বেজিং: প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াতে চলেছে চীন (China)। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, এবছর প্রতিরক্ষা ব্যয় (Defence Spendings) ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। গতবছরের তুলনায় এই ব্যয় বৃদ্ধি সামান্য। আন্তর্জাতিক মহল বলছে, চীন সরকারের (Chinese Government) পক্ষ থেকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (Economic Gowth) যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে এই ব্যয় বৃদ্ধি। আর তার অন্যতম কারণ হল, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং (Li Keqiang, Chinese Premier) সশস্ত্র বাহিনীকে (Armed Forces) যুদ্ধের প্রস্তুতি বাড়ানোর আহ্বান (Boost Combat Preparedness) জানিয়েছেন। রবিবার চীনের জাতীয় বাজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে আগামী অর্থবর্ষের জন্য চীন সরকার সামরিক ব্যয়ের (Military Spendings) জন্য ১.৫৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (২২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করেছে।
আরও পড়ুন: Opposition’s Letter To PM: মমতার সুরে মোদিকে প্রতিবাদপত্র ৮ বিরোধী দলের, কংগ্রেস সরে থাকল
জাতীয় বাজেটে (National Budget) সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলের (International Community) নজর এখন চীনের দিকে। বিশেষ করে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (Neighbouring Country and United States America) জন্য বিষয়টি উদ্বেগজনক (Concerning) বলে একাংশের মত। তবে, সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় তাইওয়ানের জন্য। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের (Taiwan) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। যুদ্ধের আশঙ্কায় ভুগছে তাইওয়ান।
পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশনে (Annual Session of Parliament) তার ওয়ার্ক রিপোর্টে (Work Report) লি বলেছেন, সামরিক অভিযান (Military Operations), সক্ষমতা বৃদ্ধি (Capacity Building) এবং যুদ্ধ প্রস্তুতিকে ‘প্রধান কাজগুলি সম্পন্ন করার জন্য সু-সমন্বিত’ হওয়া উচিত। তিনি রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ২০২৭ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মি (People’s Liberation Army) শতবর্ষ পূর্ণ করবে, তাই চীনের সশস্ত্র বাহিনীর উচিত সেদিকে নজর দিয়ে সামরিক অভিযান চালানো, যুদ্ধের প্রস্তুতি বাড়ানো এবং সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করা।”
বাজেট সংক্রান্ত জারি করা রিপোর্টে প্রতিরক্ষা খাতের কোন কোন ক্ষেত্রে কত পরিমাণ করে অর্থ খরচ হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ভেঙে জানানো হয়নি। সম্মিলিতভাবে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিমাণ ঘোষণা করা হয়েছে। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। গতবারের তুলনায় এবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। সেই দিকে তাকিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে ৭.২ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি বেশি করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, চীন তাইওয়ানকে বরাবর নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। চীন-অধিকৃত দ্বীপপুঞ্জের (Chinese-Occupied Islands) কাছে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে (disputed South China Sea) চীনা-দাবিকৃত তাইওয়ানে (Chinese-claimed Taiwan) মার্কিন নৌ ও বিমান বহরের উপস্থিতি নিয়ে বেজিং এখন উদ্বেগে রয়েছে। চীন গত অগাস্টে তাইওয়ান সংলগ্ন অঞ্চলে যুদ্ধের মহড়া দিয়েছিল তাইওয়ান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরোক্ষে বার্তা পাঠাতে। কারণ, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে এসেছিলেন। তাঁর এই সফরকে বেজিং চীন বিরোধী তাইওয়ান-মার্কিন আঁতাঁত (Taiwan-US Nexus) হিসেবে দেখেছে।
সিঙ্গাপুরের এস. রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক লি মিংজিয়াং (Li Mingjiang, Associate Professor at S. Rajaratnam School of International Studies in Singapore) বলেছেন, বেজিং যেভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বরাদ্দে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে চীন তার বাহ্যিক নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাইওয়ান ইস্যুতে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে চলেছে তারা। বেজিং নিজেও এটা ভালোভাবে জানে। সেই কারণে সামরিক শক্তিবৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে চীন।