Tuesday, June 10, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | ইন্ডিয়া বৈঠক, নতুন কারা যোগ দিচ্ছেন? কোন কোন সিদ্ধান্ত...

Fourth Pillar | ইন্ডিয়া বৈঠক, নতুন কারা যোগ দিচ্ছেন? কোন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে?

Follow Us :

দুটো রাত পোহালেই মুম্বইতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক, ২৬টা দল যারা গিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে প্রত্যেকেই যাবে, শরদ পাওয়ারের এনসিপি নিয়ে ধোঁয়াশাও নেই। কারণ শরদ পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে এবং কংগ্রেসের নানা পাটোলে এবার বৈঠক আয়োজনের দায়িত্বে, তাঁরা গত এক মাস ধরে বিভিন্ন বৈঠক করেছেন। বৈঠকের জায়গা থেকে খাবারের মেনু, কোন নেতা কখন আসবেন থেকে কোথায় থাকবেন সবটাই ওঁরাই দেখছেন। শরদ পাওয়ার বা সুপ্রিয়া সুলে এই দায়িত্বে পিছিয়ে নেই, শরদ পাওয়ার খুব পরিষ্কার করেই জানিয়েছেন যে ওঁকে বিজেপি জোটের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু উনি সেটা করছেন না, উনি বিজেপির বিরোধিতায় থাকবেন। এই বৈঠকের বহু আগে থেকেই বহেনজিকে নিয়ে কথা চলছিল, উত্তরপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি কি ইন্ডিয়া জোটে যোগ দেবে? সে প্রশ্নের উত্তরে আপাতত না বলে দিয়েছেন বহেন মায়াবতী, উনি জানিয়েছেন, আপাতত ওঁর নীতি একলা চলো রে। আসলে মায়াবতী জল মাপছেন, ওঁর উপরে বেশ কিছু ঘোটালা আর ইডি, সিবিআই-এর চাপ আছে, কাজেই ঝট করে একটা সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের সমর্থন বাড়লে অন্য চিন্তাভাবনা করবেন বহেনজি, মাত্র ক’দিন আগে তিনি তাঁর ভাই আর ভাইপো সমেত দলের অন্য নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম বৈঠকে একসঙ্গে ঢুকলেন মায়াবতীজি, ভাই আনন্দ কুমার, ভাইপো আকাশ আনন্দ এবং অনেকদিন পরে বিএসপির ব্রাহ্মণ মুখ সতীশচন্দ্র মিশ্রা। ইনি মাঝখানে পিছিয়ে পড়েছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ খুব ভালো, ইনি হঠাৎ আবার সামনের সারিতে, সে তো এমনি এমনি নয়, কাজেই বহেনজির মাথায় কোনও একটা ইকুয়েশন ঘুরছে, যেটা আরও পরে বোঝা যাবে। মুম্বই বৈঠকে বিএসপি থাকছে না। দক্ষিণের জেডিএস, দেবেগৌড়ার দল মধ্যিখানে এনডিএ-তে যাব বললেও এনডিএ দরজা খোলেনি, কাজেই এঁদের দিকে চোখ থাকবেই। দেবেগৌড়াজি নিজে বা তাঁর পুত্র কুমারস্বামীর রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে এঁরা যে কোনও সময় দিক পাল্টাতে জানেন। অন্ধ্রতে চন্দ্রবাবু নাইডুও এনডিএ-তে আসতে চান, রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চান, কিন্তু বিজেপির সমস্যা হল অন্ধ্রের ক্ষমতায় বসে আছে ওয়াইএসআরসিপি-র জগন রেড্ডি। বিজেপির প্রায় সব বিলেই রাজ্যসভা, লোকসভায় সঙ্গে থেকেছেন, তাকে চটানোটা ভাল হবে না, এটা বিজেপির অন্ধ্র নেতাদের নয়, দিল্লি নেতাদের বক্তব্য, অন্ধ্র নেতারা চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে জোট চান। মানে বিজেপি দ্বিধায়, কিন্তু প্রশ্ন হল চন্দ্রবাবু কতদিন ঝুলে থাকবেন, তাঁকেও শিবির বাছতে হবে, অবশ্যই সেটা এই মুম্বই বৈঠকের আগেই হবে না, কিন্তু অন্ধ্রতে একটা কিছু হতে চলেছে। 

