই বিবরণ পাওয়া যায় অবনীন্দ্রনাথের বর্ণনা থেকে— ‘ঠিক হল সকালবেলা সবাই গঙ্গাস্নান করে সবার হাতে রাখি পরাব। এই সামনেই জগন্নাথ ঘাট, সেখানে যাব— রবিকাকা বললেন, সবাই হেঁটে যাব, গাড়িঘোড়া নয়। —রওনা হলুম সবাই গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে। রাস্তার দুধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাত অবধি লোক দাঁড়িয়ে আছে—মেয়েরা খই ছড়াচ্ছে, শাঁখ বাজাচ্ছে, মহা ধুমধাম—যেন একটা শোভাযাত্রা, দিনুও সঙ্গে ছিল, গান গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে মিছিল চলল— ‘বাংলার মাটি, বাংলার জলবাংলার বায়ু, বাংলার ফল পুণ্য হউক পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান।’ অবনীন্দ্রনাথ এও জানিয়েছেন যে, এরপর আবার রবীন্দ্রনাথ পাথুরিয়াঘাটার মুসলমান সহিসদের এবং চিৎপুরের বড় মসজিদে গিয়ে মোল্লা মৌলবিদের রাখি পরান। পূর্ববঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ জেলায় জেলায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। কার্জন ভেবেছিলেন এই আন্দোলন হবে ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ক’দিনের মধ্যে বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর অনুমান ভুল। বঙ্গভঙ্গ বাঙালিকে বিভক্ত করার বদলে আসলে ঐক্যবদ্ধ করে দিল। এরপর সত্যি করেই বাংলা ভাগ হল, দেশের স্বাধীনতা আসছে, আর বাংলা ভেঙে দু’ টুকরো। দোষ কারও নয় গো মা বললে তো হবে না, সেদিন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বাংলা আর পঞ্জাবকে টুকরো করেও দেশের স্বাধীনতা মেনে নিয়েছিল। শেষ বাধা এসেছিল কিরণশঙ্কর রায়, শরৎ বসু আর সুরাবর্দি, তাঁরা বৃহৎ বঙ্গ গোছের একতা কিছু ভাবছিলেন, কিন্তু হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লিগ এবং কমিউনিস্ট পার্টি এবং কংগ্রেসের এক অংশের নেতার আপত্তি মেনেই বাংলা টুকরো হয়ে গিয়েছিল, কাজেই সে পাপ সব্বার গায়েই লেগে আছে। যে লোকটা সেদিন তাঁর ক্ষীণকণ্ঠ নিয়েও বহু বার বলার পরেও চুপ করে গিয়েছিলেন, সেই গান্ধীজি উপরেই দায় চাপালেন সব্বাই। কিন্তু ইতিহাস, তথ্য দলিল বলছে গান্ধী নন, সবথেকে বিরোধিতা এসেছিল হিন্দু মহাসভা আর মুসলিম লিগের কাছ থেকে, কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা মেনে নিয়েছিলেন। এরপর আবার বাংলার ম্যাপ নিয়ে বিতর্ক হয় ১৯৫৬ সালে, বাংলা বিহার মিশে যাবে, বিরোধিতা হয়, মূলত কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে, শেষ পর্যন্ত সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব ঠান্ডাঘরে চলে যায়। এর বহু পরে, পাহাড়ে আন্দোলন শুরু হয়, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সুবাস ঘিসিং নামেন, কিন্তু তাও সামলে নিয়ে বাংলা এক থেকেছে, কোচবিহারে, কামতাপুরিদের আলাদা রাজ্যের দাবি বহুকালের, কিন্তু বাংলা ভাগ হয় নি, তার একটা কারণ ছিল উত্তরবঙ্গে তখনও শাসকদলের ক্ষমতা চলে যায়নি। এটা শুরু হল নতুন করে যখন বিজেপি উত্তরবঙ্গে তাদের ক্ষমতা বাড়াল, তখন থেকেই উত্তরবঙ্গে একটা চাপা প্রচার শুরু হয়ে গেল, উত্তরবঙ্গ অবহেলিত। ঘটনা ঠিক উল্টোটা, ২০১১-র পর থেকে উত্তরবঙ্গকে যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তা এর আগে কোনওদিনই ছিল না, আলাদা সেক্রেটারিয়েট থেকে শুরু করে আলাদা মন্ত্রক, মুখ্যমন্ত্রীর নিয়মিত যাওয়া আসা, কিন্তু