কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই তৎপর রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যজুড়ে রাতভর তল্লাশি অভিযান প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। উদ্ধার হয় বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমা। এ ঘটনায় মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় জেলা পুলিস সুপার সবরী রাজকুমার।
রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে তোলপাড়। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি পুলিসকে নির্দেশ দেন আগামী ১০ দিনের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত এলাকার থেকে তল্লাশি চালিয়ে বোমা, বন্দুক, গুলি উদ্ধার করতে হবে। সেইমতো মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিসি অভিযান চালানো হয়। জেলা পুলিস সুপার সবরী রাজকুমার জানান, নওদা কান্দি ও সাগরপাড়া থানা এলাকা থেকে মোট চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। হরিহরপাড়া থেকে উদ্ধার হয়েছে দুটি বোমা। এই ঘটনায় মোট ২৬ জন সমাজবিরোধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার বসিহাট মহাকুমার চাঁদপুকুর এলাকার দেবীপুর গ্যাস গোডাউন ও সোলাদানা পেট্রলপাম্প থেকে মোট দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল বসিরহাট থানার পুলিস। তাদের নাম সিজাউল গাজী,ন অপর একজনের নাম শফিকুল গাজী, এদের বাড়ি ভারত-বাংলাদেশ ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত এলাকায়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে গুলিসহ দুটি রিভলবার। ধৃতদের শুক্রবার বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হবে। পাশাপাশি বসিরহাটের হাসনাবাদ থানার মোহনপুর এলাকা থেকে তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিস। ধৃতদের নাম আজাদ শেখ, রাহুল গাজী ও রহমান গাজী। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় গুলিভর্তি বন্দুক, লোহার রড ও জালি ধারালো অস্ত্র-সহ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় খুন, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছিল। শুক্রবার ভোররাতে মোহনপুর এলাকা থেকে গোপন আস্তানা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের আজ বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হবে।
আরও পড়ুন: Molokai Channel: চারপাশে হাঙর, বিপদসঙ্কুল হাওয়াইয়ের মলোকাই চ্যানেল পার হওয়াই চ্যালেঞ্জ কালনার সায়নীর
বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার ছোট ডাঙ্গাল গ্রামের কাছ থেকে উদ্ধার হল ২০০টি তাজা বোমা। স্থানীয় সূত্রে খবর, ছোট ডাঙ্গা গ্রামের ক্যানেলের কাছে ছটি ব্যারেলে রাখা ছিল ওই বোমা-গুলি। সূত্র মারফত খবর পেয়ে মাড়গ্রাম থানার পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমা গুলি উদ্ধার করে। খবর দেওয়া হয় বোম স্কোয়াডে। কী করে এত গুলি বোমা এখানে আসল তা খতিয়ে দেখছে মাড়গ্রাম থানার পুলিস।
আবার রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত জঙ্গিপুর পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে ১৪টি তাজা বোমা উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে জঙ্গিপুর পুরসভা বোর্ড গঠন হয়। তারপরে এই বিপুল পরিমাণ তাজা বোমা উদ্ধারকে ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। তবে এই বোমাগুলি কে বা কারা এবং কী উদ্দেশে মজুত করেছিল তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয় পুলিসের কাছে। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে বোমা গুলি উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করার করার চেষ্টা করছে। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে পুলিস। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
মমতা ব্যানার্জির নির্দেশের পরেই নদীয়ার শান্তিপুর থানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে দেশি পিস্তল, কার্তুজ জিভি এবং ধারালো অস্ত্রসহ চারজনকে গ্রেফতার করল পুলিস। অভিযুক্তদের শুকুবার রানাঘাট মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে শান্তিপুর থানা এলাকার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে মোট চারজনকে গ্রেফতর করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, শ্যামল সিকদার, রাজীব শেখ এবং সাবির শেখ। পুলিস তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে তারা কীভাবে এই অস্ত্রগুলি পেয়েছিল এবং কী কারণে তাদের কাছে অস্ত্র মজুত ছিল। ধৃতদের এদিন রানাঘাট মহাকুমা আদালতে তোলা হয়।
অন্যদিকে, শুক্রবার ভোরে বর্ধমানের খাগড়াঘাট থেকে উদ্ধার হল আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুই যুবক। এই দুই যুবকের নাম ভোলা কুমার, সঞ্জয় কুমার। তারা বিহারের ঔরাঙ্গাবাদ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়। শুক্রবার তাদের বর্ধমান আদালতে তোলা হয়।
তাদের কাছ থেকে দুটি ওয়ান-সাটার বন্দুক ও দুটি গুলি উদ্ধার হয়েছে। জেলা পুলিসের ডিএসপি অতনু ঘোষাল জানান, শুক্রবার ভোর রাতে বর্ধমান শহরের খাগড়াগড় এলাকায় দুই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিসের। তাদের আটক করলে দুটি ওয়ান-সর্টার বন্দুক ও দুটি গুলি উদ্ধার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা স্বীকার করে তারা বিহারের নাচ-গানের অনুষ্ঠানে নর্তকী নিয়ে যাওয়ার কাজ করত। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে বর্ধমান কেন এসেছিল, তাদের কী অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কি না সব কিছুই খতিয়ে দেখছে বর্ধমান থানার পুলিস।
কাটোয়া থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার চার। দৃতদের নাম রাহুল শেখ,নৌওসাদ শেখ,হাসিবুল শেখ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, বড়ডাঙ্গা কৈচোর রাস্তার কাছে তল্লাশি চালায় কাটোয়া থানার পুলিস। পুলিস সূত্রে খবর, এরা ডাকাতির উদ্দেশে সেখানে ঘারাঘুরি করছিল।ধৃতদের কাছ থেকে দুটি ওয়ান শাটার উদ্ধার হয়েছে। অন্যদিকে, কাটোয়ার গাঙ্গুলী ডাঙ্গা থেকে রাত ২টো নাগাদ মিঠুন শেখ নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিস। মিঠুনের কাছ থেকে একটি ওয়ান শাটার রিভলবার পাওয়া যায়। ঐ রাতেই কাটোয়ার গোপখাজী থেকে বুলেট নামে এক যুবককে ঘোরাঘুরি করার সময় তাকে গ্রেফতার করে কাটোয়া থানার পুলিস। তার কাছ থেকেও একটি ওয়ান শাটার উদ্ধার হয়। ধৃতদের আজ কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হয়।