নয়াদিল্লি: কোন মন্ত্রবলে শিবকুমারকে জাদু করলেন সোনিয়া গান্ধী? কারণ ১২১৪ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ডোড্ডালাহাল্লি কেম্পেগৌড়া শিবকুমারকে এককথায় পাশ কাটিয়ে যাওয়া কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে সম্ভব ছিল না। ছাত্রাবস্থা থেকে কংগ্রেস পরিবারে যোগ দেওয়া ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের এই নেতাকে এবার সমর্থন দিয়েছিল বিজেপির কোল ঘেঁষা লিঙ্গায়তরাও। ফলে সব মিলিয়ে সিদ্দারামাইয়ার দিকে সংখ্যাগুরু বিধায়কের সমর্থন থাকলেও শিবকুমারও এই দৌড়ে মোটেই পিছিয়ে ছিলেন না। কারণ, তিনি জনতা দল ভেঙে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নেতা। অন্যদিকে, শিবকুমারের জোর ছিল স্বয়ং সোনিয়া গান্ধীর বরহস্ত। শেষমেষ সোনিয়ার জাদুমন্ত্রেই বশ হলেন তিনি। কংগ্রেসের স্বার্থে আত্মত্যাগে রাজি হলেন শিবকুমার।
কর্নাটক রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি শিবকুমার কংগ্রেসে যোগ দেন আটের দশকের গোড়ার দিকে। ১৯৮৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে বিধায়ক হন। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৮ বার বিধায়ক হয়েছেন তিনি। সেই হিসেবে কোনওদিক থেকেই তিনি অযোগ্য প্রার্থী ছিলেন না। তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখলের পথে একমাত্র কাঁটা ছিল ইডি, সিবিআই, আয়করের মামলার মালা। কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছিল না শিবকুমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে নতুন করে এইসব মামলায় জেরবার করা হোক। তাতে সরকারি কাজকর্ম এবং দলের ভাবমূর্তি দুটোই নষ্ট হতে পারে।
২০১৮ সালের হলফনামায় ঘোষিত অর্থ-সম্পত্তির পরিমাণের তুলনায় এ বছর তাঁর ঘোষিত টাকাকড়ি ও সম্পত্তি বৃদ্ধি ঘটেছে ৪৪ শতাংশ। তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি ফের আঁচড়েকামড়ে বিব্রত করতে পারে। সে কারণেই তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাবি জানিয়ে গেলেও সোনিয়ার উপরোধে ঢেঁকি গিলতে বাধ্য হলেন।
শিবকুমারের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার অনেক রাতে ‘ম্যাডাম’ তাঁকে ফোন করেন। সেখানে সোনিয়া তাঁকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর্নাটক কংগ্রেস সভাপতি পদে রাখার প্রস্তাব দেন। এছাড়াও তাঁকে তাঁর পছন্দমতো শাঁসাল দফতর দেওয়ার ব্যাপারেও আশ্বস্ত করেন। এমনকী ক্ষমতা বিভাজনের ফর্মুলা, যা নিয়ে সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমার দুজনেরই আপত্তি ছিল, তাতেও রাজি করাতে সমর্থ হন সোনিয়া। তৎক্ষণাৎ গত শনিবার থেকে পাকাতে থাকা জট এক নিমেষে খুলে যায়। শিবকুমারের আস্থাভাজন নেতারা জানান, ম্যাডামের কথাতেই তিনি ‘আত্মত্যাগ’ করতে রাজি হন। উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব মেনে নেন।
যদিও এই সিদ্ধান্তে খুশি নয় শিবকুমার শিবির এবং প্রকাশ্যেই অখুশির কথা সাফ জানান তাঁর সাংসদ দাদা ডিকে সুরেশ। তিনি বলেন, আমরা অখুশি হলেও রাজ্যের স্বার্থে দলীয় নেতৃত্বের ব্যবস্থা মেনে নিয়েছি। তাঁর কথায়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য এবং দলের স্বার্থে। আমার ভাই মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিল কিন্তু সে হতে পারেনি। আমরা এই সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি নই।