দুটো জিনিস ক্রমাগত হতে থাকল, এক) বিজেপি তাদের ক্ষমতা অনেকটাই ধরে রাখল, দুই) বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক নেতারা মাঝেমধ্যেই আলাদা রাজ্য, আলাদা জোন ইত্যাদির কথা বলতে থাকলেন আর দীর্ঘ সময় ধরে আলাদা কোচ রাজ্যের দাবি নিয়ে যিনি লড়ছেন সেই অনন্ত মহারাজকে সাংসদ করে রাজ্যসভাতে পাঠাল বিজেপি। আর আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে সরব দল, গোষ্ঠীর নেতাদের দার্জিলিংয়ে সমর্থন দিতে থাকল। এবং সেই কর্মসূচি মেনেই বিজেপি নেতারা এবার মাঠে নেমেছেন, ভোটে হারানো যাচ্ছে না, পেটে মারার ব্যবস্থা হচ্ছে আর রাজ্যটাকেই টুকরো করার জিগির তুলে দিয়ে সারা রাজ্যকে অশান্ত করে তোলা হবে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে বিজেপির নেতারা, সুকান্ত মজুমদার, নিশিকান্ত দুবে বা অনন্ত মহারাজ বাংলাকে আবার টুকরো করার কথা বলছেন, আপনাদের মতামত কী?

সুকান্ত মজুমদার, যিনি উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীও, তিনি ওই উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার ওকালতি করলেন, জানালেন যে উত্তরবঙ্গর সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারি মিল আছে, ভৌগোলিকভাবে যে অঞ্চলে মঙ্গোলয়েড মানুষজনের বসবাস তার সঙ্গে তিনি কোন কোন মিল খুঁজে পেলেন তা এখনও জানাননি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোন রাজ্যের ভাষা বাংলা, কোন রাজ্যের মানুষ রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়, কোন রাজ্যের মানুষ শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল রবিঠাকুরের কবিতা সাহিত্য নিয়ে বড় হয়? কোন রাজ্যে শারদীয়া উৎসব হয়? কোন রাজ্যে বিয়ের আচার রীতি এক বাঙালির মতো? কোন রাজ্যের মানুষ বোরোলি, বোয়াল আর চিতল বলতে অজ্ঞান হন? সুকান্তবাবু জানাবেন? আসল ইচ্ছে বাংলাকে টুকরো করার, মানুষ তা রুখে দেবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kasba Incident | ল' কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর কাছে আ/তঙ্ক ছিল মনোজিত? প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
00:00
Video thumbnail
Russia | Vladimir Putin | বড় যু/দ্ধের আশঙ্কা? আমেরিকাকে টেক্কা দিতে বড় সিদ্ধান্ত রাশিয়ার
00:00
Video thumbnail
Madan Mitra | Kasba Incident | কসবা কাণ্ডে কী বলেছিলেন মদন? যার জন্য শোকজ, দেখুন সেই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Ali Khamenei | Israel | বড় খবর, হাসি ফিরল খামেনির মুখে, এবার কী করবে ইজরায়েল?
00:00
Video thumbnail
Anubrata Mondal | Kajal Sheikh | বোলপুরে জেলা কার্যালয়ে ২১ জুলাইের বৈঠকে অনুব্রত-কাজল
07:42
Video thumbnail
Weather Update | গভীর হচ্ছে নিম্নচাপ, ভাসবে এই ৬ জেলা, দেখুন ওয়েদার আপডেট
05:58
Video thumbnail
Ghaziabad Water Supply | কেন্দ্রের জল জীবন মিশনের এ কী হাল? এ যেন জলযু/দ্ধ, কী বলবে বিজেপি?
03:44
Video thumbnail
Hooligaanism | Melar Gaan | বকুলতলার মেলার গানে হুলিগানইজম
37:47
Video thumbnail
Supreme Court | বহিরাগত শক্তির কারণে কলেজিয়ামের সমস্ত সুপারিশ কার্যকর হয় না
05:28
Video thumbnail
Iran-Israel | ফের যু/দ্ধ শুরু হবে ইরান-ইজরায়েলের, কেন? জানুন এই ৭ কারণ
07:55

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39