কলকাতা: স্মার্ট গোয়েন্দার তুখোর বুদ্ধির কারসাজি জানতো না পান্ডব গোয়েন্দা। বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দেওয়া শানিত দৃষ্টিও ছিল না সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের বাবলু,বাচ্চু, বিচ্চু,ভোম্বল আর বিলুর। বদলে তাদের গোয়েন্দাগিরির সঙ্গী ছিল এক চোখ কানা কুকুর পঞ্চু। আর তাতেই কামাল করত পাঁচ খুদে গোয়েন্দা। বাঙালি তখনো হ্যারি পটারের নাম শোনেনি। স্কুল পড়ুয়া পাঁচ খুদের গোয়েন্দাগিরিতে মোজেছিল সে সময়ের বাঙালি। অবশ্য শুধু সেকালই বা কেন?
আজও পাণ্ডব গোয়েন্দা সমান প্রাসঙ্গিক। গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে তাদের একটাই ভয় ছিল, একেবারে শেষ মুহূর্তে পঞ্চু না ডেকে ওঠে। বাদবাকি সবটাই ছিল একেবারে শৈশবের মত সরল। মার প্যাঁচ এর বুদ্ধি, কূট কৌশল,বিদেশি গল্পের অনুকরণ কিছুই ছিল না ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের। অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় আমাদের ঘরের গল্প লিখেছিলেন তিনি। এটাতে গোয়েন্দাগিরির রসদ পেয়েছিল সমগ্র পাঠককূল। পাণ্ডব গোয়েন্দার দলে ছিল দুই মেয়েও সেই বাচ্চু-বিচ্ছুর টানে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই পছন্দের তালিকায় থাকতো পাণ্ডব গোয়েন্দা।
স্কুল লাইব্রেরী থেকে বাবলু-বাচ্চু-বিচ্ছুর গোয়েন্দাগিরির গল্প পড়েনি সেকালে এমন বাঙালি বিরল। মোটামুটি ক্লাস সেভেন-এইট পর্যন্ত সকলেই অদম্য কৌতূহলে গিলেছে পান্ডব গোয়েন্দা। একটু বড় হলে আর ভালো লাগতো না যেন। তখন যেন মনে হতো কি সহজেই না ধরে ফেলা যায় গোয়েন্দা গল্পর শেষটা। শব্দ কৈশোরে ততদিনে আমাদের হাতে চলে আসতো ফেলুদা- কাকাবাবু। বড় হয়ে যেতাম আমরা। তবে বড় হলেও শৈশবের এক ভরসার ঘাঁটি ছিল ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় এর কলম। সেই কলম থমকে গেল। ঠিকানা বদলে আজ থেকে পরপের বাসিন্দা ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। শৈশব আগলে রাখবে বাবলু,বাচ্চ, বিচ্ছু,বিলু, ভোম্বল আর পঞ্চু। কোন জাদুতে তারা আজও বেঁচে তা জানতে কোন গোয়েন্দাগিরি কিন্তু মোটেই বরদাস্ত করবে না পাঠককূল।
‘পান্ডব গোয়েন্দা’ স্রষ্টা সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গতকাল এক হাওড়ার নার্সিংহোমে এ বর্ষিয়ান সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়েছে বলে তার পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক প্রজন্মের কিশোর কিশোরীরা তার রোমাঞ্চকর রহস্য সৃষ্টিতে বুঃদ হয়ে ছিল। সাহিত্যিক রেখে গেলেন তার সৃষ্ট চরিত্র-বাবলু,বাচ্চু, বিচ্চু,ভোম্বল আর বিলুর এবং পঞ্চুদের । রোমাঞ্চে ভরা ছিল তাঁর কাহিনীগুলো। দুঃসাহসিক,বুদ্ধিমান ও নির্ভীক পঞ্চপান্ডবকে তুলে ধরেছিলেন তিনি উপন্যাসের পাতায়। প্রথমে সেগুলি ‘শুকতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরে অবশ্য তা বই আকারে প্রকাশিত হয়। শুধু পাণ্ডব গোয়েন্দাই নয় তিনি একাধিক অন্য গোয়েন্দা গল্প, উপন্যাসও লিখেছিলেন। ‘গোয়েন্দা তাতার’ এবং ‘ডিটেকটিভ অম্বর চ্যাটার্জি’ সেগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তবে ভ্রমণ কাহিনীর মধ্যে একমাত্র ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদবাবুর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ‘দৈনিক বসুমতি’ খবরের কাগজ দিয়ে। পরবর্তীকালে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ভারতীয় রেলওয়েতে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। কর্মসূত্রে ঘাটশিলায় ছিলেন।