Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: বিরোধী ঐক্য এক মরীচিকা 

Fourth Pillar: বিরোধী ঐক্য এক মরীচিকা 

Follow Us :

২০১৯-এ লোকসভায় ৩০৩খানা আসন জিতেছিল বিজেপি, কিন্তু ভোট পেয়েছিল ৩৭.৩০। কেন এমনটা হয়েছিল? তার প্রথম কারণ তখনও বিজেপির সঙ্গে জনতা দল ইউনাইটেড ছিল, আকালি দল ছিল, শিবসেনা ছিল, লোকজনশক্তি পার্টি ছিল, এদের ভোটও ট্রান্সফার হয়েছিল, তাঁর পরেও বিজেপির ভোট ছিল ৩৭.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ আজ এই মুহূর্তে অকালি দল, জনতা দল ইউনাইটেড, শিবসেনার একটা অংশের ভোট সরে যাবার পরে বিজেপির ভোট কমবেশি ৩৩ শতাংশ। কিন্তু তাদের হাতে ৩০৩ জন সাংসদ, তারাই এখন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। দেশের উল্লেখযোগ্য রাজ্য মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশে, কর্নাটকে দল ভাঙিয়ে সরকার তৈরি করেছে, অর্থাৎ সেখানে তাদের ক্ষমতা বিরোধীদের থেকে কম বা সমান। বিহার তাদের হাত থেকে চলে গেছে। পঞ্জাব, বাংলা, তেলঙ্গানা, অন্ধ্র, ওড়িশা, তামিলনাডু, কেরল, দিল্লি, হিমাচলপ্রদেশ তাদের হাতে নেই। এখনই লোকসভা ভোট হলে উত্তরপ্রদেশে গতবারের মানে ২০১৯-এর ফলাফল রিপিট করা বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়, কিছু আসন কমবে। গুজরাতে প্রত্যেকটা আসন ছিল বিজেপির, সেটাই থাকবে, রাজস্থান বা ছত্তিশগড় ক্লিন সুইপ করেছিল বিজেপি, এবার সেটা অসম্ভব। শিবসেনা-বিজেপি জোটের বদলেও এবার শিন্ডে–বিজেপি জোট, আগের ফলাফল অসম্ভব। বিহারে গোটা ৫ আসন পাওয়াও কষ্টকর হবে, বাংলায় গতবারের আসন বিজেপি কোনওভাবেই ধরে রাখতে পারবে না। 

ইন্ডিয়া টুডের সার্ভে বলছে, বিজেপি এককভাবে ২৭৩-এর থেকে অনেকটাই দূরে থাকবে, তাহলে? তাহলেও সরকার তৈরি করবে বিজেপি, ভেঙেচুরে, যেভাবেই হোক চেষ্টা তো করবেই। কিন্তু সেই সরকারের ঝাঁজ থাকবে না, আর লঙ্কার ঝাঁজ না থাকলে আর লঙ্কা কীসের? ঠিক সেই রকমই আরএসএস–বিজেপির সরকার কিন্তু ক্রাচের ওপর দাঁড়িয়ে বিলকুল আলাদা হবে, সবাই তো আর কাকাবাবু নয়। আমরা তো অটলবিহারীর সরকার দেখেছি, যে সরকার না রাম জন্মভূমি না ৩৭০, না গোহত্যা নিবারণ, কোনওটা নিয়েই কোনও কথাই বলেনি, শাইনিং ইন্ডিয়া নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ২০২৪-এ যদি বিজেপি অন্য ছোট দলের সাহায্য নিয়ে সরকার তৈরিও করে তাহলে ওই ল্যাজ কুকুরকে নাড়াবে, কুকুর ল্যাজকে নয়। কিন্তু এই সম্ভাবনা থাকেই না, থাকার কথাও নয়, যদি একটা ঐক্যবদ্ধ বিরোধী লড়াই হয়, অন্তত স্ট্রাটেজিক অ্যালায়েন্স হলেও বিজেপি ২৩০-এর ওপরে যেতে পারবে না। এটা বিজেপি জানে, বিরোধীরাও জানেন। তবু দেখুন, তাকিয়ে দেখুন, এ বলে আমি হনু, ও বলে আমি। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: কাকচরিত্র  

