Tuesday, June 10, 2025
Homeফিচারপার্টি শেষ কথা নয়!

পার্টি শেষ কথা নয়!

Follow Us :

যদি বিপ্লব করতে হয় তাহলে অবশ্যই একটা বিপ্লবী পার্টি থাকতে হবে। মাও জে দং-এর রেডবুকের প্রথম পাতাতেই এই কথা লেখা আছে। পার্টি বা দলের প্রয়োজন অবশ্য বিপ্লব না করলেও জরুরি। পার্টি গণতন্ত্রেও প্রয়োজন। পার্টি বা দল ছাড়া গণতন্ত্র চলে না। বিপ্লবী পার্টিকেও বিপ্লবের পরে মানুষের বিরুদ্ধে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। গণতন্ত্রেরও পার্টি তার জনপ্রিয়তা হারায়। এমন দৃষ্টান্ত অসংখ্য। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের সাফল্য আমাদের দেখালো রাজনৈতিক পার্টির নেতৃত্ব ছাড়াও, মিডিয়ার সাহায্য ছাড়াও আন্দোলন জেতা যায়। অতীতেও কম-বেশি এমন নজির রয়েছে। কিন্তু এবারের সাফল্য ঐতিহাসিক। এর অর্থ কী? বিরোধী রাজনৈতিক পার্টিগুলি কি মানুষের কথা আর বলতে পারছে না? মানুষের মন বুঝতে পারছে না? ভোট আসে। মানুষ অভ্যাসে ভোট দেয়। বিজেপির বিপরীতে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণে পার্টি রাজনীতির বাইরে একটা মানুষের যৌথ রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। রাজনীতিতে গণ-উদ্যোগ তৈরি হচ্ছে। অথচ রাজনৈতিক দলগুলি, তাদের দিক থেকে কী কী ঘাটতির ফলে এমন পার্টিবিহীন-মঞ্চ তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। বিরোধী পরিসরের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না বলেই কি এই ধরনের গণ উদ্যোগ? উত্তর সময় দেবে।

গণতন্ত্র যখন ভয় দেখায়!
গত ৩০ অক্টবর যে ১৪ টি রাজ্যের ৩০টি বিধানসভা আসন এবং তিনটি লোকসভা আসনে ভোট হয়ে গেল তাতে মধ্যপ্রদেশ, অসমে বিজেপি ভালো ফল করলেও সাধারণ ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা রাজ্যে বিজেপির ফল খারাপই বলা যায়। বরং হিমাচল প্রদেশে, রাজস্থান সহ কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেসের খানিকটা লড়াইয়ে ফিরে আসার গল্প আছে ফলাফলের এই পরিসংখ্যানে। হেরে গিয়েও কয়েকটি আসনে কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে। এই ফল দেখেই সঙ্গে সঙ্গে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর কথা ঘোষণা করে মোদী সরকার। এর পর মোদী-শাহ-নাড্ডাদের সামনে আসে উত্তরপ্রদেশের ভোট নিয়ে দলের তিনটি সমীক্ষার ফল। সেই ফল কার্যত ভীতির জন্ম দেয়। হারের গন্ধ পান হিন্দু হৃদয়ের সম্রাট। তারই পরিণতি, কৃষিবিল প্রত্যাহার।  এই যে হেরে যাওয়ার ভয়, ভয়ে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেওয়া, এটাই গণতন্ত্র। গণতন্ত্র এই ভয় দেখায়। যত দিন ভোট থাকবে , মানুষের সরকার বদলে দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। ততদিন এই ভয় থাকবে। এ হল গণতন্ত্রের ‘ভয়’।

বিপিনবাবুর বাক্যসুধা!
আমাদের দেশের ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’, বিপিন রাওয়াত সম্প্রতি বলেছেন, ‘এটা খুবই ভালো খবর যে কাশ্মিরীরা এখন চাইছে সন্ত্রাসবাদীদের পিটিয়ে খুন করে দিতে’। তিনি ‘লিঞ্চিং’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। সরকারি পদে বসে তিনি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকে সমর্থন করছেন ‘ভালো খবর’ বলে। এই কথা থেকে বোঝা গেল ,তাঁর পরিষ্কার মত, টেররিস্ট হলে লিঞ্চিং, মানে পিটিয়ে খুন ভালো। সেনার সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তির মুখে এই কথা গণতন্ত্রের কথা নয়। মনে রাখা দরকার দেশের আইনের ঊর্ধ্বে বিপিনবাবুও নন। দেশের আইনে সন্ত্রাসবাদীরও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সারা পৃথিবীর সব সভ্য দেশ সেই অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সব থেকে বড়ো কথা, কে সন্ত্রাসবাদী, কে নয় সেটা কে ঠিক করে দেবে। পুলিশের গুলিতে মাওবাদী সন্দেহে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা আছে, যে সব ক্ষেত্রে পরে জানা গিয়েছে তারা মাওবাদী ছিলেন না। সেই মৃত্যুর দায়িত্ব কে নেবে?
২০১৫ সালে বাড়িতে গরুর মাংস রাখা আছে এই বলে মহম্মদ আখলাখকে পিটিয়ে খুন করার কথা ভুলে যাইনি আমরা। হত্যায় অভিযুক্তেরা হিন্দুত্ববাদী ছিলেন। অভিযুক্তদের একজনের জেলের ভিতর মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যে মোদী সরকারের এক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তার মৃতদেহ ঢেকে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় পতাকায়। পিটিয়ে খুন করার জয়গান যারা গাইবেন তাঁরা কি গণতন্ত্রের পক্ষে?

