কলকাতা: অনলাইনে জিনিস কেনার সবথেকে ভাল সময়টা কি অতীত? মোদিজির ডিজিট্যাল ভারত থেকে কি ইতিমধ্যেই মুখ ঘুরিয়েছে আমজনতা? বিশাল কর্পোরেটদের বোর্ডরুম বিতর্কে তেমনটাই ইঙ্গিত মিলছে। টাটা কনসিউমার্স-এর বড় কর্তাও জানাচ্ছেন তেমনটাই। ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ার আওয়াজ তুলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনা সংক্রমণের মাসগুলিতে আমজনতাও বুঝেছিলেন অনলাইনে জিনিস কেনার গুরুত্ব। নানা দেশীয় ও বহুজাতিক কর্পোরেটরা বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছিল নুন থেকে ফ্রিজ, টিভি পর্যন্ত। পণ্য বণ্টনের এই পদ্ধতিকে বলে ডাইরেক্ট-টু-কনজিউমার বা ডি-টু-সি। ২০২০ এবং ২০২১ সালে এই পথে হরেক দ্রব্য কেনার ধুম পড়েছিল ভারতে। কিন্তু ভাটার টান দেখা যায় গত বছর থেকেই। চলতি বছরে সরাসরি কমছে এ ধরনের পণ্য কেনা। টাটা কনজিউমার্স প্রথমে চা, কফি এবং নুন বিক্রি করত। ইদানীং তারা ডাল, মশলা, রেডি-টু-কুক সামগ্রী, পানীয়, স্ন্যাক্স প্রভৃতির ব্যবসাতেও এসেছে। তারা আমজনতার কেনাকাটার অভ্যাসের এই পরিবর্তনটা টের পাচ্ছে ভালো ভাবেই।
টাটা কনজিউমার্স উবাচ
সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল ডি’সুজা বুধবার বলেছেন — অতিমারীর সময় ডি-টু-সি পদ্ধতির রমরমা হয়েছিল, সেটা এখন কমছে। এ ধরনের পণ্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এখন অফলাইনে বিক্রির দিকে নজর দিয়েছে। ভারতে খুচরো ব্যবসা অতটা সহজ নয় যে, কোনও পণ্য নিয়ে এস, এবং বিক্রি কর। এই ব্যবসায় যুক্ত কোম্পানিগুলো দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। নিজস্ব বণ্টনের ব্যবস্থাই প্রতিযোগিতায় বড় বড় সংস্থাগুলির অ্যাডভানটেজ।
টাটা কনজিউমার্স ছাড়াও খুচরো পণ্যের ব্যবসায় বড় বড় সংস্থাগুলির মধ্যে আছে মেরিকো, আইটিসি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার প্রভৃতি। এই সংস্থাগুলি অনলাইন ব্যবসা বাড়াতে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করে এমন ছোট-মাঝারি কোম্পানি কিনেও নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মেরিকো কিনেছে এইচ ডব্লু ওয়েলনেস সলিউশনস, স্প্রাউট-লাইফ ফুডস-এ বিনিয়োগ করেছে আইটিসি, জাইওয়েই ভেঞ্চার্সে টাকা ঢেলেছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার । কিন্তু অনলাইন ব্যবসায় তেমন প্রাণের সাড়া না মেলায় সংস্থাগুলি আবার সেই চিরাচরিত কিরানা বা মুদির দোকানের কথাই ভাবতে শুরু করেছে। বছর চারেক আগে অনিকেত চট্টোপাধায়ের পরিচালনায় ‘শংকর মুদি’ নামে একটি ব্যতিক্রমী সিনেমা দেখেছিলাম। কীভাবে মুদি দোকানদার বড় ‘মল’-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হচ্ছে, বেঁচে থাকার রসদটাই হারাচ্ছে, সেই বিষণ্ণতা ফুটে উঠেছিল পর্দাতে। অবশেষে কি সেই মুদিদের মুখে আবার ফুটবে হাসি?