Thursday, June 12, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | মোদি সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়  ...

Fourth Pillar | মোদি সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়    

Follow Us :

ভারতবর্ষকে মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি বলেছেন কে? এরকম এক অদ্ভুত থিওরি এনে হাজির করেছেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এটা তো ঘটনাই যে আমাদের দেশে পার্টিসিপেটরি ডেমোক্র্যাসির ইতিহাস আছে, ষোড়শ জনপদের সময় থেকেই এই ইতিহাস আমরা জেনেছি। সারা বিশ্বেও গণতন্ত্রের বিভিন্ন ধারণার জন্ম হয়েছে, বিশ্বজুড়ে তার রূপান্তর হয়েছে, কিছু বিত্তবান মানুষের গণতন্ত্র থেকে মানুষের গণতন্ত্র পর্যন্ত অনেক পথ হেঁটেছে পৃথিবী। সে পথে গণতন্ত্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গের পরিবর্তন পরিমার্জন হয়েছে। ধরুন নির্বাচন, প্রথমে সবার ভোটাধিকার ছিল না, নারীদের ছিল না, দাসেদের ছিল না, ক্রমশ ইউনিভার্সাল ফ্রাঞ্চাইজি। প্রত্যেকের ভোটাধিকারকে কেবলমাত্র বয়সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়, মানে ১৮ বছর বয়স হয়েছে, এবার আপনি ভোট দিতে পারেন। তো এমন বিশাল, বিস্তৃত এবং ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এক ধারণার মা হল ভারতবর্ষ এমন এক শব্দবন্ধের কি খুব প্রয়োজন ছিল? ছিল কি ছিল না নিয়ে বিতর্ক হোক, কিন্তু আপাতত মোদিজির ভাষায় ভারতবর্ষ হল মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম কারণ এই ধারণা এসেছে দেশের ফাদার অফ পাওয়ারের কাছ থেকে। ক্ষমতার চূড়োয় বসে থাকা মানুষের এটাই সুবিধে, উনি বলেছেন আচ্ছে দিন লায়েঙ্গে, কাজেই আচ্ছে দিন এসে গিয়েছে। সে আচ্ছে দিনকে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের জীবনযাপনের মান দিয়ে মাপামাপি করার কোনও কথাই তিনি বা তাঁর সমর্থকেরা শুনবেন না, কারণ ওই যে ফাদার অফ পাওয়ার যে কথা বলেছেন, তা তো মিথ্যে হতেই পারে না। তো সেই মাদার অফ ডেমোক্র্যাসিতেই এক বোমা ফাটালেন টুইটারের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডোরসি, তিনি জানালেন কৃষক আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী, সেসব আন্দোলনের খবর যাঁরা ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন, সেইসব সাংবাদিকদের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল ভারত সরকার, বন্ধ না করলে পুলিশি রেইড ইত্যাদির ধমকিও দেওয়া হয়েছিল। 

কে ভাই এই জ্যাক ডোরসি যিনি মাদার অফ ডেমোক্র্যাসির ফাদার অফ পাওয়ারের বিরুদ্ধে এতবড় কথাটা বলে দিলেন? তিনি হলেন টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা এবং কিছুদিন আগে পর্যন্ত টুইটারের সিইও ছিলেন। মার্চ ২০০৬-এ জ্যাক ডোরসি, নোয়া গ্লাস, বিজ স্টোন, ইভান উইলিয়ামস, এই চারজন মিলে এই টুইটার শুরু করেন এবং তা খুব শিগগির গোটা দুনিয়ার অন্যতম চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ওঠে। তো সেই জ্যাক ডোরসি বলছেন যে ভারত সরকার এই সোশ্যাল মাধ্যমে সরকার বিরোধীদের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরকারের এক সিকি মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যে, ভিত্তিহীন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা হই চই শুরু করেছেন। আমরা ওই বক্তব্যের বিরোধিতা বা সমর্থনের কথাতে যাচ্ছিই না। বরং যেভাবে এক অপরাধের তদন্ত হয়, চলুন সেভাবে বিষয়টাকে খুঁটিয়ে দেখা যাক। প্রথম কথা হল, জ্যাক ডোরসির এই বক্তব্য নিশ্চিতভাবেই সরকার বিরোধী, তো এক আমেরিকান ভদ্রলোক, যথেষ্ট পয়সাকড়ি আছে, তিনি মোদিজির বিরোধিতা করবেন কেন? কোন কারণে? তাঁর অতীত কাজকর্ম থেকে তেমন কোনও সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। হতে পারে উনি টাকার বিনিময়ে এই কাজ করছেন, সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসের থেকে অনেক বেশি পছন্দের হওয়া উচিত বিজেপি, যারা দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মিলিত সম্পদের দ্বিগুণেরও বেশি বিত্তবান। এই বক্তব্য দিয়ে জ্যাক ডোরসির ব্যক্তিগত লাভের কোনও মোটিভ দেখা যাচ্ছে না। এটা যদি উনি মিথ্যেই বলে থাকেন, তাহলে তার পিছনের কোনও কারণ এখনও পর্যন্ত আমাদের হাতে নেই। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | তেলঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় আর রাজস্থানে কারা সরকার বানাবে? 