রাহুল গান্ধী গেলেন মেঘালয়ে, খবরের কাগজ কী ছাপল? রাহুল আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে, সেদিনের যাবতীয় ন্যাশনাল নিউজ দেখুন, তৃণমূল যে আসলে বিজেপির বি টিম, সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন রাহুল গান্ধী। কোথায়? একান্তে? বৈঠকে? না, জনসভায় তিনি এসব কথা বলেছেন। আচ্ছা যদি তিনি এই কথাগুলো মন থেকে বিশ্বাসই করেন, মানে আমি বলছি এ তো নতুন কিছু নয়, তলে তলে হাত মেলানোর ইতিহাস তো আজকের নয়, বহু পুরনো, কাজেই এক্ষেত্রেও হতেই পারে। কিন্তু যদি তাই হয়ে থাকে, যদি রাহুল গান্ধী এতটাই শিওর হন, তাহলে মাত্র ক’দিন আগে এই তৃণমূল দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভারত জোড়ো পদযাত্রার সমাপনে হাজির থাকার জন্য। বিজেপির সঙ্গে তলে তলে যোগ রাখা এক দলকে রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রায় নেমন্তন্ন করলেন কেন? এবং তারপরের ঘটনা আশা অনুযায়ীই ঘটেছে, তৃণমূল দলের নেত্রী একটা কথা না বললেও দলের দু’ নম্বর নেতা কামান দেগেছেন, দেশজোড়া মানুষ তাও শুনেছে। 

এরাজ্যে ফুটপাথে হল্লাগাড়ির মতই রোজ আসছে ইডি, সি বি আই, ভিজিলেন্স, রাজ্যের বিজেপি খুশি। খুশি হবারই কথা। কিন্তু বাম কংগ্রেস? তারাও খুশি, আনন্দ উচ্ছ্বাস বেরিয়ে আসছে, বিজেমূল থিওরি আবার গবগবিয়ে বেরিয়ে আসছে। আবার বলছি বিজেমূল হওয়াটাও রাজনীতি এবং হওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়, কিন্তু বিরোধী বৈঠকে তৃণমূল থাকছে, থাকছে সিপিএম ও, তো এক বিজেমূলকে নিয়ে বৈঠক কেন? এবং রাজ্যে বা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মদন মিত্র বা কুণাল ঘোষ নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখা চোখা বিশেষণ তো কেবল এরাজ্যের মানুষ শুনছেন না, দেশের মানুষও শুনছেন। একইভাবে তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি যা এখন ভারত রাষ্ট্র সমিতি এবং তাঁর নেতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের আক্রমণ তাঁর রাজ্যে তো কেবল বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও। বিস্ফোরক অভিযোগ আনছেন কে সি আর। বলছেন, এ রাজ্যে মানে তেলঙ্গানায় কংগ্রেস নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে না লড়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়ছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, ওই তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি আসলে বিজেপির বি টিম। একই ছবি অন্ধ্রপ্রদেশে। ওদিকে দিল্লিতে কংগ্রেসের ক্ষমতা কেড়েছে আপ, পঞ্জাবে কংগ্রেসের সরকার কেড়েছে আপ, কাজেই এই মুহূর্তে আপ–কংগ্রেসের সম্পর্ক প্রায় সাপ–বেজির মতো, গুজরাতে আমরা তাই দেখলাম। 

