কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: করোনার নতুন স্ট্রেন ‘নিয়োকোভ’ অযথা আতঙ্কের কোনও দরকার নেই। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, ‘নিয়োকোভ’ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ NeoCoV পুরনো ভাইরাস। এর বর্তমান রূপটি মানুষের জন্য একেবারেই বিপজ্জনক নয়। কবে এটি মিউটেশন ঘটাবে, তা নিয়ে আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। বাদুড়ের শরীরে এই ভাইরাস অনেক আগে থেকেই রয়েছে। বাদুড়ের শরীরে এমন অনেক করোনা ভাইরাসের পাওয়া গিয়েছে, যেগুলি মানুষের পক্ষে আদৌ বিপজ্জনক নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাদুড়ের শরীরে ‘নিয়োকোভ’-এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এটি তো এখনও মানব শরীরে সংক্রমণ ঘটায়নি। উহান ইউনিভার্সিটি এবং দ্য চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ বায়োফিজিক্সের বিজ্ঞানীদের তৈরি করা রিপোর্টটি প্রকাশ পেয়েছে একটি গবেষণামূলক ওয়েবসাইটে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীমহলে সেই ওয়েবসাইট যে বিপুল জনপ্রিয়, তাও নয়। গবেষণা পত্রটির এখনও পিয়র রিভিউ করা হয়নি। ফলে ওই গবেষণাপত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে জল্পনা-কল্পনার করার পক্ষপাতী নন বিশেষজ্ঞরা।
মহারাষ্ট্র কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান চিকিৎস শশাঙ্ক জোশীর মতে, নিয়োকোভ বাদুড়ের এসিই-২ রিসেপ্টর ব্যবহার করতে পারে। একটি নতুন মিউটেশন না ঘটলে, তারা কোনওভাবেই মানবদেহের এসিই-২ রিসেপ্টর ব্যবহার করতে পারবে না। CSIR-ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির প্রধান বিজ্ঞানী বিনোদ স্কারিয়ার মতে, ভাইরাসটি প্রাকৃতিক আকারে মানুষকে সংক্রামিত করে না এবং যেহেতু এটি এখনও কোনও মানুষকে সংক্রামিত করেনি, তাই এটি কোনও মৃত্যুর কারণ হয়নি।
আরও পড়ুন: NeoCov: প্রতি ৩ জনে ১ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা, করোনার নতুন স্ট্রেন ‘নিয়োকোভ’ নিয়ে সতর্ক করল উহান
কেন্দ্রের কোভিড-১৯-এর জন্য ক্লিনিকাল রিসার্চের ICMR টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডাঃ সঞ্জ্য পূজারি বলেছেন, বর্তমানে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই কারণ NeoCoV MERS CoV-এর কাছাকাছি। এটির বাদুড়ের এসিই-২ রিসেপ্টর ব্যবহার করার ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু মানুষের এসিই-২ রিসেপ্টর ব্যবহার করতে পারবে না। ফলে এখনই এই ভাইরাসের ভয়ে কাবু হওয়ার কোনও দরকার নেই।
উহানের বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃত করে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক (Sputnik) জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন NeoCov হল PDF-2180-CoV এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রয়েছে। গবেষণায় সামনে এসেছে, নিয়োকভে সংক্রমণ শুধু নয়, মৃত্যুহারও অনেক বেশি। ওমিক্রন দ্রুত সংক্রমিত হলেও মৃত্যুহার সেই তুলনায় নগণ্য। কিন্তু NeoCov সংক্রমণে মৃত্যুহারের জন্যই স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই।
আরও পড়ুন: Covid 19 & Omicron: করোনাকালে সুস্থ থাকতে নিত্য দিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন এই সব খাবার
বিজ্ঞানীদের দাবি, করোনা ভাইরাসের নয়া এই রূপটিকে একেবারে নতুন কিন্তু বলা যাবে না। এটি মূলত MERS-CoV ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত। এর আগে এই ভাইরাসটি ২০১২ এবং ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং এটি SARS-CoV-2 এর অনুরূপ। এই নিয়োকভ কতটা ভয়ংকর হতে চলেছে, তার একটা আভাসও দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। MERS-CoV-এর মতো এর মৃত্যুহার। গড়ে প্রতি তিন জন আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যুর আশঙ্কা। আবার বর্তমান করোনাভাইরাস SARS-CoV-2 এর মতো সংক্রমণ ক্ষমতা।