সেই কবে ভোটের সঙ্গে রঙ্গ কথাটা জুড়ে গেছে, আমরা বলি ভোটরঙ্গ। এক রংতামাশার আসর। ভোট এলে আমজনতা দেখে সেই সব মানুষজনকে যাঁদের অনেককেই তাঁরা দেখেছিলেন ৫ বছর আগে, এখন তাঁরাই আমি তোমাদের লোক বলে হাতজোড় করে পাড়ায় পাড়ায়। কেউ ওই বাইরের টাইম কলে বালতি সাবান নিয়ে জাস্ট বসেছে, প্রার্থী আহা আহা করে দৌড়ে এল, গায়ে সাবান মাখিয়ে দিই বলে সাবান মাখিয়ে আবার জল ঢেলে সাবান ধুইয়ে দিতেই সেই লোকটা দে ছুট। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাইটি ছুটে পালালে কেন? সে কুণ্ঠিত হয়ে বলেছিল যদি তারপর জামাকাপড়ও ছাড়িয়ে দেয়। প্রার্থীদের কত নখড়া, গ্রামের দিকে ডিভোর্সি পুরুষ নিয়ে যাওয়া যাবে না, শহরে গাড়ির উপরে টলিগঞ্জের সুন্দরীদের রাখতে হবে। একেই বলে ভোটরঙ্গ। সেই তামাশায় আপাতত দুটো নাম জড়িয়ে গেছে। প্রথমটা হল সন্দেশখালি। দু’ নম্বরটা হল রাজভবন। লোকে চেটেপুটে খাচ্ছে, রোজ নয়া নয়া উদঘাটন। স্টিং অপারেশন, নয়া নয়া দাবি এবং পাল্টা দাবি। অথচ এমনিতে দেখলে খুব সোজা ব্যাপার, আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ন, তো সেটা দেখার জন্য পুলিশ আছে, বিভিন্ন এজেন্সি আছে তাদের হাতে ছেড়ে দিলেই হয়, কিন্তু তা না করে তামাশা করাটাই নির্বাচনের সময়ে জরুরি। শুভেন্দু চিৎকার করছেন অমুকের বাচ্চা বলে, রেখা পাত্র মুখ বন্ধ করেছেন, ধনঞ্জয় কয়ালকে দেখাও যাচ্ছে না, ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না আর রাজভবনে রাজ্যপাল এসেছেন বটে কিন্তু সেখানে পুলিশ ঢোকা নিষেধ। তাই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, সন্দেশখালি থেকে রাজভবন পিঠেপুলির উৎসব চলছে।
সন্দেশখালির ভিডিও বের হওয়ার পরে যাঁকে সেই ভিডিওতে দেখা গেল তিনি আর ঘরে নেই, তাঁকে সাংবাদিকরা ফোনে পাচ্ছেন না, ইন্টারভিউ নেওয়ার তো প্রশ্নই নেই। কেবল সেইদিনে জানিয়েছেন, তিনি সিবিআই-এর কাছে যাচ্ছেন, ব্যস, তিনি উধাও, তাঁর স্ত্রী মুখ খুলেছিলেন, তিনিও আর কথা বলছেন না। সন্দেশখালির ভিডিও ফেক, ভিডিও জালি, ভিডিও ডিপ ফেক, ভিডিও বানানো, এগুলো বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী থেকে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন। কিন্তু ওই গঙ্গাধর কয়ালকে পাশে বসিয়ে কিছু বলার রিস্ক নেননি।
আরও পড়ুন: Aajke | শুভেন্দু বলেছিলেন বোমা ফাটিবে, সে বোমা কোথায় ফাটিল?
