জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘তানাজি’-খ্যাত পরিচালক ওম রাউতের ‘আদিপুরুষ’ নিয়ে উৎসাহ ছিল ঘোষণার সময় থেকেই। মুক্তির আগে যে বিতর্ক জারি ছিল ‘আদিপুরুষ’ (Adipurush) দেখার পর তাতেই আবার ঘি পড়ল। শুভাশুভের দ্বন্দ্বকে ভিত্তি করেই রামায়ণ রচনা করেছিলেন বাল্মীকি। রাম এবং রাবণের কাহিনি সকলেরই কমবেশি জানা। এই গল্প নিয়ে ছবি তৈরিতে চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। তাই গল্প বলার কায়দাতেই পার্থক্য আনতে চেয়েছিলেন ওম। আদিপুরুষকে তরুণ প্রজন্মের মনোগ্রাহী করে তোলার চেষ্টা করেছেন ওম রাউত। সেলুলয়েডে বারবার ফিরেছে সেই চিরন্তন কাহিনি। আদিপুরুষের মাধ্যমে এবার সেই গল্পের আধুনিকীকরণ করার চেষ্টা করলেন ওম রাউত। মার্ভেলের কায়দায় রামায়ণের গাথা বলার চেষ্টা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: Leander Paes Birthday | ‘হাফ সেঞ্চুরি’ করলেন লিয়েন্ডার পেজ, সম্মান জানাল উইম্বলডন
ভারতের অন্যতম মহাকাব্য নিয়ে ছবি তৈরি করার কাজ অত সহজ নয়। গল্প আর উপস্থাপনের মধ্যে সঠিক ব্যালেন্স রাখতে পারেননি ওম রাউত। ছবির সংলাপে রয়েছে নানা ধরনের সমস্যা। যেমন, আদিপুরুষ সিনেমাতে ‘অধর্ম কা বিধ্বংস’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এই ছবিতেই ‘তেরে বাপ কী জলেগি অউর তু মরেগা’র মতো সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে। যা দর্শককে বিব্রত করেছে।
এবার অভিনয় প্রসঙ্গে আশা যাক। প্রভাস নিজের নায়কোচিত সত্ত্বা ধরে রাখতে পেরেছেন এই ছবিতে। প্রভাসের অভিনয় বড্ড একমাত্রিক। রাম হিসাবে তাঁকে মন্দ লাগেনি। কিন্তু তাঁর হাসি-কান্না-রাগ, সবই এক রকম। কৃতিও বেশ ভালোই অভিনয় করেছেন। সীতার চরিত্রে কৃতি শ্যানন সত্যিই বড্ড ‘মডার্ন’। তবে তাঁর বদলে অন্য কোনও নায়িকা হলেও কোনও অসুবিধা হত না। একটু ভয় পাওয়া আর খানিক লজ্জা মাখা রোম্যান্টিক দৃশ্য ছাড়া সীতার আর কোনওই অবদান নেই ছবিতে। তবে এই সিনেমার রত্ন কিন্তু সইফ আলি খান। রাবণের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নৃশংসতাকে নিজের অভিব্যক্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তিনি। ওমকারা, তানহাজির মতো সিনেমার মাধ্যমে সইফ প্রমাণ করেছিলেন তিনি চকোলেট বয় বা লেডিকিলারের চেয়ে অনেক বেশি। ডার্ক চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন তিনি। বলা চলে, সইফের সাহায্যেই তরী পার করলেন ওম রাউত।
যাঁরা গত শতকের আটের দশকে রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’ দেখেছেন, তাঁরা জানেন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কী অপূর্ব ভাবেই বাল্মীকির মহাকাব্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল স্রেফ নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের সাহায্যে। বছর তিনেক আগে লকডাউনের সময়ও নতুন প্রজন্ম দূরদর্শনে ভিড় করে দেখেছিল সেই সিরিয়াল। অথচ এমন ব্যাপক বাজেট নিয়ে এটা কী বানালেন পরিচালক ওম রাউত? কেবল দুর্বল ভিএফএক্স নয়, গল্পটাই বাঁধতে পারেননি তিনি। প্রভাসরাও কেউ চরিত্র হয়ে উঠতে পারেননি। এই ছবি ঘিরে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক। কিন্তু সব বিতর্ককে পেরিয়ে শেষমেশ সবকিছুকে যেন ঢেকে দেয় ছবির দুর্বল মেকিং।
এদিকে ছবির ভিএফক্স এবং ভিজ্যুয়াল অ্যাপিল খুব একটা ভালো নয়। তবে টায় টায় পাশ মার্কস দেওয়াই যায়। রামায়ণের গল্পকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারতেন ওম রাউত।