তেলঙ্গানার বিআরএস ইন্ডিয়া জোটে আসবেন, কিন্তু তা সম্ভবত তেলঙ্গানার নির্বাচনের পরে। আপাতত কে চন্দ্রশেখর রাও তেলঙ্গানায় তাঁর আধিপত্য বজায় রাখার লড়াই চালাচ্ছেন। সমস্যা হল সেখানে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে কংগ্রেস, কাজেই বিআরএস-কে অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের অন্তত দুটো দল এবারে ইন্ডিয়া জোটে আসছেই, প্রকাশ আম্বেদকরের বঞ্চিত বহুজন আগাড়ি ইন্ডিয়া জোটেই আসছে, এটা প্রায় স্থির হয়েই গেছে। এই বঞ্চিত বহুজন আগাড়ি গতবার মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, বহু আসনেই এরা ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। আরেকটা ছোট দল যারা মহারাষ্ট্রে মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়িতে আছেই, সেই পেজন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি অফ ইন্ডিয়াও এবারে ইন্ডিয়া জোটে আসছে। ওদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কেপিএ, কুকি পিপলস আল্যায়েন্স এনডিএ ছেড়েছে কিছুদিন আগেই, সম্ভবত তারাও এই ইন্ডিয়া জোটে যোগ দেবে। নাগাদের এক রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও নাকি কথা চলছে। কিন্তু চমক ছাড়া রাজনৈতিক বৈঠক হয় নাকি? আবার সেই বৈঠক যদি শক্তি দেখানোর বৈঠক হয়, তাহলে তো কথাই নেই, মোদি–শাহ ৩৮টা দলকে এনে দাঁড় করিয়েছিল, ইন্ডিয়া জোটও তাদের ক্ষমতা দেখাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আগে যে রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বললাম, তার বাইরে কিছু হলে সেটা নিশ্চিত চমক হবে, চমক থাকছে কি না সেটা জানতে আর দুটো দিন অপেক্ষা করতে হবে। সে চমক মহারাষ্ট্র থেকেও আসতে পারে, সে চমক উত্তরপ্রদেশ থেকেও আসতে পারে। এবার আসি লোগো নিয়ে, ইন্ডিয়া জোটের লোগো বাছা হয়ে গিয়েছে, সেই লোগোর সবথেকে বড় প্রদর্শন হবে আগামী ভারত জোড়ো যাত্রায়। গুজরাত থেকে অরুণাচলপ্রদেশ যাত্রায় এবার কেবল কংগ্রেস থাকছে না, আরও বিভিন্ন দল থাকছে, হ্যাঁ কংগ্রেসে নিয়ে দ্বিমত যে একেবারেই কেটে গেছে তাও নয়, কিন্তু আরও বড় স্বার্থে এই ভারত জোড়ো যাত্রাকে কেবল নিজেদের করে রাখার খেলায় সম্ভবত নামছে না কংগ্রেস দল। লোগো নিয়ে বহু চর্চার মূল বিষয় ছিল গোটা জোটের চেহারাকে সামনে রাখা। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | চন্দ্রযান, তেরঙ্গা এবং শিবশক্তি 

এবার ইন্ডিয়া জোটের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে দু’ ধরনের দল আছে, প্রথমটা হল কংগ্রেস বা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা দল, আর দ্বিতীয়টা হল জনতা পার্টির থেকে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইতিহাসের কী অপূর্ব গতি, একসময় যে দলকে হারাতে যে দল তৈরি হয়েছিল, আজ তাদেরই মিলনক্ষেত্র এই ইন্ডিয়া জোট। কাজেই এই দুই রাজনৈতিক ধারার ছবি থাকতে হবে সেই লোগোতে, এই মতামত এসেছে, তেরঙ্গা তো থাকবেই, কিন্তু তার সঙ্গে চক্র থাকবে? লাল রং থাকবে? অপেক্ষা করতেই হবে ৩১ তারিখ পর্যন্ত। এবার আসা যাক বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে, না এখনই কোনও কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম গোছেরও কিছু তৈরি হচ্ছে না, কিন্তু বেশ কয়েকটা কমিটি তৈরি হচ্ছে, যেখানে দেশজুড়ে ক্যাম্পেন কীভাবে হবে, ক্যাম্পেন ইস্যু কী হবে? স্লোগান কী কী হবে ইত্যাদি মানে দেশজুড়ে এক প্রচারাভিযানের কর্মসূচি সামনে আসবে, সেই কর্মসূচির জন্য একটা কমিটি তৈরি হচ্ছে। দু’ নম্বর হল কো-অর্ডিনেশন কমিটি, মানে বিভিন্ন বিরোধিতার জায়গা তো আছে, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টও আছে, সেখানে কে কতখানি ছাড়বে? কোন জায়গাতে নিজেদের মধ্যে লড়াই হলে বিজেপির লাভ হবে সেই সব জায়গা, কনস্টিটুয়েন্সিগুলোকে চিহ্নিত করার চেষ্ট করা হবে। এবং সম্ভবত এই বৈঠক থেকেই এই প্রথম এক যৌথ বিবৃতি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যেখানে প্রত্যেকে শামিল হবেন, সেই খসড়া প্রায় রেডি। দেখা যাক তা এবারের বৈঠক থেকেই দেওয়া হয় কি না। 

এরমধ্যেই মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দুটো বিষয়ের উপর আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, প্রথমটা হল মোদি সরকার কি নির্বাচন এগিয়ে আনছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সমর্থনে যে তথ্য দিয়েছেন তা চমকে দেওয়ার মতো, বিজেপি সন্তর্পণেই বহু জায়গায় ডিসেম্বর মাসেই হেলিকপ্টার বুকিং করে ফেলেছে। এত হেলিকপ্টার বুকিং এমনি প্রচারের সময় তো লাগে না, তাহলে? আবার এটাও দেখার যে নভেম্বরের মধ্যেই মিজোরাম সমেত রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ আর তেলঙ্গানার নির্বাচন শেষ হবে, তার ফলাফল না দেখেই কি নির্বাচন এগিয়ে আনবেন মোদি–শাহ। কাজেই নির্বাচন এগিয়ে আনা নিয়ে আলোচনা হবে। দু’ নম্বর বিষয় হল ইভিএম, ইভিএম নিয়ে কিছু সাম্প্রতিক গবেষণার বিষয় সামনে রেখে এ নিয়েও আলোচনা করতেই পারেন বিরোধী দলের নেতারা। এবং বলা বাহুল্য এই বৈঠকেই কিছু পদের, যেমন কনভেনর, যুগ্ম কনভেনর ইত্যদির নাম ঘোষণা হবে, যেখানে সোনিয়া গান্ধীর নাম, নীতীশ কুমারের নাম আগে থেকেই ছিল। এবার বর্ষীয়ান শরদ পাওয়ারের নামও আছে, সে নামের অফিসিয়াল তালিকা তো ১ তারিখের আগে যানা যাবে না। ভারতবর্ষের রাজনীতি ক্রমশ নতুন নতুন আকার নিচ্ছে, বিজেডি, ওয়াইআরসিপি-কে বাদ দিলে শেষমেশ দুটো রাজনৈতিক শিবিরেই ভাগ হয়ে যাচ্ছে দেশ, দেশের মানুষ। ৩৮টা নয় আপাতত ৩৭টা দলের জোট এনডিএ-র কাছে আগের লোকসভার নির্বাচনের হিসেবে ৪২.৯ শতাংশ ভোট আছে, ইন্ডিয়া জোটের কাছে আপাতত আছে ৩৭.৫ শতাংশ ভোট। মাত্র ৩/৪ শতাংশ ভোট স্যুইং হলেই ছবি পালটে যাবে, এটা বিজেপি জানে, মোদি–শাহ জানেন, জানেন বিরোধী দলনেতারা। কাজেই সব্বার নজর ওই মুম্বই বৈঠকের দিকে, আগামী ভারত জোড়ো যাত্রার দিকে। বিরোধী ঐক্য যদি গড়ে তোলা যায়, তাহলে মোদি-শাহের জগন্নাথের রথ কিন্তু নড়ে যাবে, আর বিরোধী ঐক্য ছাড়া মোদি–শাহকে হারানো নামুমকিন। ক’দিন আগেই আমাদের চ্যানেলে আলোচনায় বসে আলোচনার এক্কেবারে শেষে ইন্ডিয়া জোটের শরিক সিপিআইএমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এক জরুরি কথা বললেন, বললেন আপাতত আমরা একটা রেসকিউ টিমের কাজ করছি, অন্য কিচ্ছু না, আমাদের দেশের সংবিধান, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণোতান্ত্রিক কাঠামো আক্রান্ত, সেই কাঠামোকে রক্ষা করার জন্য একটা রেসকিউ টিম হল এই ইন্ডিয়া জোট। এটা সব্বাইকে বুঝতে হবে যে একমাত্র সবাই মিলেই আমরা এই কাজটা করতে পারব। বড্ড ভালো কথা বলেছেন উনি, কিন্তু সব্বাই কি বুঝছেন? বুঝবেন?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | দ্বিধাবিভক্ত বাংলায় ত্রিধাবিভক্ত বিজেপি
52:53
Video thumbnail
Narod Narod (নারদ নারদ) | দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে সৌমিত্র, কী নিয়ে আলোচনা?
27:13
Video thumbnail
RCB | বাছাই করে গ্রেপ্তার কেন? ধৃ/ত আরসিবি মার্কেটিং প্রধান নিখিল সোসালের আইনজীবীর প্রশ্ন
01:22
Video thumbnail
R.T. Sports Tennis Academy | টেনিস নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে R.T. Sports Tennis Academy
06:15
Video thumbnail
Indian Air Force | আরও শক্তিশালী হচ্ছে বায়ুসেনা এই তথ্য জানলে ভয়ে কাঁপবে গোটা বিশ্ব
04:08
Video thumbnail
Narendra Modi | Abhishek Banerjee | মোদির নৈশভোজে অভিষেক, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:47
Video thumbnail
D.Y. Chandrachud | অবসরের পরে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কী করবেন? জানলে চমকে উঠবেন
03:47
Video thumbnail
Bhupender Yadav | ভা/য়ো/লেন্স ইন গভার্নেন্স, শহরে এসেই বি/স্ফো/রক ভূপেন্দ্র যাদব
06:11
Video thumbnail
OBC | TMC | OBC ইস্যুতে তোলপাড় বিধানসভা, প্রতিবাদ বিজেপির, কী করল তৃণমূল?
05:14
Video thumbnail
Operation Sindoor | Indian Army | ভারতীয় সে/নাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব
04:04