ওদিকে ভারত সরকারের বিবৃতির সপক্ষেও এমন কোনও প্রমাণ বা যুক্তি খাড়া করা হয়নি, যা দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে ভারত সরকার সত্যিটা বলছে, জ্যাক ডোরসি মিথ্যে বলছে। তাহলে আর কীভাবে এই তথ্যকে যাচাই করা যাবে? তথ্য দেশের অন্যতম বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর টুইটার আগস্ট ২০২১ সালে ব্লক করে দেওয়া হয়। অগাস্ট ২০২১ মানে কৃষক আন্দোলনের চূড়ান্ত সময়। বিভিন্ন মহলের বিরোধিতার পরে সেই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়, কিন্তু তাকে রেস্ট্রিকটেড করা হয়, মানে তাঁর টুইট সব জায়গায় পৌঁছবে না, ফলোয়ারদের কাছেও তাঁর টুইট পৌঁছবে না ইত্যাদি, এসব কলকব্জা আছে, করাও যায়। তো ছ’ মাস এরকম চলতে থাকে, শেষে আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এই খবর ছাপার পরে হঠাৎই তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট আবার আগের মতো দেখা যেতে থাকে, সাবস্ক্রাইবারও বাড়তে থাকে। একই ঘটনা ঘটে বিভিন্ন আন্দোলনকারী, আন্দোলনকারী সংগঠন, বিভিন্ন সাংবাদিকদের টুইটার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। এ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করেছিল দ্য ওয়্যার, সেসব গুগল করলেই পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আজ যা জ্যাক ডোরসি বলছেন, তা বহু আগেই আমাদের জানা ছিল, এটা কেবল অফিসিয়াল কনফার্মেশন, মানে টুইটারের এক বড়কর্তা নিজের মুখেই সেদিনের সেই খবরগুলোকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। তিনি অবশ্য ঝপাং করে এই ভারতের সরকার নিয়ে কথা বলেননি, তিনি এক ওয়েব ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন, সেখানেই তিনি বলেন, ভারতবর্ষে নাকি গণতন্ত্র আছে, সেখানকার সরকার টুইটার অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছিল বেশ কিছু টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য, সেগুলো সবই সরকার বিরোধী টুইটার হ্যান্ডল ছিল। এই কথাগুলোর সঙ্গে যদি অগাস্ট ২০২১-এর ছবিকে মেলানো হয় তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে, টুইটার কর্তৃপক্ষকে এরকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এবং প্রাথমিকভাবে সেই নির্দেশ পালন করা হয়েছিল। ট্রাক্টর টু টুইটার নামে জনপ্রিয় কৃষক আন্দোলনের টুইটার হ্যান্ডল বন্ধ করা হয়েছিল, সিপিআইএম-এর মহম্মদ সেলিম এবং সিপিআইএম পন্ডিচেরির টুইটার হ্যান্ডল বন্ধ করা হয়, ওয়েব ম্যাগাজিন দ্য ক্যারাভানের টুইটার হ্যান্ডল সমেত ৩০০ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, যে খবর তখন টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে ছাপা হয়েছিল। 

তার মানে টুইটার অ্যাকাউন্ট যে বন্ধ করা হয়েছিল তা আমাদের জানা ছিল, কারণটা এতদিনে জানা গেল। আসলে বেয়াড়া সংবাদমাধ্যমকে শায়েস্তা করার সব তরিকাই আমাদের মাদার অফ ডেমোক্র্যাসির ফাদার অফ পাওয়ার জানেন। গোদি মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন, এই ২০১৪ থেকে প্রকৃত অর্থে যাঁরা সাংবাদিক তাঁদের অবস্থা দেখুন, তাঁদেরকে কীভাবে ছাঁটাই করা হয়েছে বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে তা দেখুন, তাকিয়ে দেখুন বেয়াড়া সংবাদমাধ্যম আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরকারের আনা মামলাগুলোর দিকে। বিনোদ দুয়ার ওপরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও করা হয়েছে, এই ক’দিন আগে দৈনিক ভাস্করের এক সাংবাদিককে আঙুল তুলে শাসাতে দেখা গেল মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে, সে সাংবাদিকের চাকরি গেছে। এসব তো সরকার করেছে কিন্তু সমস্যা হল নিত্যনতুন গজিয়ে ওঠা নেট দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি, যেখানে খবর চাপা যাচ্ছে না, কার্বাঙ্কলের ১০০টা মুখের মতো এক মুখ বন্ধ করা হলে অন্য মুখ থেকে পুঁজ রক্ত বেরিয়ে আসছে, শরীরের আসল হাল হকিকত বোঝা যাচ্ছে, আচ্ছে দিনের বদলে স্বাধীনতার পরে জঘন্যতম দিনগুলোর কঙ্কাল চেহারাটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আজ জ্যাক ডোরসি সেই চেহারার একটু আভাস দিয়েছেন মাত্র, সমস্যার গভীরতা আরও অনেক বেশি। দেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার চ্যাপ্টারে ১৯ নম্বর আর্টিকল বলছে ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের কথা, মানুষের চিন্তা, অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতার কথা, সেই স্বাধীনতা আজ প্রতিপদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ভুয়ো সংবাদমাধ্যম, তৈরি হচ্ছে তাদের লক্ষ লক্ষ ভুয়ো সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা, সেখান থেকে ছড়ানো হচ্ছে বিষ, দাঙ্গার কুমন্ত্রণা। সেখানে কোনও আগল নেই, সেই তীব্র ধর্মীয় মেরুকরণে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, সেই রাশি রাশি মিথ্যের উপর কোনও নজরদারি নেই। এই বাংলার ইউটিউব চ্যানেল, লক্ষ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার, তার অর্ধেকেরও বেশি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত গুজরাতের, মহারাষ্ট্রের, কর্নাটকের, ইউপির। কী করে? কেন? তাঁরা বাংলা বোঝেন? তাঁরা বাংলার খবর শুনতে আগ্রহী? উত্তর, না। কিন্তু সেই ভুয়ো সাবস্ক্রাইবার দিয়ে মানুষ ঠকানোর বিরুদ্ধে নজরদারি নেই। নজরদারি কোথায়? বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর, বিরোধী দলের উপর, যে কোনও প্রতিবাদী মানুষের উপর, যে কোনও প্রতিবাদের উপর। এক ডেমোক্লিসের খাঁড়া ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের মৌলিক অধিকারের উপর, পক্ষে থাকলে যা ইচ্ছে তাই বলুন, বিপক্ষে থাকলে আপনার কথা বলার অধিকারই নেই আর যদি তারপরেও প্রতিবাদ করতে থাকেন, তাহলে আপনার স্থান হবে জেলে, যেমনটা রয়েছেন জেএনইউ থেকে ডক্টরেট করা ছাত্রনেতা উমর খালিদ, অধ্যাপিকা সোমা সেন, ভীমা কোরেগাঁও মামলার অন্য অভিযুক্তদের। উমর খালিদ পার করলেন তাঁর হাজার দিনের জেল জীবন। কিন্তু ইতিহাস এখানেই থেমে থাকবে না, জেলের কুঠুরির মধ্যে বসেই জেলখানার চিঠি লিখে ফেলেন নাজিম হিকমত, 

কৃষ্ণপক্ষ রাত্রে কোথাও আনন্দ সংবাদের মতো ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ
বাতাসে গুন গুন করছে মহাকাল
আমার ক্যানারির লাল খাঁচায়
গানের একটি কলি
লাঙল চষা ভুঁইতে
মাটির বুক ফুঁড়ে উদ্গত অঙ্কুরের দুরন্ত কলরব
আর এক মহিমান্বিত জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ন্যায্য অধিকার।
আমরা সেই ন্যায্য অধিকার, মৌলিক অধিকারকে ফিরে পেতে চাই।   

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Air India | Vijay Rupani | বিমানে বিজয় রূপানির শেষ মুহূর্তের ছবি, দেখুন ভাইরাল ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | ওড়ার সাথে সাথেই 'মে ডে কল', বাঁচানারো মরিয়া চেষ্টা পাইলটের
00:00
Video thumbnail
Russia-Ukraine | রাশিয়া- ইউক্রেন যু/দ্ধে বাজিমাত ভারতের অত্যাধুনিক মিসাইলের, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | বিমান ওড়ার পরই 'মে ডে কল', কী এই 'মে ডে কল'? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:01:39
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | মৃ/ত্যুর আশঙ্কা ২৪২ যাত্রীর, দেখুন এই মুহূর্তের কী অবস্থা
04:24:26
Video thumbnail
Air India | Amit Shah | বিমান দুর্ঘটনা কাণ্ডে অমিত শাহ-কে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
03:05:17
Video thumbnail
Indian Exportation | এবার ভারত থেকে বিদ্যুৎ যাবে আরব দুনিয়ায়, কীভাবে যাবে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:09:58
Video thumbnail
Iran | Israel | ইরানের বি/স্ফো/রণের পিছনে ইজরায়েলি হা/না? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:14:48
Video thumbnail
Justice Suryakant | ভারতীয় বিচারব্যবস্থা গভীর বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে, কেন? মন্তব্য বিচারপতির
03:07:15
Video thumbnail
Indian Exportation | বিদ্যুৎ রফতানি, বিরাট পদক্ষেপ ভারতের, কী সিদ্ধান্ত? দেখুন বড় খবর
04:06