কলকাতা: দত্তপুকুরের কাটা মুণ্ডু নিখোঁজ হত্যাকাণ্ডে (Duttapukur Murder Case) একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এই নৃশংস হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে আরও এক মহিলাকে গ্রেফতার (Arrest) করা হল। সুফিয়া খাতুন নামে বামনগাছির ওই মহিলার বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ (Police)। পুলিশি তদন্ত অনুযায়ী, ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকেই একে একে বেশ কয়েকজন সুফিয়ার বাড়িতে জড়ো হতে থাকে। অনুমান করা হচ্ছে, রাত দুটো নাগাদ যখন হজরত লস্করকে খুনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন হত্যাকারীরা সুফিয়ার বাড়িতেই অপেক্ষা করছিল।
আসলে এই মর্মান্তিক খুনের ঘটনায় নিহত হজরত লস্করের প্রেম ও দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত জটিল ছিল। একসময় নিষিদ্ধপল্লির বাসিন্দা পূজা দাস ওরফে নিশার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে হজরতের। এরপর তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও দাম্পত্য কলহের কারণে বিচ্ছেদ ঘটে। পরে পূজা বিয়ে করেন হজরতের তুতোভাই ওবায়দুল গাজিকে। কিন্তু বিচ্ছেদের পরেও পূজার সঙ্গে হজরতের যোগাযোগ ছিল। এই সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ তৈরি হয় ওবায়দুলের মনে, যা পরে ভয়ঙ্কর হত্যার ষড়যন্ত্রে রূপ নেয়।
আরও পড়ুন: সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবিতে রাজ্যের আবেদন খারিজ করল হাইকোর্ট
তদন্তকারীদের অনুমান, ওবায়দুল একদিকে যেমন হজরতের সঙ্গে পূজার সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করছিল, অন্যদিকে পুলিশের কাছে তাঁর গ্রেফতার হওয়ার জন্যও হজরতকে দোষারোপ করছিল। হাওড়া, হুগলি, উত্তরপাড়া, বেলঘড়িয়া, বরানগরসহ একাধিক এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে দু’জনকেই আগেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ওবায়দুলের ধারণা ছিল, পুলিশকে তথ্য দিয়ে হজরত তাঁকে ফাঁসিয়েছিল। সব মিলিয়ে আক্রোশ তীব্র হয় এবং পরিকল্পিতভাবে হজরতকে খুন করার ছক কষা হয়।
গাইঘাটার প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দত্তপুকুর থানার মালিয়াকুর ও বাজিতপুর গ্রামের মধ্যবর্তী চাষের জমিতে এক পরিচিতর মাধ্যমে ডেকে পাঠানো হয় হজরতকে। সেখানে তাঁকে মদ্যপান করিয়ে বেহুঁশ করা হয়। এরপর জামা দিয়ে হাত ও প্যান্ট দিয়ে পা বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে হত্যা করা হয়। পরিচয় মুছে ফেলার জন্য দেহে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতেও হত্যাকারীদের নিষ্ঠুরতা শেষ হয়নি—পরিচয় গোপন করতে মাথা কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওবায়দুল ও তাঁর স্ত্রী পূজা দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দেখুন আরও খবর: