নয়াদিল্লি: পেগাসাস (Pegasus) ইস্যুতে কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর(Information Technology Minister) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানালেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury ) ৷ লোকসভার (Lok Sabha) অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে (Om Birla) চিঠি লিখে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে হাউসকে বিভ্রান্ত’ করার জন্য তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশেষাধিকার প্রস্তাব শুরু করার আবেদন জানালেন অধীর৷ অন্যদিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে পেগাসাস ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলার আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী এমএল শর্মা৷
Leader of Congress party in Lok Sabha, Adhir Ranjan Chowdhury writes to Speaker Om Birla & "demand that a privilege motion may be initiated against Minister of Information Technology for deliberately misleading the House on Pegasus issue." pic.twitter.com/aoLhyqHGZh
— ANI (@ANI) January 30, 2022
শেষ পর্যন্ত হাটে হাঁড়ি ভেঙেই দিয়েছে মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাদের দাবি, ২০১৭-তে পেগাসাস কিনেছিল মোদি সরকার। শুক্রবার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সহ অস্ত্র কেনার জন্য ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল ভারত সরকার। তার ভিত্তিতেই ফেস সংসদের বাজেট অধীবেশনের আগে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা একজোট হয়ে মোদি সরকারকে বিঁধতে শুরু করেছে৷
যদিও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার বা ইজরায়েল সরকার, কেউই স্বীকার করেনি যে ভারত পেগাসাস কিনেছে। এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও দাবি করেছে, তারা পেগাসাস কেনেনি। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছিলেন, পেগাসাস কাণ্ড ভারতীয় গণতন্ত্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলিকে বদনাম করার একটি প্রচেষ্টা। পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা এনএসও-ও বলেছে যে পেগাসাস ব্যবহার করা দেশের তালিকা সংক্রান্ত রিপোর্ট ভুল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেগাসাস ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নতুন চুক্তির অধীনে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং ভারত সহ অনেক দেশকে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইজরায়েল সফর করেছিলেন। সেই সময় মোদি এবং ইজরাজেলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে দেখা যায়। তবে দু’জনের মধ্যে দেখা এই উষ্ণতার কারণ ছিল, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি।
আরও পড়ুন: Pegasus: প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর ফোনে আড়ি পেতে ছিল পেগাসাস, দাবি ইজরায়েলি সংবাদ পত্র হারেৎজের
দুই দেশের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে অস্ত্র এবং গোয়েন্দা ব্যবস্থা ক্রয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও পেগাসাসও এই চুক্তিতে জড়িত ছিল। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও সেই সময়ে ভারত সফর করেছিলেন। ২০১৯-এর জুনে ভারত ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থাকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা অস্বীকার করার জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে ইজরায়েলের সমর্থনে ভোট দেয়।
২০২১ সালের জুলাই মাসে মিডিয়া গ্রুপগুলির একটি গ্লোবাল কনসোর্টিয়ামে প্রকাশ করা হয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সরকার তাদের প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীদের গুপ্তচরবৃত্তি করতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে। আমাদের দেশের বহু সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, শীর্ষ গোয়েন্দা, সিবিআই-কর্তা, নির্বাচন কমিশনের অফিসার, বিচারপতির ফোনে পেগাসাসের মাধ্যমে আড়িপাতা হয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Pegasus Case Supreme Court: পেগাসাস নিয়ে রাজ্যের তৈরি কমিশনের তদন্তে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট
‘দ্য ওয়্যার’-এর রিপোর্টে বলা হয়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর নজরদারি চালাতে পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছিল। এই তালিকায় ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর দুই বর্তমান সম্পাদক এবং একজন প্রাক্তন সম্পাদক সহ আরও প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক ছিলেন।
मोदी सरकार ने हमारे लोकतंत्र की प्राथमिक संस्थाओं, राज नेताओं व जनता की जासूसी करने के लिए पेगासस ख़रीदा था। फ़ोन टैप करके सत्ता पक्ष, विपक्ष, सेना, न्यायपालिका सब को निशाना बनाया है। ये देशद्रोह है।
मोदी सरकार ने देशद्रोह किया है। pic.twitter.com/OnZI9KU1gp
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) January 29, 2022
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী?
একটি হ্যাকিং সফটওয়্যার৷ ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও গ্রুপ তৈরি করে৷ অর্থের বিনিময়ে এই সফটওয়্যার বিভিন্ন দেশের সরকারকে ব্যবহারের লাইসেন্স দেয়৷ বিশেষজ্ঞরা একে সাইবার অস্ত্র বলে থাকে৷ ২০১৬ সালে প্রথম পেগাসাসের কথা জানা যায়৷ আরবের এক সমাজকর্মী ফোনে সন্দেহজনক মেসেজ পান৷ প্রথমে মনে করা হয়, আইফোন ব্যবহারকারীদের টার্গেট করছে পেগাসাস৷ কিন্তু এই ভুল ভাঙে পরের বছর৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যানড্রোয়েড ফোনও হ্যাক করতে পারে পেগাসাস৷ ২০১৯ সালে এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে কেস করে ফেসবুক৷ তার পরই জানতে পারা যায়, পেগাসাস ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতের বহু সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে৷
কীভাবে হ্যাকিং হয়?
যাঁর ফোন হ্যাকিং হবে সেই ফোনে একটি ওয়েবসাইট লিঙ্ক পাঠানো হয়৷ লিঙ্কে একবার ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনে ইনস্টল হয়ে যাবে৷ শুরু হয়ে যায় ফোনে নজরদারি৷ হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ অথবা মিসড কলের মাধ্যমেও সফটওয়্যারটি ফোনে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে৷ ইনস্টল হওয়ার পর কল লগ থেকে মুছে দেয় সফটওয়্যারটি৷ ফলে ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না কোন নম্বর থেকে মিসড কল এসেছিল৷ এর পর ব্যবহারকারী কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মেসেজ আসছে, ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা সব নিয়ন্ত্রণ করে পেগাসাস৷ এমনকী এনক্রিপটেড হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের তথ্য পড়ে ফেলতে পারে পেগাসাস৷
কোনও কম্পিউটার বা ফোন হ্যাক-প্রুফ নয়৷ ফোনে আড়ি পাতার জন্য অনেক টুল ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মতো সবথেকে আধুনিক ফোন হ্যাকিং টুল সম্ভবত আর দ্বিতীয়টি নেই৷ নিঃশব্দে কাজ করে পেগাসাস৷ ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে৷ তবে এই টুল ব্যবহার করে সবার ফোনে আড়ি পাতা সম্ভব নয়৷ কারণ, এই স্পাইওয়্যারটি কিনতেই লাখ লাখ টাকা খরচ হয়৷ সরকার বা বড় কোনও সংস্থা ছাড়া পেগাসাস কেনা সম্ভব নয়৷