Friday, June 13, 2025
Homeফিচারভাগবতের ডিএনএ তত্ত্বেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির হাতছানি

ভাগবতের ডিএনএ তত্ত্বেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির হাতছানি

Follow Us :

ভাগবতের ডিএনএ তত্ত্বেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির হাতছানি।ভারতীয় হিন্দু অথবা মুসলমানদের ডিএনএ অভিন্ন। সম্প্রতি মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হাজির মুসলমান সমাজের চিন্তাবিদ, বিশিষ্টরা। তাঁদের উদ্দেশে আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত এমন মন্তব্য করায় বেশ আলোড়িত অনেকেই। সেটাই প্রত্যাশিত। কেননা শুধু ডিএনএ প্রসঙ্গেই আটকে না থেকে ভাগবত ‘অভয়’ দিয়েছেন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কেউ ভারত ছাড়া করতে পারবে না। ধর্মীয় আচার ভিন্ন হলেও ভারতে যাঁরা জন্মেছেন তাঁরাই ভারতীয়। অর্থাৎ ধর্মীয় বিভাজনের দৃষ্টি খারিজ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সরসঙ্ঘ চালক ভাগবত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সংবাদপত্রে আরএসএসের ‘ভোল বদল’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই টের পাওয়া যাবে, ভাগবত মোটেই কোনও নতুন কথা বলেননি।

আরও পড়ুন: পূর্বপুরুষ এক, গণধোলাইকারীরা হিন্দুত্ব বিরোধী: মোহন ভাগবত

মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন ভাগবত। সেখানে তিনি বলেন, দেশের মুসলমান সমাজে যে ভয়ার্ত পরিবেশ বিদ্যমান, তা কোনও সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী দেশ গঠনের পথে অন্তরায়। ধর্মীয় আচার-আচরণ আলাদা। তার ভিত্তিতে হিন্দু-মুসলমানকে চিহ্নিত করা উচিত নয়। সবার অভিন্ন পরিচিতি তাঁরা ভারতীয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত নিজস্বতাকে অস্বীকার করার কৌশল। অর্থাৎ সামাজিক বহুত্ববাদ নয়। ভারতে জন্মগ্রহণ করলে, সে যে ধর্মীয় উপাসনা পদ্ধতি মেনে চলুক না কেন, সে হিন্দু সংস্কৃতির অঙ্গ।

আরও পড়ুন: ‘গবাদি পশু সুরক্ষা বিল বাড়াবে মব লিঞ্চিং’

এটা নতুন নয়, ভাগবত তার গোটা ভাষণে, যা বলে গেলেন, তা তাঁর পূর্বসূরি গোলওয়াকার গুরুজির পুনরাবৃত্তি। গুরুজি, রাষ্ট্র ধর্ম, সমাজ ধর্ম এবং কুল ধর্মকে ব্যক্তি ধর্মের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন। এর আগেও ভাগবতের অধস্তন সঙ্ঘ পদাধিকারীরা এমন ভাবেই হিন্দু-মুসলিম বিভাজন মুছে না-দিলে তোষণ এবং ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি চলবে বলে প্রচার করে এসেছেন। সঙ্ঘের সহ-সচিব মনমোহন বৈদ্য এ বিষয়ে স্পষ্টবাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কলেজের রসায়নের শিক্ষকতা ছেড়ে আরএসএসের সর্বক্ষণের কর্মী মনমোহন মনে করেন, শতকরা নিরানব্বই ভাগ মুসলমান, খ্রিস্টান ইত্যাদি কয়েক প্রজন্ম ধরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তাঁদের আদি পরিচয় হিন্দু। তাই তাঁদের উপাসনা পদ্ধতি ভারতীয়তা বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না। তাই সমাজকে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজন অর্থহীন এবং ক্ষতিকারক বলে দাবি মনমোহন বৈদ্যর। প্রায় পাঁচ বছর আগে কলকাতায় কেশব ভবনে একান্ত আলোচনায় ওঁর বলা এই কথাগুলোই তো ভাগবত বললেন। প্রচার হল, ধর্মীয় বিভাজন নয়, যেন ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন সর সঙ্ঘচালক। আসলে একটা চালাকি রয়েছে। কেননা, তিনি মুসলমান সমাজের বিশিষ্ট (নিশ্চই তাঁরা বিজেপি অনুরাগী) মানুষজন যাঁরা জনমত গড়তে সক্ষমতাদের কাছে একটা ঔদার্যের বার্তা পৌঁছে দিলেন, ধর্মীয় ভেদাভেদ মুছে দিয়ে। যেন, আরএসএসকে ভুল না বোঝা হয়। আসলে এই মুছে দেওয়া বস্তুত ‘এথনিক ক্লিনজং’ এর একটা পদক্ষেপ, অন্তত তত্ত্বগত স্তরে। ইতিমধ্যেই বিজেপিকে দিয়ে ‘শরণার্থী’ আর ‘অনুপ্রবেশকারী’ বিভাজন চাগিয়ে তুলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করিয়েছে সঙ্ঘ। সেটাকে কার্যকরী করার পথে বাধা রয়েছে। সঙ্ঘ কিন্তু সে ব্যাপারে তার ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বজায় রেখেছে। কেননা, তাদের মূল অভিমুখ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতেই কি ভাগবত আপাত ঔদার্যের এই কৌশল নিয়েছেন ?