আচ্ছা উচিত কী ছিল? উচিত ছিল বিজেপির সেই শীর্ষ নেতৃত্বরা সবাই মিলে এই গঙ্গাধরকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বসে কেমন করে এই ফেক ভিডিও বানানো হয়েছে তা ফাঁস করে দেওয়া। আমরা গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিও দেখেছি, সেই তিনি ঢোঁক গিলতে গিলতে শুদ্ধ বাংলায় সব ঝুট হ্যায় বলে সেই যে ধাঁ হলেন এখনও তাঁর দেখা নেই। ওদিকে এই ধর্ষিতাদের আন্দোলনের মুখ বসিরহাটের সাংসদ প্রার্থী রেখা পাত্র মিডিয়ার সামনে মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন, ওই ইস্যুতে কথাই বলতে রাজি নন যে ইস্যুকে নিয়ে ক’দিন আগে তিনি চ্যানেলে চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। ভোটরঙ্গ চলছে। এ লোডাই লোডবো বলার পরের দিন আনন্দ বোস চলে গিয়েছিলেন দেশের বাড়িতে। তিনি ফিরে এসেছেন, সেখানে আরও কাঁচা চিত্রনাট্য। তিনি আহ্বান করেছেন মানুষকে যাঁরা সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান, প্রথম একশো জনকে সেই ফুটেজ তিনি দেখাবেন? কোন ফুটেজ? রাজভবনে পিঠেপুলি উৎসবের ফুটেজ? কী দেখাবেন? এক সাধারণ মানুষ গিয়ে সেই ফুটেজ দেখে কী বুঝবেন? তিনি রাজ্যের রাজ্যপাল, তিনিই বসে আছেন রাজভবনে। সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে দিন, বলুন এই রইল, এবার সঠিক তদন্ত করুন। তা নয় প্রথম ১০০ জনকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাবেন। নয়া নৌটঙ্কি। এবং আমাদের টাচ মি নট খোকাবাবু, বুঝেছেন কতটা কাঁচা কাজ হয়েছে, ওদিকে খবর আসছে বিভিন্ন রাজ্য থেকে, আমও যাবে ছালাও যাবে এই চিন্তায় রাতে ঘুম নেই, মেজাজ তুঙ্গে। সামান্য কয়েকজনের স্লোগানে মাথা গরম করে ফেললেন, বোঝা গেল টেনশনে আছেন। অমিত শাহ নির্বাচনী জনসভায় মঞ্চ থেকে সন্দেশখালির ভিডিও নিয়ে একটা কথাও বললেন না। ওদিকে সন্দেশখালির থানা স্থানীয় বিজেপি নেত্রীকে থানায় ডেকে পাঠিয়েছেন, একগুচ্ছ মহিলা যাঁরা আগে ধর্ষিতা হয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁরা বলছেন তাঁদের ইংরিজি বয়ানে সই করানো হয়েছিল, তাঁরা এই ধর্ষণ নিয়ে কিছুই জানেন না। সব মিলিয়ে এক তামাশা চলছে, আমাদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, রাজভবন থেকে সন্দেশখালি বিষয়টার স্বচ্ছ তদন্ত করতে না দিয়ে এক তামাশা চলছে, গঙ্গাধর কয়াল উধাও, রাজ্যপাল পুলিশকে ঢুকতেই দিচ্ছেন না, এটা কি আসলে তদন্ত না করতে দেওয়ার চেষ্টা চলছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ভোটের জন্য সব করা যায়, যা খুশি, গোটা গ্রামের মহিলাদের দিয়ে মিথ্যে বলানো যায়, সেই মিথ্যেকে এক গণ আন্দোলন হিসেবে তুলে ধরা যায়। সেই মিথ্যের বেসাতিকে সামনে রেখে নির্বাচনের জেতা হারার ঘুঁটি সাজানো যায়। অশিক্ষা নয়, বেকারত্ব নয়, চাকরির দাবি নয়, পানীয় জল নয়, স্বাস্থ্যের অধিকার নয়, মূল্যবৃদ্ধি নয়, মানুষের মতো বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা নয়, কিছু মিথ্যে আর নৌটঙ্কি হবে প্রত্যেক ভোটের আগে আর সেটাই ঠিক করে দেবে আমাদের জনপ্রতিনিধি, এটাই এখন নিও নর্মাল, এটাই হালফিলের গণতন্ত্রের মহোত্তম উৎসবের চেহারা।