দেশ নয়, সারা বিশ্ব সুদ্ধ মানুষ জানে যে মোদি সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যাবতীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে। প্রত্যেক বিরোধী দলের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন থেকে আদালত থেকে মিডিয়া, থেকে সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে কবজা করে আসলে বিরোধিতার সামান্যতম স্বরকেও মোদিজি আঁতুড়ঘরেই মেরে ফেলতে চান, মেরে ফেলছেন। একটা পারসেপশন তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে প্রত্যেক বিরোধী দল আসলে দুর্নীতিবাজ, করাপ্ট। সেই ওভারঅল অ্যাকশন প্ল্যান মতোই রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, রোজ হেডলাইনে দুর্নীতি, এতবড় খবর দেখে পাবলিক কুছ তো সচ হ্যায়, এত খবর যখন, কিছু তো নিশ্চয়ই সত্যি গোছের সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য, তাই হচ্ছেও। সেই অ্যাকশন প্ল্যানের অঙ্গ হিসেবে গ্রেফতার করা হল আপ-এর দু’ নম্বর নেতা মণীশ সিসোদিয়াকে। এক্সাইজ স্ক্যাম, কোটি কোটি টাকার তছরুপ বা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ, সিসোদিয়া, তাঁর ঘর, দফতর পরিচিতের বাড়ি থেকে এক টাকাও বের হয়নি, তাতে কী? তাঁকে গ্রেফতার করা হল। মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, আপও দুর্নীতির বাইরে নয়, শীর্ষ নেতাই দুর্নীতির দায়ে জেলে। প্রত্যেকটা দল এই ইডি, সিবিআই, ভিজিলেন্স, ইনকাম ট্যাক্সের ঘন ঘন রেড নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু এই গ্রেফতারের পর বিরোধিতা করেছেন কারা? তৃণমূল বিরোধিতা করেছে, ডেরেক ও’ব্রায়েন বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বিজেপির শরিকরা ছেড়ে গেছে বিজেপিকে, এখন এই সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদিরাই বিজেপির শরিক। নিন্দা করেছেন অখিলেশ প্রসাদ যাদব সমাজবাদী দলের পক্ষ থেকে, শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউত এই গ্রেফতারের বিরোধিতা করেছেন। ফুলস্টপ। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: ইউ পি মে কা বা?  

বাম থেকে বাকি দল ২৪ ঘণ্টা পরে এখনও মৌন। ওদিকে কংগ্রেসের দিল্লির নেতা এই গ্রেফতারিকে স্বাগত জানিয়েছে। বুঝুন। কদিন আগেই খাড়্গেজির আমন্ত্রণে আপ নেতা সঞ্জয় সিংকে থাকতে দেখেছি আমরা, আজ সেই ঐক্যে গ্যামাক্সিন ঢেলে দেওয়া হল। তাহলে দাঁড়াচ্ছেটা কী? কোথাও বিরোধীদের এই বিচ্ছিন্নতা বিজেপিকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে। বিজেপিকে কষ্ট করে ভাগাভাগির খেলাও খেলতে হচ্ছে না, টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া বিরোধীদের দেখে দৃশ্যতই উল্লসিত বিজেপি নেতারা। নরেন্দ্র মোদি জনসভায় দাঁড়িয়ে এই নৌটঙ্কির কথা বলেই চলেছেন, একবার নয় বারবার, আর যেখানে চুপ থাকার সেখানে চুপ করে থাকছেন। সামগ্রিক বিরোধী ঐক্য? সম্ভব নয়, তার জন্য মানুষের যে চাপ থাকা দরকার, সেই চাপও নেই, সার্বিক জোট না হলেও একটা বোঝাপড়া তো সম্ভব? অন্তত কিছু বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান রাখা তো সম্ভব। আমাদের দেশের বিরোধী দল সেই গুরুত্ব হয় বুঝতে পারছে না, নাহলে তাঁদের কেউই দলীয় সংকীর্ণতার উপরে উঠে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়। 

তাহলে হবেটা কী? যদি এমনই চলতে থাকে, তাহলে ২০২৪-এর পর দেশ ক্রমশ এক বিরোধী শূন্য, বিরোধিতা শূন্য অবস্থার মুখোমুখি হবে, যা গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে কবরের তলায় পাঠিয়ে দেবে। দেশের বিরোধী দল নিয়ে বলার কিছুই নেই, কিন্তু ওই বিরাট সংখ্যক মানুষ, ৩৭-৩৮ শতাংশের পরে পড়ে থাকা ৬২-৬৩ শতাংশ মানুষ, যাঁরা এতকিছুর পরেও মোদি, আরএসএস-এর কথায় তাদের ভোট দিলেন না, যাঁরা ব্যালটে সাফ জানালেন এক জাতি এক রাষ্ট্র, এক নেতার প্রতি তাঁদের অনাস্থার কথা, যাঁরা মেনেই নিলেন না হিন্দুরাষ্ট্রের মতো এক অর্বাচীন কাণ্ডকারখানা, সেই ৬২-৬৩ শতাংশ জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ইতিহাসে থাকবে। লেখা থাকবে, মানুষ ছিল সঙ্গে, তবুও হেরেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দল আর নেতারা, তাঁদের ইগোর জন্য, তাঁদের পদের প্রতি লোভের জন্য, তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্য।       

 

RELATED ARTICLES

Most Popular