নয়াদিল্লি: দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলার এবার তলব মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে (Arvind Kejriwal)। রবিবার সিবিআইয়ের (CBI) সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে কেজরিওয়ালকে। এই মামলায় আগেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া (Manish Sisodia)। আদালতের নির্দেশে তিনি আপাতত তিহার জেলে বন্দি।
মুখ্যমন্ত্রীকে সমন পাঠানোর পরেই আপ নেতা সঞ্জয় সিং (Sanjay Singh) সাংবাদিক বৈঠকে (Press Conference) বলেন, যেদিন দিল্লি বিধানসভায় কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেদিনই আমি কেজরিওয়ালকে বলেছিলাম, এবার তোমার পালা। আজ সেটাই সত্যি হল। প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন আগে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, আদানির বিভিন্ন সংস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কোটি কোটি কালা ধন বিনিয়োগ করা হয়েছে। যে ২০ হাজার কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে তা আসলে প্রধানমন্ত্রীর টাকা। সঞ্জয় বলেন, তার পর থেকেই বিজেপি সরকার মুখ্যমন্ত্রীকে বিপাকে ফেলার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: Girl Wish | PM Modi | মোদিজি আমার কথাও শুনুন, প্রধামন্ত্রীর কাছে আবেদন একরত্তি সীতারের, ভাইরাল ভিডিও
আপ নেতা বলেন, এভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং আম আদমি পার্টিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। শুধু দিল্লিতে নয়, দেশের প্রতিটি মহল্লায় মানুষ কেজরিওয়ালের ওই কথাকে মন থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। এর আগেও বিজেপি সরকার আম আদমি পার্টিকে নানা ভাবে হেনস্তা করেছে। কখনও বিধায়ককে গ্রেফতার করে, কখনও দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু এতো সব করেও আম আদমি পার্টির মাথা নোয়ানো যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার যতই চক্রান্ত করুক, আম আদমি পার্টি ভয় পাবে না। সঞ্জয়ের আশঙ্কা, রবিবার ১৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতারও করা হতে পারে। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার সেভাবেই ছক কষছে।
উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে গ্রেফতারের পর অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে দিল্লির আপ সরকার। গ্রেফতার হওয়ার পরই মনীশকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার কেজরিওয়ালকে তলব করায় কিছুটা বিপাকেই পড়ে গেলেন আপ নেতৃত্ব। সমন পায়ের পরেই মুখ্যমন্ত্রী সতীর্থদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন।
দিন পাঁচেক আগেই আম আদমি পার্টি জাতীয় দলের তকমা পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন এই ঘোষণা করার পরের দিনেই মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতা -মন্ত্রী-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমরা জাতীয় দলের তকমা পেয়েছি। ভবিষ্যতে আমাদের উপর আরও আঘাত আসতে পারে। আপনারা যে কোনও মুহূর্তে জেলে যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকুন।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে আপ নেতা সঞ্জয় সিং বলেন, দিল্লিতে সুশাসন উপহার দিয়েছে আপ সরকার। আয়কর দফতরের পদস্ত কর্তার চাকরি ছেড়ে দিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মানুষের স্বার্থে কাজ করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। দিল্লি সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা দেশের মধ্যে মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভ্রষ্টাচারে ডুবে রয়েছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বললেই সিবিআই-ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন আগে মূলত কেজরিওয়ালের উদ্যোগেই বিজেপি বিরোধী আট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। আপের অভিযোগ, তারপর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার কেজরিওয়ালকে হেনস্তা করার চেষ্টা শুরু করেছে। এই কেজরিওয়ালই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে দিল্লি বিধানসভা ভোটার সময় সোনিয়া গান্ধী, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শীলা দীক্ষিতদের এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে জেলে ভরার হুমকি দিয়েছিলেন। আজ সেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিই দুর্নীতির তদন্তে ডেকে পাঠাচ্ছে কেজরিওয়ালকে। দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার ডাক দিয়েই খড়গপুর আইআইটি প্রাক্তনী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আম আদমি পার্টি গঠন করেন। শুধু তাই নয় দুর্নীতি দূর করার মাপকাঠি হিসেবে নির্বাচনী প্রতীক বেছে নেন ঝাঁটা।