জলপাইগুড়ি: অসুস্থ হয়ে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই উদভ্রান্তের মতো ঘরে ফিরছিলেন বাবা রঞ্জিত বর্মণ। জয়পুর থেকে ট্রেনে ওঠার পর ফোনে বারবার খোঁজ নিচ্ছিলেন পরিবারের। কিন্তু, আড়াই বছরের একরত্তি মেয়ের মুখটা শেষবারের মতো দেখা হল না বছর ৪২-র রঞ্জিতের। প্রায় ঘরের কাছে পৌঁছে গিয়েও তাঁর ঠাঁই হল লাশকাটা ঘরে।
পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে রাজস্থানে গিয়েছিলেন রঞ্জিত। সেখানেই শনিবার খবর যায় ছোট্ট মেয়ে মারা গিয়েছে। তারপরই ট্রেনের টিকিটের জন্য দৌড়ে বেড়ান তিনি। সোমবারের টিকিট না পেয়ে বুধবারের বিকানির-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটেন। স্লিপারের ৫ নম্বর বগিতে ছিলেন। নিউ জলপাইগুড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পর মাত্র কিছুক্ষণের পথ। তারপরই সন্ধের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু শেষ বিকেলে আচমকা হুড়মুড়িয়ে ট্রেন বেলাইন হয়ে গেল। সেই দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয় রঞ্জিতের।
ফোনে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কোচবিহার থেকে ঘটনাস্থলে চলে আসেন রঞ্জিতের দাদা, রেলের ঠিকাকর্মী প্রদীপ বর্মণ। টিকিটের আসন নম্বর জেনে শুরু করেন খোঁজাখুঁজি। কিন্তু, রাতের অন্ধকারে খোঁজ মেলেনি ভাইয়ের। হন্যে হয়ে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সকালে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে খুঁজে পান নিথর ভাইয়ের দেহ। দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রদীপ।
তিনি বলেন, রাজস্থানে শ্রমিকের কাজ করতেন রঞ্জিত। এই অবস্থায় সরকারি ক্ষতিপূরণের দিকে তাকিয়ে গোটা পরিবার। মৃতের ও তাঁর স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ নথি এনে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করবেন। তার আগে রঞ্জিতের পরিবার এলে দেহের শেষকৃত্য করতে হবে। কিন্তু, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার কথা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না প্রদীপ।