কলকাতা: ‘দরিদ্র ঘরের মেয়েরা পেটের তাগিদে দেহ ব্যবসার পেশায় আসে। তাদের নিরাপত্তার জন্য কি ব্যবস্থা করেছেন? তাদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন? রাজ্য যদি এই গরিব মেয়েদের দিকে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেয় তাহলে এরা তো এই পথেই বারবার বিপদের সম্মুখীন হবে। আইন শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। তাকে বাস্তবায়িত করতে হবে৷’ এজলাসে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি৷
২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল৷ চিংড়িহাটা অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে বিধাননগর থানার পুলিস আশ্রয় গেস্ট হাউস থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে৷ সেখানে মধুচক্রের আসর বসেছিল৷ আবেদনকারী বেদপ্রকাশ আরিয়ার আইনজীবী শেখর বসু ও আইনজীবী অন্তরীক্ষ বসু আদালতে দাবি করেন, আবেদনকারী একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু তাঁর ওই গেস্ট হাউস চালাতেন নবকুমার প্রামাণিক৷ পুলিস ওই দিন ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে৷ এছাড়াও দুজন নাবালিকা-সহ বেশকিছু মেয়েকে উদ্ধার করেছে৷ ঘটনার দিন আবেদনকারী ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলেন না৷ উদ্ধার হওয়া নাবালিকারা তাদের সাক্ষীতে আবেদনকারীর নাম উল্লেখ করেনি৷ ২০২১ সালে ১৮ অগস্ট পুলিশ সমন পাঠায় আবেদনকারীকে৷
ওই সমনের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে হাজিরা দেন আবেদনকারী৷ কিন্তু প্রায় ২ বছর পর হঠাৎই চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আবেদনকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে৷ তাঁর বিরুদ্ধে পাচার চক্র চালানো ও পকসো আইনে অভিযোগ আনে পুলিস৷ যেহেতু এই মামলায় সরাসরি তথ্য প্রমাণ নেই তাই তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হোক৷ শুনে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি সরকারি আইনজীবী উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা উদ্ধার হওয়া নাবালিকাদের নিরাপত্তার জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?’ সরকারি আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘তাদের জন্য কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি৷’ শুনেই ক্রুদ্ধ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, ‘যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা কীরকম?’ সরকারি আইনজীবী জানান, ওরা দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে৷
তখন বিচারপতি বাগচি বলেন, ‘দরিদ্র ঘরের মেয়েরা পেটের তাগিদে দেহ ব্যবসার পেশায় আসে। তাদের নিরাপত্তার জন্য কি ব্যবস্থা করেছেন? তাদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন?’ আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনার। সরকারি আইনজীবী জানান, ঘটনার কয়েকদিন পরেই ওই গেস্ট হাউসের চরিত্র বদল করে ফার্নিচারের দোকান করা হয়৷ আবেদনকারীর আইনজীবী শেখর বসু তখন বলেন, ‘পুলিশ ওই গেস্ট হাউস সিল করেনি৷’
সরকারি আইনজীবী শাশ্বত গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা ওই মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি৷’ দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারপতি জানান, আবেদনকারী বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করা হল৷ তবে ভবিষ্যতে জামিনের আবেদন জানাতে পারবেন৷ আদালতের এই মন্তব্য পড়েই সরকারি আইনজীবীর নির্দেশে বিধাননগর পুলিশ কমিশনার উদ্ধার হওয়া ওই মেয়েদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে৷