আরও পড়ুন:

এর এক কথায় জবাব এখনই মিলবে না। কিন্তু কট্টরপন্থীরা যদি ভেবে বসে শেষমেশ ভাগবতও মুসলিমদের সঙ্গে আপোসের পথ ধরলেন! ধন্দ কাটাতে তাই আসরে নেমে পড়েছে বিজেপির মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’। পাছে কেউ সঙ্ঘ কর্তাকে ভুল বোঝে, তাই ভাগবতের ভাষণের সম্ভাব্য ফাঁকফোঁকর বুঝিয়ে দিতে বিস্তর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যাতে আরও স্পষ্ট হল সঙ্ঘের দ্বিমুখী কৌশল। এমন সাম্য যে সরকারি চাকরিতে মুসলমানের স্বল্পতা নিয়ে সাচার কমিটির দেড় দশক আগের রিপোর্ট আজও প্রাসঙ্গিক। মনে রাখতে হবে, ভারতে কুড়ি কোটির বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বীর বাস।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন আরএসএস প্রধান এই সময়টাকে বেছে নিলেন। প্রথমত, কোভিড মোকাবিলায় প্রাক্তন সঙ্ঘ প্রচারক নরেন্দ্র মোদির রেকর্ড নড়বড়ে। আগামী ২০২৪ তাঁর কাছে ক্রমশ কঠিনতর হচ্ছে। তার পরের বছর ২০২৫ সঙ্ঘের শতবর্ষ। সেটা হিন্দুত্ববাদীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নাগপুরের বাসনা, গোটা দেশে ফাগুয়া নিশান উড়িয়ে সঙ্ঘের শতবর্ষ উদযাপন করা। কিন্তু গেরুয়া বাহিনীর পক্ষে বর্তমান সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। একের পর এক ভোটে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। মন্দির রব এখন অতীত। উগ্র হিন্দুয়ানী দেখাতে গিয়ে কার্যক্ষেত্রে তা মুসলিম নিগ্রহের কুৎসিত রূপ প্রকট হয়েছে। যা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের একাংশ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। পরোক্ষে তা বিজেপির নির্বাচনী রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে আসন্ন। সে রাজ্যে প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান। তাঁদর ভোট একটিও পাবে না বিলক্ষণ বিজেপি সেকথা জানে। জানে সঙ্ঘও। তাই মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সঙ্ঘ পরিবারকে ঘিরে যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে,তাতে বিদেশি পুঁজি লগ্নির পথ মসৃণ হতে পারে না। দেশীয় অর্থনীতি বেহাল,এই অবস্থায় অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা মোটেই পুঁজি বান্ধব হতে পারে না। গো-রক্ষার নামে গণপিটুনির বাড়বাড়ন্ত যে সুশাসনের পরিচায়ক নয়, সেটা উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের দোরগোড়ায় এসে টের পাচ্ছে গেরুয়া শিবির। তাই এই সন্ধিক্ষণে একদিকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মহড়া অন্যদিকে ইনক্লুসিভ রাজনীতির অছিলায় ধর্মরাষ্ট্র নির্মাণের পক্ষে মুসলমান এবং লিবারেল সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন ভাগবত।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Indian Exportation | এবার ভারত থেকে বিদ্যুৎ যাবে আরব দুনিয়ায়, কীভাবে যাবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:09:51
Video thumbnail
Air India | Gujrat | ভেঙে পড়া বিমানে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী! এই খবরে তীব্র চাঞ্চল্য
03:05:49
Video thumbnail
Iran-America | ইরান থেকে সরানো হচ্ছে মার্কিন নাগরিকদের, এবার কি আসন্ন আমেরিকা-ইরান যু/দ্ধ?
33:11
Video thumbnail
Donald Trump | America | ফেলো কড়ি থাকো আমেরিকায়
21:50
Video thumbnail
Ahmedabad | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্র
30:36
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | কীভাবে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান? দেখুন সেই মুহূর্তের ছবি
02:21:32
Video thumbnail
Indian Exportation | বিদ্যুৎ রফতানি, বিরাট পদক্ষেপ ভারতের, কী সিদ্ধান্ত? দেখুন বড় খবর
20:45
Video thumbnail
Ahmedabad | Air India | লন্ডনগামী বিমানে কতজন যাত্রী ছিলেন? কী অবস্থা তাঁদের? দেখুন লেটেস্ট আপডেট
02:34:06
Video thumbnail
Ahmedabad | Air India | আহমেদাবাদে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান, বহু হ/তাহ/তের আশঙ্কা, দেখুন ভিডিও
02:26:20
Video thumbnail
Vidhan Sabha | BJP | আজ বিধানসভায় কী অবস্থা? দেখুন এই ভিডিও
01:59:14