ডোভালেন তিনি ডোভালেন।
নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করার সাহস দেখায়। নাগরিক সমাজকে আধুনিক গণতন্ত্র সম্পদ মনে করে। দেশের সংবিধান তাদের এই প্রশ্ন করার অধিকার দেয়।  হায়দরাবাদের পুলিশ অ্যাকাডেমিতে আইপিএস-দের প্রশিক্ষণ শেষের অনুষ্ঠানে আমাদের দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বলেছেন, “নাগরিক সমাজই এখন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। কারণ নাগরিক সমাজকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় স্বার্থে আঘাত হানার চেষ্টা হতে পারে।
নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে প্রশ্ন তুলে, কার্টুন এঁকে, নাটক করে, কৌতুক অভিনয়ের জন্য ইতিমধ্যেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন,বন্দি হয়েছেন বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, শিল্পী। মনে রাখা দরকার কৃষক আন্দোলনের সমর্থক নাগরিক সমাজের মানুষদের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন ওঁরা ‘আন্দোলনজীবী’, ‘পরজীবী’। পরিবেশ নিয়ে সরব এক কলেজ ছাত্রী দিশা রবিকে গ্রেফতারের পর , প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এফডিআই থেকে সাবধান হতে। তাঁর এফডিআই মানে ‘ফরেন ডেস্ট্রাকটিভ আইডিওলজি’। ওঁরা ইতিমধ্যেই ডারউইনের তত্ত্বকে ভুল বলতে শুরু করেছেন। এর পর হয়তো বলবেন নিউটনের তত্ত্বও ভুল। ফরেন ডেস্ট্রাকটিভ সায়েন্স! দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা যে কথা বলছেন নাগরিক সমাজ নিয়ে, সেটা আসলে হিন্দুত্ববাদীদেরই অ্যাজেন্ডা।

মানবাধিকার
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিতর্কের আয়োজন করে সম্প্রতি। বিষয়, ‘সন্ত্রাসবাদ, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে মানবাধিকারই বড়ো বাধা’। বহু আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মানবাধিকার অর্জন করেছে দেশের নাগরিকরা। যে অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় আমাদের সংবিধান। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এই ধরনের বিতর্কের আয়োজন, মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত সনদে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির সঙ্গে ভারতও একজন সাক্ষরকারী। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই ধরনের বিতর্ক আয়োজন করা এই বিষয়ে ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে বেমানান।

৫৬ ইঞ্চি দূর হটো
নারী-কেন্দ্রিক কর্মসূচি ঘোষণা এবং রূপায়ণে ভারতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা পরিবর্তন এনেছেন। কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথি, সবুজসাথি, লক্ষ্মীভাণ্ডার সহ তাঁর বহু প্রকল্প মহিলা কেন্দ্রিক। প্রায় সব নির্বাচনেই তাঁর দল দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলির থেকে অনেক বেশি মহিলা প্রার্থী দাঁড় করায়। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা ভদরা স্লোগান দিয়েছেন, ‘লড়কি হুঁ, লড় শকতি হুঁ’। তাঁর আরও ঘোষণা, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ৪০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দেবে। বোঝা যাচ্ছে মমতার রাজনীতির প্রভাব রাজ্যের মানচিত্র পেরিয়ে বাইরেও যেতে শুরু করেছে। কলকাতা পুরসভার যে প্রার্থী তালিকা বিজেপি ২৯ নভেম্বর প্রকাশ করেছে তাতে যে ৬০ জন মহিলা প্রার্থীর নাম রয়েছে, তা-ও মমতারই প্রভাবে। বিজেপি তো মনে করে ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি থাকলে তবেই ভাল প্রশাসক হওয়া যায়। মমতা তাদের সেই পুরুষকেন্দ্রিক অবস্থান অন্তত এই বাংলায় পাল্টাতে বাধ্য করলেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | দ্বিধাবিভক্ত বাংলায় ত্রিধাবিভক্ত বিজেপি
52:53
Video thumbnail
Narod Narod (নারদ নারদ) | দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে সৌমিত্র, কী নিয়ে আলোচনা?
27:13
Video thumbnail
RCB | বাছাই করে গ্রেপ্তার কেন? ধৃ/ত আরসিবি মার্কেটিং প্রধান নিখিল সোসালের আইনজীবীর প্রশ্ন
01:22
Video thumbnail
R.T. Sports Tennis Academy | টেনিস নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে R.T. Sports Tennis Academy
06:15
Video thumbnail
Indian Air Force | আরও শক্তিশালী হচ্ছে বায়ুসেনা এই তথ্য জানলে ভয়ে কাঁপবে গোটা বিশ্ব
04:08
Video thumbnail
Narendra Modi | Abhishek Banerjee | মোদির নৈশভোজে অভিষেক, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:47
Video thumbnail
D.Y. Chandrachud | অবসরের পরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কী করবেন? জানলে চমকে উঠবেন
03:47
Video thumbnail
Bhupender Yadav | ভা/য়ো/লেন্স ইন গভার্নেন্স, শহরে এসেই বি/স্ফো/রক ভূপেন্দ্র যাদব
06:11
Video thumbnail
OBC | TMC | OBC ইস্যুতে তোলপাড় বিধানসভা, প্রতিবাদ বিজেপির, কী করল তৃণমূল?
05:14
Video thumbnail
Operation Sindoor | Indian Army | ভারতীয় সে/নাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব
04:04