নার্ভাস হয়ে গেলে তোতলাতে থাকে, কথা বন্ধ হয়ে যায়, মানে সেই গরু হারানোর গল্পটাও মনে করতে পারেন। সারাদিন গরু খুঁজে হন্যে ঘেমে নেয়ে গরু না নিয়েই ঘরে ফিরে লোকটা বলেছিল, হ্যাঁ গো একটু খাবার জল দেবে? খেয়ালই করেনি যাকে বলছে সে তার কন্যা। তো বউ শুনতে পেয়ে গা ঝামটা দিয়ে বলেছিল মিনসের চোখ কি গেছে, কাকে কী বলছ? সে লোকটা বলেছিল, গরু হারালে এরকমই হয় মা। তো শুভেন্দু অধিকারী অ্যান্ড কোম্পানির ঘটি ডুবেছে, গরু হারিয়েছে, মুখের ভাষা আর কথা শুনলেই বুঝতে পারবেন। আজ সাতসকালে জঙ্গিপুরের বিজেপি প্রার্থী ক্যামেরার সামনেই বলেছেন শীতলখুচি করে দেব। কথাটা থেকে দুটো জিনিস তো সামনে এল, এক) শীতলকুচি ওনাদেরই করানো, ওনারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, চাইলে আবারও ঘটাতে পারেন। দুই) শীতলকুচি ঘটানোর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই, জলজ্যান্ত পাঁচজনকে গুলি করে মারার মধ্যে সেই বিজেপি প্রার্থী কোনও অন্যায় দেখছেন না। তো এক সামান্য প্রার্থী তাও জঙ্গিপুরে যিনি হারার জন্যই বলিপ্রদত্ত সেই তিনিই যখন এই কথা বলতে পারেন তখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এর থেকে অনেক বেশি দামি কথা বলতেই পারেন, বলেওছেন, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে। মথুরাপুর দিলে ভাইপোকে জেলে পুরব, ২৫-এ ভোট করাব, বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
মথুরাপুরে নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুটো কথা খুব স্পেসিফিকালি বলে গেছেন, বলেছেন মথুরাপুরে আমাদের জিতিয়ে দিন, আমরা এই রাজ্যের নির্বাচন ২০২৫-এই করিয়ে দেব। আর দু’ নম্বর হচ্ছে মথুরাপুরে জিতলে ভাইপো মানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে পুরব। এও সেই গরু হারানোর কেস। গতবার মানে ২০২১-এই মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার জামাকাপড়ও সম্ভবত কেনা হয়ে গিয়েছিল, মন্ত্রিসভায় কে কে থাকবেন তারও লিস্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রেজাল্ট বের হওয়ার পর থেকে গরু হারিয়েছে এবং ওনার আবোল তাবোল বকা আর শেষ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: Aajke | রাজভবন, মিঃ আনন্দ বোস এবং ধর্ষণের অভিযোগ
ওনার মনেই নেই এই নির্বাচন হচ্ছে দেশের সাধারণ নির্বাচন, মোদিজি আর সরকার তৈরি করতে পারবেন, নাকি অন্য কেউ সরকার বানাবেন, সেটা ঠিক করার নির্বাচন। এখানে ওনারা যদি ওনাদের ইচ্ছে মতো ২৫টাও আসন পেয়ে যান, তাহলেও সরকার ফেলে দেওয়ার কোনও আইনি ব্যবস্থা নেই। দু’ নম্বর হল কাউকে জেলে পোরার উনি কে? উনিই পুলিশ, উনিই হাকিম? মধ্যযুগের কুবলাই খান নাকি? আসলে শুভেন্দু অধিকারী এবারে ভোটের আগেই বুঝতে পারছেন জমি নেই, পায়ের তলাতে জমি ক্রমশ সরে যাচ্ছে। যে উত্তরবঙ্গে ছ’টা আসনের ভোট হয়েছে সেখান থেকে বেশ খারাপ খবর এসেছে। তিনটে আসন গেছে, এবারে মালদহ মুর্শিদাবাদের চারটে আসনের হদিশ তাঁর কাছে আছে তাই এখন কেবল ভোকাল টনিকের উপরেই ভরসা, উনি মঞ্চ থেকে বলছেন সরকার ফেলে দেব, তলায় ভক্তকুলের উল্লাস, সরকার ফেলে দেব, বলছেন ভাইপোকে জেলে পুরব, হাততালি হাততালি। কিন্তু এ ভোট তো আজ নয় কাল শেষ হবে, ৪ জুন তো খুব দূরে নয়, রেজাল্টও বের হবে। তখন এই আবোল তাবোল বুকনিগুলোর কাটাছেঁড়া হবে না? বিধানসভাতে ভাইপোকে জেলে পুরে দেওয়ার কথা উঠবে না? সবচেয়ে বড় কথা আজ যে ক্যাডার বাহিনীকে উত্তেজিত করার জন্যে উনি এই কথা বললেন সেই বাহিনী কতটা ডিমরালাইজ হবে ভেবে দেখেছেন? কিন্তু এই কথাগুলো অনর্গল বলে যাওয়ার মধ্যে আরেক ভয়ঙ্কর প্রবণতাও লুকিয়ে আছে, তা হল দেশের সংবিধান বা আইনি ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা। সাধারণ নির্বাচনে হেরে গেলেই রাজ্য সরকার ফেলে দেবর মতো এক অগণতান্ত্রিক ধারণাকে সামনে আনা। ১৯৭৭-এক ব্যতিক্রম ছিল, এমনিতেই নির্বাচন এক বছর পরে হচ্ছিল, আর উত্তর ভারতে কোনও রাজ্য সরকারই সরকার চালানোর অবস্থাতে ছিল না। সেদিন রাষ্ট্রপতির নির্দেশে কিছু সরকার ভাঙা হয়েছিল, কিন্তু আজ? কোন ধারায় সরকার ফেলা হবে? নির্বাচনে জিতলেই বিরোধী নেতাকে কোন ধারায় জেলে পোরা হবে? নার্ভাস হয়ে, ভয় পেয়ে শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরোধী। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাধারণ নির্বাচনে হেরে গেলে এক নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ফেলে দেওয়ার, ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আপনাদের বক্তব্য কী? শুনুন তাঁরা কী বলেছেন।
সারা দেশ থেকেই বিজেপির পিছু হঠার খবর আসছে, আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে আরও মরিয়া হয়ে ওঠার খবরও। ইতিমধ্যেই সুরাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে বিজেপি, অরুণাচলে ১০টা বিধানসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। ইন্দোরে একজন এসইউসিআই প্রার্থী আছে, তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে সরে যাওয়ার জন্য, পুরীতে কংগ্রেস প্রার্থী মনোয়নপত্র ফেরত নিলেন শেষ মুহূর্তে। মানে যত রকমের অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি হয় তার একটাও বাদ দিচ্ছে না তারা। বাংলাতেও সেই ছবি, ক্ষমতায় আসলে দেশের সংবিধান কতটা বিপন্ন তা আজ রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বক্তব্যেই পরিষ্কার হল।